তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল দূর করতে কঠোর হচ্ছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন জেলা-উপজেলার সঙ্গে। বিরোধের মূল কারণ বের করে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখার কাজ শুরু করছেন তারা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, গ্রুপিং বা দ্বন্দ্ব-কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ তৃণমূল চান তারা।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ শুক্রবার বিকালে বলেন, যখন আমরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে যাই তখনই অনেক বাধা সৃষ্টি হয়। অনেক সময় আমরা অনেক বিপদের মুখেও দাঁড়াই। তিনি বলেন, যে এমপি হয়েছে সে-ই মন্ত্রী হতে চায়। চাচাতো ভাইকে পার্টির পদ দিতে, খালোতো বোনকে দিতে চায় মহিলা আওয়ামী লীগের পদ। তার প্রত্যাশা যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতৃত্বে থাকুক তার ছেলে। মূলত এসব কারণেই অভ্যন্তরীণ বিভেদ বাড়ে। ফলে আমরা চাই সবাইকে নিয়ে বসে কমিটি হোক। আমাদের নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) নির্দেশনার গুরুত্বটা সেখানেই। সেই নির্দেশনাই দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক শুক্রবার বিকালে বলেন, কিছু কিছু জায়গায় নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে। একজন আরেকজনের চরিত্র হনন করছে, এটা ঠিক নয়। এগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। তিনি আরও বলেন, আমরা চাই তৃণমূলে কোনো গ্রুপিং থাকবে না। কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। এই বার্তাগুলোই আমরা কঠোরভাবে তৃণমূলে দিয়েছি এবং দিচ্ছি।
১৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত দলের প্রেসিডিয়াম বৈঠকের পর ১৭ তারিখ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়ে ৫টি সাংগঠনিক নির্দেশনার কথা জানিয়েছে। এর মধ্যে নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের ত্যাগী-পরীক্ষিত-সৎ বিশেষ করে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও করোনাকালীন যারা দেশের মানুষের কল্যাণে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, কিছু কিছু জায়গায় আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। জাতীয় বা স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন লাভ, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও পদ-পদবি লাভ নানা কারণে এই সমস্যাগুলো হয়। এবার এই বিষয়গুলো নিয়ে নেত্রী (আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা) খুবই সিরিয়াস। তার নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এই সদস্যগুলো চিহ্নিত এবং সমাধান করার লক্ষ্যে কাজ করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন জায়গায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে গিয়ে বিরোধে জড়াচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। একে অন্যের চরিত্র হনন করছে। ফলে কেন্দ্র থেকে বারবার তাগাদা দেয়ার পরও সময়মতো পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা জমা দিতে পারছেন না অনেকেই। আবার বেশ কয়েকটি সাংগঠনিক জেলায় দুটি করে কমিটির তালিকা তৈরির ঘটনাও ঘটেছে। অনেক কমিটিতে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের জায়গা না দিয়ে নিজেদের লোক দিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগও রযেছে।
এদিকে কমিটিগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বী সব পক্ষের নেতাদের স্থান দিতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলের প্রেসিডিয়াম বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘যেসব জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে শুধু নিজেদের পছন্দমতো লোক রাখবে, যারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের কমিটি থেকে বাদ দেবে তাদের কমিটি অনুমোদন হবে না। যারা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ছিলেন তাদেরও কমিটিতে মূল্যায়ন করতে হবে। যারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের বাদ দেবে দরকার হলে তাদের কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি করে দেব।’
Development by: webnewsdesign.com