লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ
যদি প্রশ্ন করা হয়, জীবাণু থেকে জীবন বাঁচিয়ে রাখতে সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা কোনটি? অনেকেই সাত-পাঁচ ভেবে নানা কিছু বলার চেষ্টা করবেন। বুদ্ধিমানরা টিকার কথাও বলে উঠবেন। কিন্তু যে কোনো টিকার চেয়ে বড় এবং মোক্ষম প্রতিরোধ ব্যবস্থা হচ্ছে হাত ধোয়া বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। সারাবিশ্বে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় শিশুমৃত্যুর অন্যতম প্রধান দুটি কারণ হলো উদরাময় ও শ্বাসনালির প্রদাহ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এ দুটি রোগ দুই-তৃতীয়াংশ শিশুমৃত্যুর জন্য দায়ী। গবেষণায় এটাও প্রমাণিত যে, শুধু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থেকে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুললেও উদরাময় অর্ধেক পরিমাণ কমে যাবে আর শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ কমবে এক-তৃতীয়াংশ।
জীবাণুর যেখানে বাস : সবখানেই জীবাণুর রাজত্ব। ঘরের ভেতর-বাইরে জীবাণু, ধুলোবালিতে জীবাণু, এমনকি মানিব্যাগের মূল্যবান টাকার সঙ্গেও জীবাণু কিলবিল করছে। একমুঠো মাটিতে সারা বাংলার জনসংখ্যার চেয়ে বেশিসংখ্যক ব্যাকটেরিয়ার অবস্থান। সুতরাং এসবের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিয়ে যদি আবার মুখে পুরে দেন, তবে তা কত ভয়ানক হতে পারেÑ ব্যাপারটি অনুমান করুন।
হাতের মাধ্যমে ছড়ানো ব্যাধি : সাধারণ সর্দি, ফ্লু, উদরাময় থেকে শুরু করে পেটের পীড়াজনিত মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া সালমোনেলা, ই-কলাই সব রোগ ছড়ায় হাতের মাধ্যমে। এছাড়া হেপাটাইটিস-এ, হেপাটাইটিস-ই, চামড়ার প্রদাহ, ট্রাকোমার মতো ভয়ানক চোখের রোগ ছড়ায় নোংরা হাত আর খাবার থেকে। মেনিনজাইটিসের মতো মারাত্মক রোগ ছড়াতে হাতের ভূমিকা অনন্য। আতঙ্ক ছড়ানো ভাইরাস সোয়াইন ফ্লু, কভিড-১৯ কিংবা ইবোলা ছড়ানোয় হাতের ভূমিকা রয়েছে। এসব থেকে হতে পারে নিউমোনিয়া।
জীবাণু যেভাবে শরীরে প্রবেশ করে : হাতের আঙুল চোখ-নাকে লেগে যায় প্রায়ই। হাতের জীবাণু মুখ ছাড়াও প্রবেশ করে নাসারন্ধ্র ও চোখের ভেতরে। শিশুদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি আরও মারাত্মক। তারা ময়লা ধরে মুখে তো হাত পুরছেই, পাশাপাশি হাত মিলছে দেহের যত্রতত্র, এমনকি গুপ্ত অঙ্গেও। এভাবে পরিবেশের জীবাণু দেহের কুঠুরি দিয়ে প্রবেশ করছে অন্দরমহলে আর আমাদের টেনে নিচ্ছে রোগব্যাধির জগতে।
হাত যেভাবে ধোবেন : শুধু পানি দিয়ে কোনোমতে হাত ভিজিয়ে নেওয়ার নাম হাত ধোয়া নয়। হাত ধোয়ার জন্য একটু গরম পানি ব্যবহার করুন। সাবান মাখিয়ে কব্জির ওপর পর্যন্ত ঘষুন ২০ সেকেন্ড। আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ভালো করে খিলাল করুন। তার পর পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে নিন। পরিষ্কার তোয়ালে, টিস্যু কাগজ ব্যবহার করতে পারেন ভেজা হাত মোছার জন্য।
অভ্যাসটি গড়ে দিন শিশুদের : হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে ছোটবেলা থেকেই। মা-বাবা, পরিবারের বড়রাই পারেন এমন সুন্দর একটি রোগ প্রতিরোধক দেয়াল গড়ায় শিশুদের শিক্ষা দিতে। সবাই মিলে যদি এমন প্রতিরোধ দেয়াল গড়ে তুলতে না পারি, তবে জীবাণুর সহজ শিকার হতে কোনো বাধাই থাকবে না। চলুন, আজই শুরু করে দিই সহজ কাজটি। সবাই গড়ে তুলি হাত ধোয়ার সুন্দর অভ্যাস আর জীবাণু করি বোল্ড আউট। মোট কথা, এখনই সচেতন হই। নিজেকে এবং পরিবারকে সুস্থ ও ভালো রাখি।
লেখক : মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং সহযোগী অধ্যাপক
এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট বিভাগ, সিএমএইচ, ঢাকা
চেম্বার : আল রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট, ঢাকা
Development by: webnewsdesign.com