দীর্ঘ দেড় বছরেরও বেশি সময় থেকে বন্ধ রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাস। সীমিত আকারে সকল বিভাগ-ইন্সটিটিউটের অফিস-সেমিনার খুললেও, খুলেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যাফেটিরিয়া। এতে কর্মহীন হয়ে দুশ্চিন্তা ও অর্থাভাবে দিন পার করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটিরিয়ার সাথে যুক্ত কর্মচারীরা।
করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ হয়ে যায় জবির একমাত্র ক্যাফেটিরিয়া। ১৬ মাস পার হয়ে গেলেও খুলেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটিরিয়া। হিসাব, রান্না, খাবার পরিবেশনসহ ক্যাফেটিরিয়ার সাথে যুক্ত ছিলেন ২২ জন কর্মচারী। কর্মহীন হয়ে অনেকেই এখন তার পরিবারের কাছে বোঝা। ২-১ জন বিভিন্ন কাজে যোগ দিলেও বেশিরভাগ কর্মহীন হয়ে দুশ্চিন্তা ও অর্থাভাবে দিন পার করছেন।
পরীক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হতে পারে এ আশায় ঢাকা ফিরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেখা মিলে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে রয়েছে শিক্ষার্থীদের টিএসসি। টিএসসিতে রয়েছে খাবারের ১০-১২ টি দোকান। সকাল থেকে এসব দোকানে খাবার খেতে ভীড় করেন শিক্ষার্থীরা। স্বাস্থবিধি ও সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করে খাবার বিক্রি করছেন বেশিরভাগ দোকান।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটিরিয়াতে রয়েছে ১৩ টি টেবিল। প্রতিটি টেবিলের সাথে ৬ টি ও ৪ টি করে চেয়ার যুক্ত রয়েছে। ৭০ জন মানুষ স্বাভাবিক সময়ে খেতে পারলেও এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে খেতে পারবেন ৩৫ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থী।
মুজাহিদ নামের বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের মেসে খাবার সমস্যা অনেক বেশি। ক্যাফেটিরিয়া খোলা থাকলে এখানে এসে খেতে পারতাম। টিএসসিতে খাবার ভাল না এবং উপচে পড়া ভীড় থাকে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্যাফেটিরিয়া খোলে দেয়া প্রয়োজন।
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আদিত্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই ঢাকা রয়েছেন। পরীক্ষার খবর শুনে অনেকেই ঢাকা আসছেন। সারাদিন অনেকেই ক্যাম্পাসে থাকেন। ক্যান্টিন বন্ধ থাকায় আমরা দুপুরে বাহিরে খাওয়া দাওয়া করি। যেখানে ক্যান্টিন খোলা থাকলে আমাদের খরচ হয় ২৫-৩৫ টাকা। সেখানে বাহিরের হোটেলে বিল হয় ৫০-৬০ টাকা৷ তারপর ও মেলে না স্বাস্থ্যসম্মত খাবার।
নাম না প্রকাশের শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটিরিয়ার একজন কর্মচারী জানান, আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। ইনকাম নেই, অন্য কোন কাজ পাচ্ছিনা। সবই তো চলতাছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্যান্টিন খুলে দিলে আমরা খেয়ে-পড়ে বাঁঁচি। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ক্যাফেটেরিয়ার অন্য এক কর্মচারীকে ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, করোনার শুরু থেকেই ক্যান্টিন বন্ধ। প্রথম প্রথম মালিক বেতন দিলেও কয়েক মাস পর দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। লকডাউনে আটকে বাড়িও যেতে পারি নি। গ্রামে পরিবার পরিজন অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছে। মধ্যে ধার দেনা করে মালিক কয়েক মাসের বেতন দিলেও পরে নিজেই
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটিরিয়ার পরিচালক মাসুদ নিউজবাংলাকে জানায়, শুনছি বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে যদি আমাদের ক্যান্টিন সীমিত আকারে খুলে দেওয়া হয় তাহলে আমাদের জন্য খুবই উপকার হবে।
এ ব্যাপারে ক্যাফেটেরিয়া দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা ছাত্রকল্যাণের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন নিয়োগ পেয়েছি। নিয়োগ পাওয়ার পর পরই আমি নিয়মিত ক্যাফেটেরিয়ার বিষয়টি তদারকি করছি। এর সামনে গাড়ি পার্ক করতে নিষেধ করেছি। ভেতরে কি কি সংস্কার করা প্রয়োজন তার একটি তালিকা করেছি। শিক্ষকদের জন্য আলাদা করে বসার স্থান সেটিও আরো সুন্দর করার চিন্তাভাবনা করছি। দুই একজন শিক্ষক যারাই আসবে এখানে তারা যেনো খাবারের ভালো পরিবেশ পায়।
কর্মচারীদের দুরবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ক্যাফেটিরিয়ার পরিচালক মাসুদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তাদের দাবি যেনো ক্যাফেটেরিয়া খুলে দেয়া হয়। আর খুলে না দেয়া হলে কবে খোলা হবে তা জানতে চেয়েছে। আর দ্রুত খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে। আমি ওদের সমস্যা গুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে বসে একটা মিমাংসা করে দিবো বলে আশ্বাস দিয়েছি।
ক্যাফেটিরিয়া খোলার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খুললে ক্যাফেটিরিয়া খুলবে। তারা আমাদের নিয়মিত কর্মচারী নয়, তাই তারা তাদের কর্মচারীদের বিষয়টি তারা দেখবে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাশ ভবনের নীচতালায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কারকৃত ক্যাফেটেরিয়ার উদ্বোধন করেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।
Development by: webnewsdesign.com