সিলেটের দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজের এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম রাহাত খুনের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন কলেজের অধ্যক্ষ মো. শামছুল ইসলাম।
ঘাতকদের বিচারের মুখোমুখি না করলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। একইসাথে তিনি এ কথাও বলেছেন, শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
আজ রোববার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রাহাত খুনের ঘটনার প্রেক্ষিতে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সাংবাদিক সম্মেলনে অধ্যক্ষ মো. শামছুল ইসলাম বলেন, “প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পরও কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে না পারাটা দুঃখজনক। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তিও সংকটের মুখে পড়বে।
যদি অবিলম্বে আমাদের প্রিয় ছাত্র আরিফুল ইসলাম রাহাতের ঘাতকদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা না হয়, তাহলে দক্ষিণ সুরমা কলেজের সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীরা মাঠে নামবে। গড়ে তোলা হবে দুর্বার আন্দোলন। আমাদের দাবি একটাই, আর সেটি হলো ঘাতকদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে।
রাজপথে শিক্ষার্থীরা নেমে গেলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এর জন্য সকল দায়ভার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই বহন করতে হবে।”
অধ্যক্ষ জানান, রাহাতের রুহের মাগফেরাত কামনায় আগামী ৩০ অক্টোবর দোয়া মাহফিল করা হবে। একইসাথে রাহাতের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের কথাও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, আরিফুল ইসলাম রাহাত খুনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে তার চাচা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলা নয়-২১/২২/১০/২১। মামলায় ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি কামরুল হাসান তালুকদার। তিনি বলেন, ‘রাহাতের চাচা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় ৩ জনের নামোল্লেখ ও ৫-৭ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।’
একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার থানা এলাকার সিলাম পশ্চিমপাড়ার আব্দুস সালামের ছেলে সামসুদ্দোহা সাদী (২০)। অপর দুই আসামি হলেন একই এলাকার জামাল মিয়ার ছেলে তানভীর আহমদ (১৯) ও দক্ষিণ সুরমার তেতলি ইউনিয়নের আহমদপুর গ্রামের মৃত গৌছ মিয়ার ছেলে সানী।
এদের মধ্যে সাদী ছাত্রলীগের কর্মী। তিনি সিলেট ছাত্রলীগের কাশ্মীর গ্রুপের সাথে জড়িত বলে জানা গেছে। দক্ষিণ সুরমা কলেজের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। কলেজে অধ্যয়নকালীন একবার তাকে বহিষ্কারও করা হয়। বাকি দুজনও ছাত্রলীগের সাথে জড়িত বলে জানা গেছে।
এর আগে আরিফুল ইসলাম রাহাত (১৮) প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গেল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাড়ি থেকে বের হন। এসময় চাচাতো ভাই রাফি তার সঙ্গে মোটরসাইকেলে ছিলেন।
যাবার পথে চাচাতো ভাইকে কলেজ গেটে রেখে এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে কলেজ ক্যাম্পাসে যান রাহাত। পরে বের হওয়ার সময় দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কলেজের মূল গেট থেকে ২০-২৫ গজ ভেতরে সাদী ও তানভীর সিলভার রঙ্গের একটি পালসার মোটরসাইকেলযোগে পেছন থেকে এসে রাহাতকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান। পরে রাহাতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রাহাত দক্ষিণ সুরমা উপজেলার পুরাতন তেতলি এলাকার সুরমান আলীর ছেলে ও দক্ষিণ সুরমা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।
Development by: webnewsdesign.com