টাকা উপার্জন করতে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে বিপাকে পড়েছে ছেলেটির পরিবার। প্রবাসী সন্তানের লাশের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে গার্মেন্টস কর্মী মা রেশমী বেগম ও তার পরিবার।
প্রবাসীর জীবন যেনো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল অসীমের (১৭) দালালের বাড়ী একই এলাকার হওয়ার কারণে দালালের সাথে অসীমের যোগাযোগ ছিল। কখন সে কাজ করছে কোন কোম্পানিতে কি অবস্থা সবি খোঁজখবর নিত কিন্তু কোন সাহায্য সহযোগীতা করতো না।
কিন্তু ছোট্র ওয়াসিমের পক্ষে ভারী ওজনের কাজগুলো ছিল কঠিনতম। অসীম মরার ঠিক দুই দিন আগে সে আবার দালালের (ওবায়দুল) কাছে ফিরে আসে। ঠিক সেই সময় দালাল ওবায়দুল নতুন কাজের আশ্বাস দেয় এবং সেই সাথে তার নিকটস্থ পুটুমিয়ার রুমে তাকে থাকার জায়গা করে দেয়।
কিন্তু আসিম তখন বলেন, আমি এতো ভারী কাজ করবো না দেশে ফিরে যাব। এত কষ্টের কাজ জানলে আমি আর বিদেশে আসতাম না। এই কথাগুলো অসীম তার মায়ের সঙ্গে শেয়ার করেছিলেন ফোনে। ছেলের এতো কষ্টের কাজের কথা শুনে অসীমের মা বলেছিল বাবা কাজের দরকার নেই, টাকার দরকার নেই, তুমি আমার বুকের ধন (সন্তান) বুকে ফিরে আসো। এই কথা গুলো অসীম মরে যাওয়ার আগের দিন তার মায়ের সাথে বলে।
গত ১৮ মে সকালে অসীম মায়ের সাথে কথা বললেও দুপুরের দিকে অসীমের মাকে দালাল ফোন করে জানায় তার সন্তান গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
দালাল ওবায়দুল একই উপজেলার ধাওয়াগীর মিল্কিপুর গ্রামের মৃত হোসেন শেখের পুত্র। সে নিজেও মালয়েশিয়ায় থাকে।
জীবন ও জীবীকার আশায় ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ধাওয়াগীর মূখরজান গ্রামের রেশমী বেগম ও জসীম তাদের বড় সন্তান অসীমকে (১৭)কে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার চুক্তিতে মালয়েশিয়া পাঠায় দালাল ওবায়দুলের মাধ্যমে।
হতভাগা অসীম মালয়েশিয়া পৌছার পর বুঝতে পারে তাকে গলাকাটা পাসপোর্টে অন্যের নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে মালয়েশিয়ায় নিয়ে আসা হয়েছে।
অসীম বিষয়টি বাড়িতে জানালে দালাল ওবায়দুল কাগজপত্র ঠিক করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং কিছু দিন পর কাগজপত্র ঠিক করে দেওয়ার কথা বলে নগদ ৪৫ হাজার টাকা নেয়। দীর্ঘ ১৮ মাস পেড়িয়ে গেলেও সে কাগজপত্র এবং পাসপোর্ট কিছুই অসীমকে দেয়না।
সন্তান হারা অসীমের মা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কগজপত্রের জন্য দালাল ওবায়দুল এর সাথে অসীম ও আমাদের বাকবিতন্ডা চলে আসছিল। সেটি আমার সন্তান মারা যাওয়ার পূর্বে সপ্তাহ খানেক ধরে চরম পর্যায়ে পৌছিয়েছিলো।
তিনি আরও বলেন, অসীম কাগজপত্র নেওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়া দালাল ওবায়দুলের মেসে যায় ও প্রবাসী পুটুর রুমে ভাড়া উঠে। মারা যাওয়ার একদিনে আগে অসীম আমাকে জানায় ওবায়দুলের সাথে ঝগড়া হচ্ছে।
কিন্ত পরের দিন ১৮ মে সকালেও মায়ের সাথে কথা বললেও দুপুরের দিকে অসীমের মাকে ফোন করে জানানো হয় তার সন্তান পুটুর রুমে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। লাশ দেশে আনার কথা বললে ওবায়দুল বলে ৪১০০০ হাজার টাকা লাগবে। টাকা দিলেও লাশ পাঠানোর জন্য বিভিন্ন তারিখ দিতে থাকে ওবায়দুল। এভাবে মাস দুয়েক কেটে গেলে দালাল জানায় লাশ দেশে পাঠানো যাবেনা, লাশের করোনা হয়েছে। এবং লাশ পাঠানোর জন্য নেওয়া টাকা ফেরত দেয়।
ধাওয়াগীর মূখরজান গ্রামের প্রতিবেশি মাকসুদা বেগম জানান, অসীমকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। কাগজপত্র নিয়ে ঝগড়াঝাটির কারনে তাকে হত্যা করা হতে পারে।
অন্য প্রতিবেশি লোকমান শেখ বলেন, আমি যতদূর জানি ওবায়দুল একজন প্রতারক এবং অবৈধভাবে বিদেশে লোক নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিপদে ফেলায় এবং দেশে ওর নামে মামলা রয়েছে।
দালাল ওবায়দুলের বোন আঙ্গুর বেগম জানান, কাগজ পত্র ঠিক করে দেওয়ার জন্য আমার ভাই টাকা নিয়েছিলো এই বিষয়টা আমি জানি, পরে কি হয়েছে তা জানি না। হত্যার বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ওটা মালয়েশিয়ার বিষয় আমি কিভাবে বলবো।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে পুটুর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি কিছু জানিনা, আপনারা ওবায়দুল এর সাথে কথা বলুন।
মুঠোফোনে ওবায়দুলকে প্রশ্ন করলে সে বিভিন্ন ধরনের মনগড়া গল্প বলে, সে কোন প্রশ্নের জবাব ও কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এমনকি মালয়েশিয়ার পুলিশের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট চাইলে তিনি আমতা আমতা করে বলেন ফোন নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না বলে ফোনটি কেটে দেন।
শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ সাবু বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমি লাশ দেশে আনার জন্য অসীমের পরিবারকে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি।
Development by: webnewsdesign.com