প্রেম ভালোবাসা সবার জীবনে আসে,
যতদিন চাঁদ, তারা, সূর্য, বাতাস থাকবে প্রেম ভালবাসা নামের শব্দ গুলো অমর হয়ে থাকবে।
এই বিংশ শতাব্দীতে এসে যুগের পরিবর্তন হয়েছে।
এখন স্যাটেলাইট এর যুগ, পর্যাপ্ত ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন এর ব্যাবহার, এই আধুনিকতা সাফল্যতার ছোয়া কারো জীবনে বয়ে এনেছে স্বর্গের সুখ আবার কারো জীবনে বয়ে এনেছে দুঃখের সাগর। লাভ-ক্ষতির এই পৃথিবীতে করোনাকালীন সময়ে অবশ্য এই স্মার্টফোন ইন্টারনেট তথা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, গুগোল, মেইল ব্যবহার করেই গণমাধ্যম গুলো সব রকমের খবর জনগণের গোরদুয়ারে পৌঁছে দিয়েছে। বর্তমান যুগের যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মধ্যে ইন্টারনেট পোর্টাল মিডিয়া গুলো অনেক উন্নত ও অতি উত্তম। আধুনিক মানব সভ্যতার জন্য উজ্জ্বল নক্ষত্র এই মিডিয়াগুলো।
এখন কথা হলো, আমরা এই ডিজিটাল যুগে বা মিডিয়ার যুগে কতটুকু ভাল আছি এবং আমাদের সন্তানরা কতটুকু ভালো আছে ? ছোটবেলায় আমরা স্কুলে যেতাম স্কুল থেকে এসে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে চলে যেতাম খেলার মাঠে, তাতে শারীরিক একটা ব্যায়াম হতো মানসিক চাপ কমতো, তারপর সন্ধ্যার মধ্যে বই নিয়ে পড়তে বসতে হবে এরকম রুটিনে আমরা বড় হয়েছি।
এখনকার মুঠোফোনের যুগে এসে সব কিছু যেনো হারিয়ে যেতে বসেছে সভ্যতার এতটাই পরিবর্তন এসেছে যে, এখন আর কোনো শিশুকে খেলার মাঠে যেতে হয় না গল্প করার জন্য মাঠে বসতে বা পাড়ার আনাছে-কানাছে কোন বন্ধু-বান্ধব খুঁজতে হয় না এর কারন কিন্তু একটাই “স্মাটফোন”। যার কারনে আমরা হারিয়েছি রেডিও টেপরেকর্ডার ডিভিডি হারিকেন এমনকি আপনজনের সাথে বসে জ্ঞান চর্চা আরো ইত্যাদি। আমাদের জীবনে বিজ্ঞান এতটাই উন্নত সাধন হয়েছে যে ভাবতে অবাক লাগে, যে ফসল এর উন্নতির জন্য ফসলের এমন ভিটামিন (ঔষধ) আছে অতি অল্প সময়ের মধ্যে সে ফসলটি পরিপক্ক করে তোলে এবং অল্পদিনেই বাজার জাত করতে পাড়ছে কৃষকরা!
আমরা এমন আধুনিক যুগে পৌঁছে গেছি যেখানে নিয়ম-নীতি সবই আছে তবে সঠিক সময়ে সঠিক প্রয়োগ নেই। আসল কথায় আসি একটা সন্তান বড় হবার পর বাবা-মা সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার সকল চেষ্টাই করে থাকেন। সন্তানের মঙ্গলের জন্য যা যা করণীয় সব করতে প্রস্তুত এখনকার অভিভাবক। এখনকার প্রি-ক্যাডেট বা কিন্ডারগার্ডেন স্কুল গুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে, বাবা-মা কতটুকু সন্তানের প্রতি শিক্ষাঅনুরাগী। সন্তান বড় হবে মানুষের মত মানুষ হবে দেশ ও সমাজের কল্যাণে আসবে এরকম শিক্ষাই শিক্ষিত করতে বদ্ধ পরিকর অভিভাবকগণ ও শিক্ষিত সমাজ।
এখানেই দুর্বলতা, সন্তান একটু বড় হতেই বড় ক্লাসে উঠতেই বাবা মায়ের কাছে আবদার করে বসে একটি স্মার্টফোন। ফোন লাগবে লেখাপড়া করার জন্য, বন্ধুবান্ধব বা শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করার জন্য । সন্তানের কল্যাণের জন্য কালক্ষেপণ না করে শত কষ্ট স্বীকার করে সংসারের অভাব বুঝতে না দিয়ে একটি স্মার্টফোন কিনে দেয় সন্তানের হাতে। সেই থেকে সন্তানটির শুরু হয় নতুন জীবন! কিছু ক্ষেত্রে সন্তান ভালো হলেও বেশিরভাগ সন্তানের ক্ষেত্রে ঘটে উল্টো একদিন দুইদিন করতে করতে সন্তানের বয়স বেড়ে যায় “সোনার বাংলায়” একটি সু-সন্তান গড়াতে গিয়ে পিতামাতা তাদের জীবনের আয়ের সবটুকু উপার্জন উৎসর্গ করে সন্তানের পিছনে।
এই স্মার্টফোন তখন সন্তানের সব থেকে প্রিয় বন্ধু কারন স্মার্টফোনে এমন কিছু নেই পাওয়া যায় না বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন প্রেমিক ভালোবাসা ভালোলাগার মত সব কিছুই আছে। শুরু হলো সভ্যতার অভয়রণ্যে অনুপ্রবেশ, যার কোন কুল-কিনারা নাই। বিশ্বকে জানতে গিয়ে শুরু হলো জীবনের অবক্ষয়! আস্তে আস্তে সে ফেসবুকে ইনস্টাগ্রামে বন্ধু খোঁজা শুরু করল একদিন হয়তো বন্ধু পেয়েও গেল। সব বন্ধুই যে খারাপ হয় তা না সব বান্ধবী যে খারাপ হয় তাওনা । তারপর বন্ধুত্ব থেকে ভালোলাগা আর ভালোলাগা থেকে ভালবাসা একটি জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হলো আর ঘটলো মস্তিস্কের পরিবর্তন।
প্রেম শুধু কাছে টানে না দূরেও ঠেলে দেয়। এই কথাটি চিরসত্য হলেও ডিজিটাল প্রেমের অধ্যায়ে দুরে ঠেলে দেবার আগে ঘটে যায় অনেক ঘটনা।ঘটনা বললে ভুল হবে দুর্ঘটনা! প্রেমিক যুগলের মনকামনা দিনদিন বাড়তে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে শুরু হলো পার্কে বেড়ানো, তারপরে গিফট দেওয়া নেওয়া আবার কখনও হোটেলে নিয়ে গিয়ে ফাষ্ট ফুড খাওয়ার নামে ২ ঘন্টা চুটিয়ে গল্পকরা এভাবেই তারা ধীরে ধীরে প্রতিশ্রুতি দেওয়া নেওয়া তারপর হটাৎ না হটাৎ বললে ভূল হবে ঘটা করেই কোন বিশ্বস্ত বন্ধুবান্ধবী বা আত্মীয় স্বজনের বাড়ি, যদি সেরকম কোন নিকটতম না থাকে তাহলে আর কি করা আবাসিক হোটেল গুলোতো আপ্যায়নের জন্য সর্বক্ষনিক প্রস্তুত আছেই। সেই দিনের সেই হঠাৎ ঘটে যাওয়া মধুচন্দ্রিমার ফসল হিসাবে হয়তো জন্ম নেয় অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তান!
ঠিক তখনই একটি কুমারী মাতা এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভ্রূণ বা গর্ভজাত সন্তান থেকে সমাজের চোখে ভাল সাজার জন্য জীবনটাকে আরো উপভোগ করার জন্য সেই মা সন্তানটির জন্ম যেখানে সেখানে দেয় পরে আমরা দেখতে পাই ডাস্টবিনে কিংবা ফেলে রাখা হয় কোন পার্কে কিংবা কোন রাস্তার ধারে। আবার কারো স্বচক্ষে দেখার সৌভাগ্য না হলেও সেই স্মাটফোনে কিংবা পরেরদিন সকালের পত্র-প্রত্রিকা বা টিভির হেডলাইনে!
বর্তমান প্রেম-ভালোবাসার অবস্থা এমনই নাজুক বেশিরভাগ ছেলে মেয়েই একটু বেশিই আধুনিক, ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক একটা প্রেমে যেন তার মন ভরে না! আজব’না আশ্চর্য কি বলবো আমি নিজেও বুঝিনা! আসা যাক আসল কথায় অনাকাঙ্ক্ষিত এই সন্তানটির ভবিষ্যৎ কোথায়? এই সন্তান কি কোন পরিবার পাবে, পাবে কি সঠিক কোন পরিচয়, পাবেনা কোন সঠিক গন্তব্য, সেইতো ডাস্টবিনের টোকাই হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে! একটা অনাগত নিষ্পাপ সন্তান সে জানেনা তার বাবা-মা কে?সে জানল না তার জন্ম কোথায় ? স্বজনহারা পিতা- মাতা হারা শিশুটি যখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে বড় হবে। যখন বুঝতে শিখবে যখন লোক সমাজ থেকে জানতে শিখবে যে পৃথিবীতে কে তার আপনজন !
কিছুদিন আগে বগুড়া রেল ষ্টেশন দিয়ে হাটছিলাম হটাৎ দুইটি ৮/১০ বছরের শিশু উস্কো খুস্কো চুল চোখে মুখে ময়লা একটা ক্রিকেট বল নিয়ে কথা কাটা কাটি করছিল আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম শুনলাম দুজনের কথোপকথন ঝগড়া তবে কথাগুলো কবিতা রুপে বললাম শুনুন “গবড়ে পদ্ম ফুল ফোটে” টোকাই বলেই যে সবাই খারাপ তানা এক জন টোকাই বাবা-মা হারা বস্তির ছোট ছেলে অন্য জন রেল ষ্টেশন এর পাশের কোন বাড়ীর হবে বলেই মনে হলো,একজন অপর জনকে-
এই তোর বাড়ি(জন্ম) কোথায়?
কেন যেথাসেথা!
এই তুই পাগল না বোকা
দেখ বলবিনা আমাকে আকা বাঁকা
আমি এখন ছোট্ট খোকা,
করছি আমি পড়ালেখা
বড় হয়ে চড়বো গাড়ী
স্বপ্ন দেখি দেব আকাশ পাড়ি!
হুম শখ কত ঢের বলেছিস
কোথাকার কে রে তুই !
স্বপ্ন দেখিস আকাশ ছুই!
এমন করে বলিস না ভাই
রাস্তা বা বস্তিতে জন্ম আমার
দোষের কিছু নয়, যদি সৃষ্টিকর্তা সহায় হয়,
দোষ যদিও করেও থাকে করেছে বাবা- মা’য়
তবুও আমি নিজেই দোষী জন্মকে দোষী দেই না।।
হতভম্ভ হয়ে গেলাম আমি,, চারিপাশ একটু কোলাহল হলেও কথাগুলো শুনতে বা বুঝতে আমার কোন কষ্ট হয়নি কি বলবো, শিশু বাচ্চা দুইটির জ্ঞানের পরিধি দেখে আমি অবাক। দেখ ভাই আমাকে যা বলবি বল আমার বাবা মাকে কিছু বলিস না, তারা যে আমার বাবা মা তাদের ভুলে হয়তো আজ আমি বস্তির টোকাই।
সেই সময় থেকেই আমি ভাবছি লিখবো এই অনাকাঙ্ক্ষিত শিশু নিয়ে যারা ক্ষণিকের আনন্দের ফসল যারা জন্মের পরেই বাবা মার মুখ না দেখে দেখে ডাষ্টবিন! হায়রে সমাজ সভ্যতা শিক্ষা , একটা অনাগত সন্তান জন্ম দিয়ে রাস্তায় রেখে গেলে তার পরিনতি কি? তার পরিচয় কি? কে তার ভবিষ্যৎ পিতামাতা,কারো ব্যক্তিগত পাপের ফসল বলবোনা আনন্দের ফসল, এই নিষ্পাপ শিশু গুলোকে দেশ ও জাতির ঘাড়ে চাপাবেন না, সমাজের এই অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানদের দায় ভার কে নেবে? সভ্যতার আর ডিজিটাল যুগে সমাজ দেশ ও জাতির কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম এই আধুনিকতার অভয় অরণ্যের যুগে অসভ্যের ফল “আর ডাষ্টবিনে নয়”, প্রেম চিরন্তনই পবিত্র, পবিত্রই থেকে যাবে, কিন্তু যে জন প্রেমকে অপবিত্র করে বা করবে সেই জন অপবিত্র হবে”।
লেখক:: “শেখর চন্দ্র সরকার”
Development by: webnewsdesign.com