দেশের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ চাহিদা অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়

বুধবার, ০৫ অক্টোবর ২০২২ | ৭:২০ অপরাহ্ণ

দেশের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ চাহিদা অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়
apps

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেশে-বিদেশে বরাবর প্রশংসিত হয়ে আসছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকার অনেক বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলেছে। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়ছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো দেশের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ চাহিদা অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় দিয়ে মেটানো সম্ভব নয়। ফলে ধীরে ধীরে সরকার নানা খাত থেকে বৈদেশিক ঋণ বাড়াচ্ছে। এতে অর্থনীতি ক্রমেই চাপের মধ্যে পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণের খাতে শুধু সুদ পরিশোধ করতে হবে ২.৭৮ বিলিয়ন ডলার। ৭ বছর আগের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করলে মোট বৈদেশিক ঋণের দায় বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩৩ শতাংশ। মাথাপিছু দায় বেড়েছে ১১৮ শতাংশ। অর্থাৎ ৭ বছর আগে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ ছিল ২৫৭ ডলার, এখন তা দাঁড়িয়েছে ৫৬১ ডলারে। অর্থনীতির হিসাবে আমাদের বৈদেশিক ঋণ সমকক্ষ বিভিন্ন দেশের তুলনায় এখনো কম। সমস্যা হলো বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইডিবি প্রভৃতি সংস্থা থেকে সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পাওয়া গেলেও দ্বিপাক্ষিক ঋণের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা থাকে না। এগুলো হয় স্বল্পমেয়াদি এবং তাতে সুদের হারও বেশি থাকে।

তা ছাড়া দ্বিপক্ষীয় ঋণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাবের কথা শোনা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে দ্বিপাক্ষিক বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে। বিদেশি ঋণ পরিস্থিতি অর্থনীতির মৌলিক সূচকগুলোতেও ঝুঁকিপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। জিডিপির তুলনায় বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ গত ৭ বছরে ৫ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে জাতীয় আয়ের অনুপাতে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৫ শতাংশ। আবার ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট ঋণের ৭৩.৭ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ থাকলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে তা নেমে এসেছে ৪৩.৬ শতাংশে। অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে দেখা যাচ্ছে পরিস্থিতি দিন দিন আমাদের প্রতিকূলে যাচ্ছে।

বছর খানেক ধরে অর্থনীতিবিদরা বারবার বলে আসছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি শ্রীলংকার মতো না হলেও সে দেশের পরিণতি থেকে শিক্ষা নেওয়া জরুরি। কেননা শ্রীলংকার আর্থিক সংকটের মূলে ছিল বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করে নানা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন। তাদের অবশ্য কৃষি খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতিও মন্দার মধ্যে পড়েছিল। আমরা মনে করি না বাংলাদেশের অবস্থা শ্রীলংকার মতো হবে। তবে অর্থনীবিদদের দেওয়া সতর্কবাণীর প্রতি সরকারের মনোযোগ থাকা প্রয়োজন।

এখনো দেশে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের হার একইভাবে বজায় রয়েছে। এই প্রবণতা আরও কিছুদিন চললে একদিকে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বে, অন্যদিকে বাজেটে বৈদেশিক ঋণের সুদ-আসল পরিশোধের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে। তাতে কেবল উন্নয়ন নয়, সরকারের রাজস্ব খাতেও ব্যয় সংকোচনের প্রয়োজন দেখা দেবে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি ও জনজীবনে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হবে। এ রকম পরিস্থিতি দেশের জন্য কাম্য নয়। আমরা মনে করি সাময়িকভাবে হলেও মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে রাস টানা দরকার, বরং মনোযোগ দেওয়া দরকার কৃষি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি রপ্তানি ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। এই জটিল পরিস্থিতিতে নেতৃত্বের কাছ থেকে আমরা প্রাজ্ঞ, দূরদর্শী সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করি।

Development by: webnewsdesign.com