ঝালকাঠিতে পৌরসভার ১কোটি ৪৭ লাখ টাকা বরাদ্ধে খাল খনন শুরু হয়নি

শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ২:৫৭ অপরাহ্ণ

ঝালকাঠিতে পৌরসভার ১কোটি ৪৭ লাখ টাকা বরাদ্ধে খাল খনন শুরু হয়নি
apps

একটু বৃষ্টি হলেই ঝালকাঠি পৌর শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। পৌর শহরের ভিতর দিয়ে সাতটি খাল বিদ্যমান ছিল। এর দু’একটির অস্তিত্ব থাকলেও অন্য খালগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। খাল সচল না থাকায় শহরবাসীর চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বিভিন্ন সময় খাল খননের দাবী করে আসছে পৌরবাসী। বিগত দিনে পৌরসভার যারা মেয়র ছিলেন তারা নজর দেননি খাল খনন কাজে। ফলে দিনে দিনে খাল গুলো ময়লায় ভরাট হয়ে গিয়েছে।

খাল দিয়ে শহরের ময়লা আবর্জনা দ্রুত নেমে যেত, কোন রকম জলাবদ্ধতা ছিল না। কিন্তু আস্তে আস্তে এই খাল গুলো সব ভরাট হয়ে যায়। যার ফলে পয়োনিস্কাশন ব্যবস্থা আটকে গিয়ে একটু বৃষ্টি হলেই শহরের সড়ক গুলোতে হাটু পানি জমে যায়। দীর্ঘ দিন ধরে খাল খননের দাবী জানিয়ে আসছিল পৌরবাসী।

পৌরবাসীর ভোগান্তি লাঘবে সাতটি খাল খননের উদ্যোগ নেয় ঝালকাঠি পৌরসভা। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে ততকালীন জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম পৌরসভার ৭ টি খাল খনন কাজ উদ্বোধন করেন। গত ২৮ আগষ্ট খাল খনন কাজ উদ্বোধন করা হলেও বাস্তবে এক মাস ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও আলোর মুখ দেখেনি পৌরবাসী।

তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, ৯ সেপ্টেম্বর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স আজমীর বিল্ডার্স লি. কার্যাদেশ পেয়ে খালের পাশের অবৈধ উচ্ছেদ ও খাল পরিমাপের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে পৌরসভার সার্ভেয়ার নিয়োজিত করার আবেদন করেন। সার্ভেয়ারদের পরিমাপ করে খাল বুঝিয়ে দেবার নির্দেশনা দিলেও অন্য কাজের কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। পরে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খালেও পানি থাকার কারণে। পরিমাপ করে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। কয়েকদিন পরে পানি কমলে খাল শুকালে খনন কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। গত ২০ আগস্ট থেকে আগামী ২০২৫ সালের ১৯ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত কার্যকাল মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়। কাজের মান নিশ্চয়তার জন্য ৫৩হাজার টাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জমা রাখবে পৌরসভা।

ঝালকাঠি পৌরসভার খাল খনন করার উদ্যোগ নেওয়া খালগুলো হলো থানা রোড থেকে সুগন্ধা নদী (টিন পট্টি), কোর্ট রোড থেকে সুগন্ধা নদী, রুপনগর থেকে সুগন্ধা নদী হয়ে চাঁদকাঠি জেলেপাড়া, ফকির বাড়ির কালভার্ট হতে টাউন মসজিদ, উপজেলা পরিষদ থেকে টাউন মসজিদ, ঝালকাঠি ঈদগাহ থেকে সুগন্ধা নদী, গুরুধাম নদী থেকে মৎস্য খামারের পিছন পর্যন্ত।

পৌরসভার বাসিন্দা মোঃ সেলিম হাওলাদার বলেন, খান খনন কাজ না করায় আমাদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়। বৃষ্টি হলে রাস্তা ঘাটে পানি জমে থাকে। ময়লা আবর্জনায় খাল ভরে গিয়ে মশার প্রজনন ও দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্গন্ধে বাসা বাড়িতে থাকতে পারিনা। দেখেছি খাল খনন হবে উদ্বোধন করা হয়েছে। কিন্তু কোন খনন কাজ দেখছি না। আমরা চাই দ্রুত সময়ে খান খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করবে পৌরসভা।

পৌরসভার বাসিন্দা হেমায়েত হোসেন বলেন, গত ৪৮ দিন হয়েছে সাবেক জেলা প্রশাসক ও পৌরসভা প্রশাসন খাল খনন কাজ উদ্বোধন করা হয়। এখন পর্যন্ত কোন খাল খনন কাজ করতে দেখি নাই। বৃষ্টি হলে রাস্তা ঘাটে পানি জমে থাকে। ময়লা আবর্জনায় খাল ভরে গিয়ে মশার সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের দাবি দ্রæত সময়ে বিতর খান খননের কাজ শুরু এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করবে পৌরসভা।

পৌরসভার বাসিন্দা আশিকুর রহমান বলেন, ঝালকাঠি পৌরসভার ৭ টি খাল খনন কাজ উদ্বোধন করেন গত ২৮ আগষ্ট ২০২৪ খাল খনন কাজ উদ্বোধন করা হলেও বাস্তবে এক মাস ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও আলোর মুখ দেখেনি পৌরবাসী। বৃষ্টি হলেই ময়লা ভেসে উপরে উঠে যায়। তখন সড়কেও চলাচলের ব্যবস্থা থাকে না। আমাদের দাবী দ্রæত খাল খনন কাজ বাস্তবায়ন করা হোক।

ঠিকদার প্রতিষ্ঠান আজমীর বিল্ডার্স লিঃ ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ সারোয়ার হোসেন বলেন, ঝালকাঠি পৌরসভার ৭ টি খাল খনন কাজের কার্যাদেশ গত ৯ সেপ্টেম্বর পেয়েছি। কিছু দিন যাবত প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে সারা দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাতে নদীতে বেশি পানি থাকায় খাল গুলোতেও ভরা পানি। এর জন্য খনন কাজ শুরু করতে পারি নাই। আশা করি দ্রুত খাল খনন কাজ শুরু করবো।

ঝালকাঠি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী অলোক সমাদ্দার জানান, পৌরসভার ৭ টি খাল খনন কাজ আমরা শুরু করেছি। এর জন্য ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে। বৃষ্টি ও খালে পানি থাকায় খনন কাজ শুরু করতে দেরি হচ্ছে। পানি কমে গেলে শুকনার সময়ে খনন কাজ শুরু করা হবে।

ঝালকাঠি পৌরসভার প্রশাসক মো. কাওছার হোসেন বলেন, ঝালকাঠি শহরের অভ্যন্তরে ৭টি খাল খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই খালগুলো বর্তমানে পানি ভর্তি। এখন পানি ভর্তি, খনন করলে মূল উদ্যেশ্য ব্যাহত হবে। তাই পানি কমলে তখন খনন কাজ শুরু হবে। ইতিমধ্যে আমাদের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।

 

Development by: webnewsdesign.com