ধামইরহাটে গমের বাম্পার ফলন দাম পেয়ে কৃষক খুশি

মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল ২০২১ | ৫:২০ অপরাহ্ণ

ধামইরহাটে গমের বাম্পার ফলন দাম পেয়ে কৃষক খুশি
apps

নওগাঁর ধামইরহাটে এবার গমের ফলন ও দাম বেশি পেয়ে কৃষকের মুখে হাসি ফুটে ওঠেছে। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার উচ্চ ফলনশীল গম বীজ বপন করায় ফলন অনেক বেশি হয়েছে। বাজারে বর্তমানে প্রতি মণ এক হাজার দুইশত টাকা দরে কেনাবেচা চলছে। গমের ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় আগামীতে গম চাষ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি রবি মওসুমে ধামইরহাট উপজেলায় প্রায় এক হাজার ৫শত ৪৫ হেক্টর জমিতে কৃষক গম চাষ করেন। অধিকাংশ জমিতে কৃষক উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে পরিচিত বারি-৩০ ও ৩৩ রোপন করেছে। এছাড়া বারি-২৫,২৬,২৮,২৯,৩১,৩২ জাতের গম চাষ করা হয়। এবার আবহাওয়া গম চাষের অনুকূলে এবং কৃষি বিভাগের সঠিক তদারকি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করায় গম গাছের কোন রোগ বালাই ছিল না। বর্তমানে পুরোদমে গম মাড়াই কাজ চলছে। প্রতি একরে উচ্চ ফলনশীল রাবি-৩০ ও ৩৩ জাতের গম প্রায় ৪০ মণ হারে ফলন হয়েছে।

উপজেলার উমার ইউনিয়নের অন্তর্গত অমরপুর গ্রামের গম চাষী মো.আব্দুল গোফ্ফার বলেন,উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে তিনি এবার বারি-৩৩ জাতের গমের বীজ ও সার সহায়তা পেয়েছেন। গম বীজ সংরক্ষণের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে তাকে বস্তা, বস্তা সেলাই মেশিন, আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র দেয়া হয়েছে। গত বছরও তিনি গম উৎপাদন করে বীজ সংরক্ষণ করে প্রতি মণ দুই হাজার টাকা দরে স্থানীয় কৃষকদের কাছে বীজ বিক্রি করেন। তার গ্রুপে ১৫ জন কৃষক মিলে চার একর জমিতে গম চাষ করেছেন। এ জাতের গমের শীষ অনেক লম্বা এবং দানা মোটা। এছাড়া এ জাতের গম গাছে ব্লাস্ট রোগ হয়না এবং প্রচন্ড তাপ সহনীয় হওয়ায় অনেক সহজে চাষাবাদ করা যায়। একর প্রতি তার ফলন হয়েছে প্রায় ৪০ মণ। বাজারে বর্তমানে প্রতিমণ গম এক হাজার ২শত টাকা দরে কেনাবেচা চলছে। তবে তারা গম সংরক্ষণ করে আগামীগে বীজ হিসেবে বিক্রি করবেন। এতে স্থানীয়ভাবে কৃষকদের মাঝে উন্নতমানের গম বীজ প্রদান করা হবে।

গমের বাম্পার ফলন ও গম বীজ ব্লক পরিদর্শন করতে গত ২২ মার্চ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক কৃষিবিদ মো.শামসুল ওয়াদুদ এবং প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার মো.জাহাঙ্গীর আলম প্রামানিক উপজেলার অমরপুর গ্রামে আসেন। এছাড়া তিনি নমুনা গম কর্তন কর্মসূচী উদ্বোধন করেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা.শাপলা খাতুন বলেন, বর্তমানে ভূগর্স্থ পানির ব্যবহার কমাতে সরকার কৃষককে গম চাষে বেশি উৎসাহিত করছে। বোরো ধান চাষ করতে প্রচুর পানি সেচ দিতে হয়। পক্ষান্তরে মাত্র তিন থেকে চার বার পানি সেচ দিতে হয় গমে। বর্তমানে বারি-৩০ ও ৩৩ জাতের উচ্চ ফলনশীল গম বীজ আসায় কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে এ গম চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। একই জমিতে আমন ধান কাটার পর গম এরপর আকাশের পানি ব্যবহার করে বর্ষালী ইরি ধান চাষ সহজে করা যায়। এতে কৃষক এক জমিতে বছলে তিন ফলস ফলাতে পারছে। তাছাড়া গম চাষে উদ্ধুদ্বকরতে সরকারের পক্ষ থেকে উপজেলার ৬৪ জন কৃষককের মাঝে গম বীজ ও বীজ সার সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া ৮টি কৃষক গ্রুপ রয়েছে। প্রতি গ্রুপে ১৫ জন কৃষককে উন্নত মানের গম বীজ সংরক্ষণের জন্য প্রশিক্ষণ, গম বীজ ও বীজ সার সহায়তা, বীজ রাখার বস্তা, বস্তা সেলাইয়ের জন্য মেশিন, আর্দ্রতা মাপার যন্ত্র প্রদান করা হয়েছে। যাতে কৃষকরা এসব বীজ সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে বীজ হিসেবে বিক্রি করতে পারেন। এ প্রকল্পে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। বর্তমানে এলাকার কৃষকগণ স্থানীয়ভাবে গম বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করছেন। আগামীতে এ এলাকায় বিপুল পরিমাণ জমিতে গম চাষ হবে।

Development by: webnewsdesign.com