হাওরাঞ্চলের যোগাযোগ বিছিন্ন প্রত্যন্ত জনপদ সুনামগঞ্জের ভাটির শাল্লা উপজেলাবাসীর জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র দিরাই-শাল্লা সড়ক বাস্তবায়নের স্বপ্ন এই সরকারের শাসনামলে পূরণ হবে কি? হাওরের তলানির উপজেলা শাল্লার প্রায় দুই লাখ মানুষ গেল প্রায় দশ বছর ধরেই এই সড়ক দিয়ে চলাচলের দিন গুনছেন। এই সড়কের প্রায় ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা এখন একনেক’এ অনুমোদনের অপেক্ষায়।
হাওরের তলানির উপজেলা শাল্লার প্রায় দুই লাখ মানুষের স্বপ্ন ছিল সারাদেশের সঙ্গে সড়ক পথে সংযুক্ত হবেন তারা। ২০১১ সালে সড়কের কাজও শুরু হয়েছিল। ২০১৭ সালে শেষ হবার কথা ছিল। অথচ নির্ধারিত সময়সীমার পর চার বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত এ সড়কটির নির্মাণকাজ এখনও শেষ হয় নি। এর আগে একবার সড়কের কিছু কাজ হয়েছিল। কিন্তু যান ও জনচলাচলের উপযুক্ত না হওয়ায় এই সড়ক মানুষের কোন কাজে আসে নি। সড়কের অনেক অংশ হাওরের আফালের ঢেউয়ে বিলীন হয়ে গেছে।
২০১০ সালে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে জনসভায় শাল্লাবাসীর বহুদিনের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে এই সড়ক নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০১১ সালে সড়কের কাজ শুরু হলেও কাজে অনিয়ম এবং কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় ওই সময়ে সরকারের প্রায় ৯২ কোটি টাকা ভেস্তে যায়।
গেল দুই বছর ধরে কয়েক দফায় সরেজমিনে যাচাই করে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উর্ধ্বতন প্রকৌশলীরা এই সড়কের প্রকল্প প্রস্তাবনা সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠান। পুরোনো অংশ অর্থাৎ আগের মতোই টেলিফোন বাজার ও আনন্দপুর হয়ে ৫৯৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকার প্রকল্প তৈরি করে গেল অক্টোবর মাসে মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদুল ইসলাম জানিয়েছেন, গেল বছরের ১০ নভেম্বর পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রজেক্ট ইম্পি্মেন্টস কমিটির বৈঠকে এই প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এখন প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে, ওখানে অনুমোদন হলেই দরপত্র প্রক্রিয়া শুরু হবে।
এই প্রকৌশলী জানান, ২২.৭৩ কিলোমিটার সড়কের ৫৯৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এরমধ্যে যুক্ত করা হয়েছে মদনপুর-দিরাই-শাল্লা সড়কের মদনপুর-দিরাই অংশের ৩ টি বেইলী সেতু ভেঙে পাকা করণের কাজ। এছাড়া সড়কের নোয়াখালী, পাথারিয়া এবং দিরাই বাসস্টেশন এলাকায় আরসিসি ঢালাই করার প্রস্তাব করা হয়েছে প্রকল্পে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের মদনপুর পয়েন্ট থেকে শাল্লা উপজেলা সদরের ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজার পর্যন্ত যুক্ত হবে এই সড়ক।
ঘুঙ্গিয়ারগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু বললেন, উন্নয়নের স্বপ্নযুগ চলছে, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী অনুন্নত-পশ্চাৎপদ জনপদের উন্নয়নই বেশি করছেন। শাল্লার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন যোগাযোগ সড়ক। আমরা আশা করছি দ্রুত একনেক সভায় এটি অনুমোদন হবে এবং এই বছর থেকেই এ সড়কের কাজ শুরু হবে।
শাল্লা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অবনী মোহন দাস বললেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান দিরাই-শাল্লার এই সড়ক নির্মাণের বিষয়ে খুবই আন্তরিক। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের গাফিলতির জন্যই এটি বিলম্ব হয়েছে। আমরা আশা করছি দ্রুতই এই প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদিত হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা বললেন, এই সড়ক নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানিয়েছি, কেন বিলম্ব হচ্ছে জানি না, এবার আশা করছি দ্রুতই একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হবে।
Development by: webnewsdesign.com