দলবদল এখনো বাকি যেসব তারকাদের

বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই ২০২২ | ৩:৪৭ অপরাহ্ণ

দলবদল এখনো বাকি যেসব তারকাদের
apps

গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারের দলবদল বাজার বেশি জমে উঠেছে বলেই বিশ্বাস অনেকের। গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বাজারে এরই মধ্যে হয়েছে সাড়া জাগানো কিছু চুক্তি। যেমন বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে ম্যানচেস্টার সিটিতে ভিড়েছেন তরুণ প্রজন্মের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার আর্লিং হলান্ড। গত মৌসুমে লিওনেল মেসিকে হারানো বার্সেলোনা এবার হামলা দিয়েছে বায়ার্নের ঘরে। নিয়ে এসেছে রবার্ট লেভানদোভস্কিকে। এমন কিছু দলবদলের সম্ভাবনা আছে সামনের দিনেও।

ইউরোপিয়ান লিগের দলবদলের দরজাটা বন্ধ হবে আগামী ১ সেপ্টেম্বর। এর আগেই অবশ্য শুরু হয়ে যাবে যাবে মাঠের খেলা। তাই প্রতিটি দলের লক্ষ্য থাকে লিগের খেলা শুরু হয়ে যাওয়ার আগেই দল সাজিয়ে নেওয়ার। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের সূচি অনুযায়ী লিগের ম্যাচ মাঠে গড়াবে আগস্টের প্রথম দিকেই।

তবে দলবদলের দরজা বন্ধ হওয়ার আগে গুঞ্জন অনুযায়ী দলবদলের আরও বেশ কিছু বড়সড় খবর আসতে পারে। এই তালিকায় আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংদের মতো তারকারা।পহেলা সেপ্টেম্বর দলবদলের দরজা বন্ধ হওয়ার আগে দল বদলাতে পারেন এমন কয়েকজন বড় তারকার একটা তালিকা করেছে ফুটবল বিষয়ক বিখ্যাত সংবাদমাধ্য্যম গোল। দেখে আসা যাক সেই তালিকায় থাকা নামগুলো।

১. ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো

রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার পর থেকে কোথাও থিতু হতে পারছেন না পর্তুগিজ মহাতারকা। ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেই পাড়ি দিলেন সিরি ‘আ’র শীর্ষদল য়্যুভেন্তাসে। প্রথম দুই মৌসুমে লিগ জিতলেন। পারফর্মও করলেন। তবে রিয়াল মাদ্রিদের সে সংহারক মূর্তিতে আর ফিরতে পারেননি রোনালদো। গত মৌসুমে এক যুগের বেশি সময় পর ফিরলেন ইংলিশ জায়ান্ট ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। কিন্তু প্রথম মৌসুমে দলের ভয়াবহ পারফরম্যান্সের পর এখন ফের দল খুঁজছেন ৩৭ বছর বয়সী পর্তুগিজ।

তবে চাইলেও এবার সহজ হচ্ছে না রোনালদোর দলবদল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলতে দল বদলানোর কথা ভাবলেও ইউরোপের এলিট দলগুলোর ফরোয়ার্ড লাইনে রোনালদো কতটা গুরুত্ব রাখতে পারবেন তা নিয়ে সন্দিহান তারা। আর যারা স্ট্রাইকার খুঁজছেন তাদের চাহিদার সঙ্গেও মিলছে না রোনালদোর বর্তমান খেলার ধরন। এদিকে তার ক্লাবের নতুন ম্যানেজারও বলে দিয়েছেন, রোনালদো বিক্রির জন্য নয়।তারপরও বেশির ভাগ মানুষের বিশ্বাস এই মৌসুমে নতুন ক্লাবে যাচ্ছেন পর্তুগিজ যুবরাজ। দলবদলের দরজা যতক্ষণ খোলা, ততক্ষণ নজর রাখতেই হচ্ছে তার দিকে।

২. ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং

এবারের দলবদলের বাজারে বার্সেলোনার মিডফিল্ডারকে নিয়ে নাটকটা বেশ জমে উঠেছে। আজ শোনা যায় যে, ডি ইয়ংয়ের বার্সা ছাড়ার বিষয়টা নিশ্চিত তো পরদিনই খবর বেরোয়, ক্লাব বদলাচ্ছেন না তিনি। আর্থিক সংকটের মধ্যেই বার্সেলোনা গা ঝাড়া দিয়েছে দলবদল বাজারে। এরই মধ্যে লেভানদোভস্কি, রাফিনিয়াকে দলে ভিড়িয়েছে তারা। প্রায় নিশ্চিত জুলস কুন্দের আসাও। কেনাবেচার মাঝেই নিজেদের কোষাগারটা একটু সমৃদ্ধ করতে ক্লাবটা বিক্রি করতে চায় দলের অন্যতম মূল্যবান তারকাকে। আদতে জাভির পরিকল্পনায় খুব একটা খাপ খান না ফ্রেঙ্কি। অন্যদিকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হ্যাগ খুঁজছেন তার মতোই একজনকে। তাই সাবেক শিষ্যের দিকেই নজর তার।

এর আগে গোল জানিয়েছিল, ৬৩ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে দুই ক্লাবের মধ্যে দফারফা হয়ে গেছে এই তারকার বিষয়ে। কিন্তু বাধ সেধেছেন স্বয়ং ডি ইয়ং। ন্যু ক্যাম্প ছেড়ে যাবেন না তিনি। তবে বার্সাও নাছোড়। ক্লাবে থাকতে হলে বেতন কমিয়ে অর্ধেক করতে হবে এই ডাচ তারকাকে। তাই শেষ পর্যন্ত ডি ইয়ংয়ের দলবদল সাগা কোথায় গিয়ে থামবে তা দেখার বিষয়।

৩. সার্জ মিলানকোভিচ-সাভিচ

সিরি ‘আ’র দল ল্যাজিওতে খেলা এই সার্বিয়ান মিডফিল্ডারকে নিয়ে গুঞ্জন না উঠলে দলবদল মৌসুম যেন শুরুই হয় না। হয় য়্যুভেন্তাস, নতুবা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। -এই দুদলকে জড়িয়ে প্রতিবার গুঞ্জন ডালপালা মেলে এই মিডফিল্ডারকে নিয়ে। বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডারকে নিয়ে এবারের গুঞ্জনে য়্যুভে-ম্যানইউ দুদলই আছে এবার। যদিও তুরিনের বুড়িরা সদ্যই পল পগবাকে দলে ভেড়ানোয় সাভিচের প্রয়োজনটা কিছুটা হলেও কম তাদের। তবে ইনজুরিতে পগবার ২ মাসের জন্য মাঠের বাহিরে চলে যাওয়া, কিংবা মাঝমাঠের বিকল্প বাড়াতে তাকে দলে টানতেই পারে বিয়ানকোনারিরা।

অন্যদিকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সাভিচ আসছেন কি না তা পুরোটাই নির্ভর করছে ডি ইয়ংয়ের ডিলটার ওপর। শেষ পর্যন্ত যদি ডাচ মিডফিল্ডারকে দলে ভেড়াতে ব্যর্থ হয় তারা তবে সার্বিয়ান তারকাকে দেখা যেতে পারে রেড ডেভিলদের লাল জার্সিতে।

৪. অ্যান্টনি

রোনালদো দলে থাকুক বা চলে যাক, টেন হ্যাগ ফরোয়ার্ড লাইনে যে তারকার জন্য অধীর আগ্রহে আছেন তিনি আয়াক্সের ২২ বছর বয়সী উইঙ্গার অ্যান্টনি। ব্রাজিলের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলেও আলো ছড়ানো তারকার জন্য এরই মধ্যে ৫১ মিলিয়ন পাউন্ডের একটা প্রস্তাব রেখেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। কিন্তু আয়াক্সের দাবি আরও বেশি অর্থ। ৬৮ মিলিয়ন পাউন্ডের কমে অ্যান্টনিকে ছাড়বে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ডাচ চ্যাম্পিয়নরা। তবে রোনালদো যদি শেষ পর্যন্ত নতুন ঠিকানা খুঁজেই পান তবে যে কোন মূল্যেই হয়তো সাবেক এই শিষ্যকে দলে ভেড়াবেন টেন হ্যাগ।

৫. জুলস কুন্দে

রাফিনিয়ার মতো জুলস কুন্দেকেও চেলসির গ্রাস থেকে ছিনতাই করে নিচ্ছে বার্সেলোনা। সবশেষ খবর অনুযায়ী বার্সেলোনার সঙ্গে মৌখিক চুক্তি হয়েই গেছে তার। ক্লাব সেভিয়াও রাজি। ৫০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে তার বার্সেলোনায় যাওয়াটা এখন সময়ের ব্যাপার।

৬. সিজার আজপিকুয়েলতা ও মার্কাস আলন্সো

চেলসির আরেক ডিফেন্ডার আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেনের মতো এই দুই উইংব্যাককেও দলে ভেড়াতে চায় বার্সেলোনা। তবে ডেনিশ তারকার মতো এই দুই স্প্যানিয়ার্ডকে দলে টানা সহজ হবে না কাতালান জায়ান্টদের জন্য। কারণ এই দুজনের সঙ্গেই লন্ডনের ক্লাবটির এখনো এক বছরের চুক্তি বাকি। আর রাফিনিয়া ও জুলস কুন্দেকে বার্সা যেভাবে তাদের হাত থেকে ছিনতাই করেছে, তারপর তাদের কাছে এতো সহজে এই দুই তারকাকে বিক্রি করবে বলে মনে হয় না আর।

৭. লুকাস পাকুয়েতা

সাও পাওলোর এই মিডফিল্ডারকে অনেক আশা নিয়ে দলে ভিড়িয়েছিল এসি মিলান। কিন্তু তাদের এই ‘নেক্সট কাকা’ প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলেও ফরাসি ক্লাব লিওতে নিজের খ্যাতি পুনপ্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হন তিনি। তাই এই মৌসুমে আরও একটা বড় ক্লাবকে ঘিরে গুঞ্জন ডালপালা মিলেছে। এই প্রতিভাবান মিডফিল্ডারকে দলে চায় আর্সেনাল। গানারদের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর এডু এই তারকার অনেক বড় ভক্ত। অন্যদিকে সঠিক দাম পেলে পাকুয়েতাকে ছাড়তে আপত্তি নেই লিওর প্রেসিডেন্ট জ্যছে-মিচচে-অউলাসের। তবে এখনো দুই বছর চুক্তি থাকা তারকার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করতে রাজি থাকলে তবেই তাকে ছাড়বে ফরাসি ক্লাবটি।

৮. বার্নার্দো সিলভা

গত মৌসুমেই ম্যানচেস্টার সিটি ছাড়তে চেয়েছিলেন এই পর্তুগিজ মিডফিল্ডার। ইংল্যান্ড ছেড়ে স্পেনে থিতু হতে চান তিনি। তাকে ছাড়তে রাজি ছিল ক্লাবও। কিন্তু বার্সেলোনা বা অ্যাটলেতিকো মাদ্রিদের জার্সি গায়ে চাপাতে চাইলেও এখনো স্বপ্নপূরণে অনেক বাধা তার। কারণ দলে নিতে হলে উপযুক্ত মূল্য দিয়েই কিনতে হবে গত মৌসুমে ম্যানসিটিকে লিগ জেতাতে বড় ভূমিকা রাখা তারকাকে। স্বপ্নের প্রোজেক্ট হিসেবে বিবেচিত এই মিডফিল্ডারকে পাওয়ার আশা অবশ্য এখনো ছাড়েনি কাতালান জায়ান্টরা। এই মৌসুমে যদি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংকে তারা বেচতে পারে তবে স্বপ্নপূরণ সম্ভব হবে তাদের।

৯. নেইমার

বিশ্বরেকর্ড গড়ে ২০১৭ সালে নেইমারকে প্যারিসে ভিড়িয়েছিল পিএসজি। তবে এই ব্রাজিলিয়ানকে এখন বেচতে চায় তারা। মূলত বিশাল অর্থ লগ্নি করে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দলে আটকানোর পর সেই এখন প্যারিসের অলিখিত রাজা। আর এই ফরাসি চান না নেইমার থাকুক প্যারিসে।তবে রোনালদোর মতো নেইমারকেও দলে ভেড়াতে ইচ্ছুক ক্লাবের সংখ্যাটা কম। ৩০ বছর বয়সী তারকাকে কৌশলগত ও অর্থনৈতিকভাবে দলে নেওয়ার সামর্থ রাখে এমন ক্লাবের সংখ্যাটাই আসলে কম।

তবে রোনালদোর সঙ্গে পার্থক্য হলো রোনালদো দল ছাড়তে জোরাজুরি করলেও নেইমার চান না বিশ্বকাপের আগে দল বদলাতে। তবে দলবদল মৌসুম শেষ হওয়ার আগে নেইমারকে দেখা যেতে পারে অন্য দলে। বিশেষ করে সৌদি পেট্রো ডলারে নব্য ধনী হওয়া নিউক্যাসলে দেখা যেতে পারে নেইমারকে।

১০. মেমফিস ডেপাই

গত মৌসুমে বার্সেলোনায় যোগ দিয়ে ক্লাবের প্রত্যাশা অনুযায়ী খারাপ করেননি ডাচ স্ট্রাইকার মেমফিস ডেপাই। তবে এই মৌসুমে ন্যু ক্যাম্পে তরী ভিড়িয়েছেন রবার্ট লেভানদোভস্কি, রাফিনিয়ারা। এ ছাড়া চুক্তি নবায়ন করেছেন উসমান দেম্বেলেও। আর গত জানুয়ারিতে কেনা ফেরান তরেস তো আছেই। তাই এই ডাচ তারকাকে এই মৌসুমে বেশির ভাগ সময় কাটাতে হতে পারে বেঞ্চে বসে। বিশ্বকাপের বছরে বেঞ্চে না কাটিয়ে অধিক সময় খেলার জন্য তাই ডেপাই ছাড়তে পারেন ক্লাব। আর অপ্রয়োজনীয় খেলোয়াড় বিক্রি করে কিছু অর্থ আয় হলে আর্থিক সংকটে থাকা ক্লাবটিরও লাভ।

এ ছাড়া দলবদলের সম্ভাবনা আছে ব্রাইটনের লেফটব্যাক কুকুরেল্লার। প্রথাগত লেফটব্যাকের সংকটে থাকা পেপ গার্দিওলার ম্যানসিটির নজর তার দিকে।গত মৌসুমে লিভারপুল ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেওয়া জর্জিনিও উইনালডুম পূরণ করতে পারেনি ক্লাবের প্রত্যাশা। তাই তাকে বেচে দিতে চায় ক্লাব।নাপলির নাইজেরিয়ান তারকা ভিক্টর অসিমেনের গায়ে ‘বিক্রির জন্য নয়’ ট্যাগলাইন লাগিয়ে রাখলেও তিনিও চান ক্লাব ছাড়তে। তাই এই তারকাকে আটকে রাখা নাও সম্ভব হতে পারে সিরি ‘আ’র দলটির জন্য।

এদিকে ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লের নিয়ম রক্ষা করতে হলে ইন্টার মিলানকে যে করেই হোক স্কোয়াডের ব্যয়বহুল তারকাদের কয়েকজনকে ছাড়তে হবে। এই তালিকায় আছেন দলটির অন্যতম সম্পদ মিলান স্কিনিয়ার। আসছে মৌসুমে তাকে দেখা যেতে পারে পিএসজির জার্সিতে।

Development by: webnewsdesign.com