দেশের বাজারে আবার রডের দাম বাড়তে শুরু করেছে

সোমবার, ৩০ মে ২০২২ | ১১:৪৭ পূর্বাহ্ণ

দেশের বাজারে আবার রডের দাম বাড়তে শুরু করেছে
apps

দেশের বাজারে আবার রডের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ডের প্রতি টন রডে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এখন বাজারে ভালো ব্র্যান্ডের প্রতি টন রড (৭২.৫ গ্রেডের) বিক্রি হচ্ছে ৮৭ হাজার ৫০০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়। একই গ্রেডের নন-ব্র্যান্ডের প্রতি টন রড ৮৩ হাজার টাকা থেকে ৮৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম প্রধান এই উপকরণটির দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে রডের কাঁচামাল স্ক্র্যাপের দাম বেড়েছে অনেক। একই সঙ্গে ডলারের দামও বেড়েছে। এ ছাড়া ঘাটতিও দেখা দিয়েছে কাঁচামালের। কাঁচামালের ঘাটতির কারণে কমে গেছে উৎপাদনও। যার কারণে কম্পানিগুলোর কাছে অর্ডার দিয়েও চাহিদামতো রড পাচ্ছেন না বলেও জানান ব্যবসায়ীরা। তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে টনে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় রডের বাজার আবারও স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

গতকাল রবিবার রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিএসআরএম ব্র্যান্ডের প্রতি টন রড ৮৯ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেএসআরএম ব্র্যান্ডের রড ৮৮ হাজার থেকে ৮৯ হাজার টাকায়, আরএসএম ব্র্যান্ডের রড প্রতি টন ৮৭ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জিপিএইচ ইস্পাত ব্র্যান্ডের প্রতি টন রড ৮৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

নন-ব্র্যান্ডের রডের মধ্যে এসএস, জেএসআরএম, জেডএসআরএম ও এমএসডাব্লিউর কম্পানির প্রতি টন রড বিক্রি হচ্ছে ৮৩ হাজার টাকা থেকে ৮৪ হাজার টাকায়। গতকাল রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরেও দেখা গেছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি টন রডে ৫০০ টাকা থেকে এক হাজার ৭২৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত সপ্তাহে প্রতি টন রডের দাম ছিল ৮৫ হাজার টাকা থেকে ৮৮ হাজার ৫০০ টাকা। দাম বেড়ে গতকাল প্রতি টন রড হয়েছে ৮৫ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৯০ হাজার ২৫০ টাকা।

জিপিএইচ ইস্পাত কম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) আলমাস শিমুল বলেন, ‘রডের কাঁচামালের দাম বাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন কেমিক্যালের দামও প্রায় দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গেছে। জাহাজভাড়া আগের চেয়ে দুই-তিন গুণ বেড়েছে। জাহাজ ডেমারেজ আগে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার ডলার ছিল, সেটি এখন ৪০ থেকে ৪৫ হাজার ডলার হয়েছে। জ্বালানি তেলের দামও বেড়েছে। বন্দর থেকে কারখানায় মালামাল আনার পরিবহন খরচও অনেক বেড়েছে। এভাবে প্রতিটিই ক্ষেত্রেই খরচ বেড়ে যাওয়ায় রডের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারে। ’

কাঁচামালের ঘাটতির বিষয়ে জানতে চাইলে আলমাস শিমুল বলেন, ‘বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম যে হারে বেড়েছে, তা কেউ কল্পনাই করেনি। রড উৎপাদনকারীরা ভেবেছিল হয় তো সামনে এই দাম থাকবে না। যেকোনো সময় কাঁচামালের দাম কমতে পারে। যার কারণে ক্ষতির ভয়ে মজুদ কমিয়ে দিয়েছিল। যারা মজুদ কমিয়ে ছিল তারা এখন কাঁচামাল সংকটে আছে বলে আমার কাছে মনে হয়। ’

রাজধানীর ভাটারা থানার প্রগতি সরণি মেসার্স এমদাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক এমদাদুল হক বলেন, ‘সব ব্র্যান্ডের রডের দাম আবার নতুন করে বেড়েছে। ব্র্যান্ডের রড প্রতি টনে দুই হাজার টাকা এবং নন-ব্র্যান্ডের রড প্রতি টনে দুই-তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বাড়ায় আগের তুলনায় রডের বিক্রিও কমে গেছে। ’

এই ব্যবসায়ী আরো বলেন, ‘রড উৎপাদনের কাঁচামাল সংকটের কারণে বাজারে এখন রডের সংকট দেখা দিয়েছে। আগে রডের অর্ডার দিলে এক দিন পরেই চলে আসত, এখন অর্ডার দিলে কম্পানিভেদে পাঁচ থেকে সাত দিনেও রড দিচ্ছে না অনেক কম্পানি।

ঈদের পর সিমেন্টের দাম না বাড়লেও দু-এক দিনের মধ্যে সিমেন্টের বস্তাপ্রতি আরো ২০ টাকা করে বাড়বে বলেও জানান ব্যবসায়ীরা। গতকাল খুচরায় প্রতি বস্তা সুপারক্রিট সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে হয় ৫০০ টাকা, বসুন্ধরা সিমেন্ট ৫০০ টাকা, স্ক্যান ৫৪০ টাকা, মীর সিমেন্ট ৪৮০ টাকা, ফ্রেশ সিমেন্ট ৪৯০ টাকা, প্রিমিয়ার সিমেন্ট ৪৮০ টাকা, শাহ স্পেশাল ৫১০ টাকা ও শাহ সিমেন্ট ৪৮০ টাকায় বিক্রি হয়।

কুড়িল এলাকার মেসার্স হেলমী এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মো. শামীম হাওলাদার  বলেন, ‘প্রায় দুই মাস রডের বাজার স্থির থাকার পর নতুন করে আবার দাম বাড়িয়েছে কম্পানিগুলো। ব্র্যান্ডের রডের চেয়ে নন-ব্র্যান্ডের রড প্রতি টনে প্রায় ছয় থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত কম থাকায় এখন ক্রেতারা নন-ব্র্যান্ডের রড বেশি কিনছেন। ’

তিনি বলেন, সিমেন্টের দাম দু-এক দিনের মধ্যেই বস্তাপ্রতি আরো ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়বে। দাম বাড়ানোর বিষয়টি কম্পানিগুলো আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন।

রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, ইস্পাতের পাশাপাশি ইস্পাত তৈরির কাঁচামাল বিলেট, প্লেট ও স্ক্র্যাপের দামও টনে দুই থেকে চার হাজার টাকা বেড়েছে। বর্তমানে বাজারে প্রতি টন স্ক্র্যাপ ৫৮ হাজার টাকা, প্লেট ৬৭ হাজার টাকা এবং বিলেট ৭২ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে স্ক্র্যাপ ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা, প্লেট ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা এবং বিলেট ৭১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।

Development by: webnewsdesign.com