দুর্নীতির মামলায় রাজশাহীর অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ | ৭:৫৬ অপরাহ্ণ

দুর্নীতির মামলায় রাজশাহীর অগ্রণী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে
apps

দুর্নীতির মামলায় রাজশাহীতে অগ্রণী ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ মীর শফিকুল আলম তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

এই কর্মকর্তার নাম আহসান হাবীব নয়ন। তিনি অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী ডিজিএমের কার্যালয়ে প্রিন্সিপ্যাল অফিসার পদে কর্মরত। তার বাড়ি রাজশাহী মহানগরীর বহরমপুর ব্যাংক কলোনি। বাবার নাম হারেজ উদ্দিন। রাজশাহীর গোদাগাড়ী শাখার ব্যবস্থাপক থাকাকালে তার বিরুদ্ধে গ্রাহকের ছয় লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করা হয়। এই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আল-আমিন মামলাটির বাদী। বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী শাখা এবং অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের তদন্তে গ্রাহকের টাকা তুলে নেয়ার বিষয়টি আগেই ধরা পড়ে। পরে দুদক এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে। সত্যতা পাওয়ায় ব্যাংক কর্মকর্তা নয়নের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়, সাবের আলী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স সাবের আলী ট্রেডার্স’ এর অগ্রণী ব্যাংকে অনুকূলে একটি ১০ লাখ টাকার এসএমই সিসি (হাইফো) ঋণ সুবিধা ভোগ করছেন। তার হিসাব নম্বর-০২০০০০৯৫৭৭৫৯৪। সাবের আলী ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট নিজে ব্যাংকে গিয়ে ১০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়ে টাকা তোলেন। সেদিন তিনি তার ব্যাংক হিসাবের স্থিতি জানতে চান। ব্যাংক থেকে তার ঋণ হিসাবের স্থিতি জানানো হয়। তখন তিনি ছয় লাখ টাকার গড়মিল দেখতে পান। এরপর তিনি ব্যাংকের ঋণ হিসাব বিবরণী যাচাই করে দেখেন, ২০১৯ সালের ১৬ জুন তার ৪৩০৮১৭২ নম্বরের একটি চেকের মাধ্যমে ছয় লাখ টাকা তোলা হয়েছে।

দুদক অনুসন্ধান করে দেখেছে, ছয় লাখ টাকা উত্তোলনের এক সপ্তাহ আগে তৎকালীন ব্যবস্থাপক নয়ন গ্রাহক সাবের আলীকে অবহিত করেন যে, তার ঋণ হিসাবটি শূন্য করার জন্য একটি ফাঁকা চেক প্রয়োজন। এ জন্য নয়ন ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরী আফজাল হোসেনকে ১৬ জুন সাবের আলীর পাড়িতে পাঠান। সরল বিশ্বাসে ওই চেকটি দিয়েছিলেন। নিরাপত্তা প্রহরী চেকটি এনে শাখা ব্যবস্থাপক নয়নকে দেন।

এরপর নয়ন চেকে নিজ হাতে ছয় লাখ টাকার পরিমাণ লেখেন। ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার আবু বকর সিদ্দিক চেকের প্রথম ক্যানসেলেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকলেও তাকে এড়িয়ে নয়ন নিজেই চেক ক্যানসেলেশন করে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কাউন্টারে গিয়ে ক্যাশ কর্মকর্তা আকতারুজ্জামানকে চেকটি দিয়ে টাকা তার কক্ষে আনতে বলেন। আকতারুজ্জামান চেকটি সিডি ইনচার্জ আবু বকর সিদ্দিকের হাতে দেন। এ সময় আবু বকর সিদ্দিক চেকটি কম্পিউটারে পোস্টিং করে ক্যানসেলেশন করে আবার আকতারুজ্জামানকে দেন। এরপর আকতারুজ্জামান চেকটি ক্যাশ করে ছয় লাখ টাকা ব্যাংকের তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক নয়নের কক্ষে গিয়ে তাকে বুঝিয়ে দেন। এভাবে নয়ন গ্রাহকের টাকা আত্মসাত করেন।

পরবর্তীতে অগ্রণী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে তার অপরাধ প্রমাণিত হলে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি তিনটি জমা ভাউচারে সাবের আলীর হিসাবে ছয় লাখ টাকা ফেরত দেন। ভাউচারগুলো হলো- ০৯৩৬৫১৪, ০৯৩৬৫১৫ ও ০৯৩৬৫১৬। এই টাকা ফেরত দিয়ে তিনি নিজেই তার অপরাধকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বলে দুদক মনে করে। এ কারণে তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, সোমবার আসামি নয়ন আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন প্রার্থনা করেন। এ সময় আদালত তার আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নিন্দেশ দেন। মামলাটির এখনও তদন্ত চলছে। দ্রুতই আদালতে এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।

দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়া/এসআরসি-২২

Development by: webnewsdesign.com