দুর্গাপুরে আ.লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ১০

বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩ | ১:৩৯ অপরাহ্ণ

দুর্গাপুরে আ.লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ১০
দুর্গাপুরে আ.লীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, পুলিশের লাঠিচার্জ, আহত ১০
apps

রাজশাহী জেলার দুর্গাপুরে পৌর আওয়ামী লীগের কমিটিকে কেন্দ্র করে দুইগ্রুপে সংঘর্ষে ১০জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে উপজেলা সদরের মেডিকেল মোড় এলাকায় সোনালী ব্যাংকের সামনে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলে। খবর পেয়ে দুর্গাপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে লাঠি চার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকলেও পুনরায় সংঘর্ষ এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এ ঘটনায় দুর্গাপুরে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে।
আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

গুরুতর আহতরা হলেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আমিনুল হক টুলু, টুলুর ভাতিজা গোলাম রাব্বানী, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের মন্ডল ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু হানিফ। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা ও স্থগিত হওয়া কমিটি পুণর্বহাল করার জের ধরে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা: মনসুর রহমান এবং এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারার সমর্থকদের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, পৌর আওয়াামী লীগের স্থগিতাদেশ দেয়া কমিটি পুনর্বহাল করায় স্থানীয় সাংসদ ডা. মনসুর রহমানের অনুসারীরা কমিটি বাতিলের দাবিতে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে পৌরসভার সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপজেলা মোড়ের দিকে যেতে থাকে। মিছিলটি মেডিকেল মোড়ের কাছাকাছি সোনালী ব্যাংকের সামনে যেতেই সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারার সমর্থকরা মিছিলে হামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনার পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিংগা বাজারে সাংসদ ডা: মনসুর রহমানের সমর্থকরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ফিরোজ ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরিফের মাছের আড়ৎ ভাংচুর করেছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ৯ মার্চ দুর্গাপুর পৌর আওয়াামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে আজাহার আলীকে সভাপতি ও শরিফুজ্জামান শরিফকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শ্রী অনিল কুমার সরকার ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ দারা।

ঘোষিত কমিটির দু’জন নেতাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামের বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল মজিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন এমন অভিযোগ তুলে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ সহ জেলার নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগ নেতা সুকুমার চন্দ্র কবিরাজ ।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনের নির্দেশে ২০২২ সালের ১২ মার্চ ঘোষিত কমিটি স্থগিত ঘোষণা করেন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার। স্থগিত হওয়া ওই কমিটি পূর্নবহাল করে পুণরায় গত ২৭ মার্চ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক প্রদ্যুৎ কুমার। কমিটি পুনর্বহান করার পর থেকেই স্থানীয় সাংসদ প্রফেসর ডা: মনসুর রহমান ও সাবেক সাংসদ আব্দুল ওয়াদুদ দারার সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়।

উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের মন্ডল অভিযোগ করে বলেন, অগঠণতান্ত্রিক ভাবে পৌর আওয়ামী লীগের গঠিত কমিটি স্থগিত করা হলেও প্রায় এক বছর পর পুণরায় ওই কমিটি বহাল করার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সোনালী ব্যাংকের সামনে গেলে সাবেক সাংসদ দারার সমর্থকরা হামলা চালায় এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এতে প্রায় ১০ জন আহত হয়েছে। হামলাকারীদের মধ্যে অধিকাংশরা বিএনপির সমর্থক বলেও দাবি করেন আব্দুল কাদের মন্ডল।

পৌর আওয়ামী লীগের সদ্য পুনর্বহাল করা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরিফুজ্জামান শরিফ বলেন, ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ছিল। সেই কোন্দলের জের ধরে এই ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। কে বা কারা ঘটিয়েছে সেটিও আমার জানা নেই। পৌর আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী এই হামলার ঘটনার সাথে জড়িত নয় বলেও দাবি করেন শরীফ।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ফিরোজ জানান, ওই সংঘর্ষের জের ধরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর মাছের আড়ৎ ভাংচুর করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলা হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবেন।

এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জানান, আওয়ামী লীগের দুইগ্রæপের সংঘর্ষের ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়েছে। পুণরায় সংঘর্ষের ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানান ওসি।

Development by: webnewsdesign.com