জৈন্তাপুর মহিলা মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারের উপর গাফফার-হানিফ চক্রের হামলা

বৃহস্পতিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২০ | ২:৩১ অপরাহ্ণ

জৈন্তাপুর মহিলা মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারের উপর গাফফার-হানিফ চক্রের হামলা
apps

জৈন্তাপুর উপজেলা সদরে অবস্থিত জৈন্তা জামেয়া ইসলামিয়া মহিলা মাদ্রাসার নবনিযূক্ত ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আনোয়ার হোসেনের উপর নগ্ন হামলা ও জোরপূর্বক পদত্যাগে বাধ্য করানোর হীন উদ্দেশ্যে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নিয়েছে গাফফার -হানিফ চক্র। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) রাত ৮ ঘটিকার সময় এ ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, জৈন্তা মহিলা মাদ্রাসার বহিষ্কৃত সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার ভারতীয় চোরাচালানী আব্দুল গাফফার, উপজেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি ভারতীয় চোরাচালানী গোলাম কিবরিয়া ও বখাটে সন্ত্রাসী হানিফ মিয়া মঙ্গলবার রাত ৮ ঘটিকায় উপজেলার উত্তর রুপচেং গ্রামের মসজিদ কোয়ার্টারে মাওলানা আনোয়ার হোসেনের আবাসস্থলে যায়।

আনোয়ার হোসেন বিগত ১৩ বছর যাবত উক্ত মসজিদে ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করছেন। গ্রামের মানুষ এশার নামাজ শেষে যার যার বাড়ীতে চলে গেলে এ সুযোগে সন্ত্রাসী কায়দায় গাফফার, হানিফ ও কিবরিয়া অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আনোয়ার কে জৈন্তা মহিলা মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারের পদ থেকে পদত্যাগ করাতে জোরপূর্বক সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নেয়। এবং তারা মাওলানা আনোয়ার কে সুপারের দায়িত্ব চালিয়ে গেলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে চলে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনার প্রায় ঘন্টাখানেক পর পুনরায় সিএনজি যোগে গাফফার, হানিফ ও কিবরিয়া মাওলানা আনোয়ার কে প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে ঐ গ্রামে আসলে উত্তেজিত বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী হাতে নাতে সন্ত্রাসী হানিফ, গাফফার ও কিবরিয়া কে আটক করে। গ্রামের সাধারণ জনতা রাতে ফেরিঘাট টু লালাখাল রাস্তা ব্যারিকেড দেয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ চলে আসলে এবং উত্তেজিত জনতা গাফফার, হানিফ ও কিবরিয়াকে গ্রেফতারের দাবি জানালে ও থানায় নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশের চোখ ফাকিয়ে দিয়ে রাতের আঁধারে সন্ত্রাসীত্রয় পালিয়ে যায়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে রাতে বিক্ষুব্ধ জনতা জৈন্তাপুর মডেল থানা ঘেরাও করেছে বলে জানা যায়।পুলিশের সহযোগিতায় জনতার হাতে ধৃত ও আটক চোরাচালানী গাফফার ও জামাত নেতা কিবরিয়া এবং সন্ত্রাসী হানিফ পালায় বলে সাধারণ গ্রামবাসীর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে মাওলানা আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানায় সন্ত্রাসী ও চোরাচালানী গাফফার, কিবরিয়া ও হানিফের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। মাওলানা আনোয়ার এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে এই মাদ্রাসায় চাকুরি করছি। আমি সবচেয়ে সিনিয়র ও প্রবীণ শিক্ষক। পরিচালনা কমিটি আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আমাকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব প্রদান করেছে। আমি সকলের সহযোগিতা চাই। আর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপারের নেতৃত্বে আমার সাথে সন্ত্রাসী হানিফ ও কিবরিয়া গং যে আচরণ করেছে, আমি এর নিন্দা জানাই। আমার উপর নগ্ন হামলার বিচার চাই।

এ ব্যাপারে জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহসীন আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি ভূয়া খবর ও গুজব বলে তা উড়িয়ে দেন।

জানা যায়, আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ, প্রাতিষ্ঠানিক শৃংখলা ভঙ্গ, দায়িত্ব পালনে অবহেলা অযোগ্যতা, পরিচালনা কমিটির সাথে অশুভ ও অন্যায় আচরণ,বিশ্বাসভঙ্গ এবং মাদ্রাসার অফিসিয়াল ডকুমেন্ট ও অফিস সামগ্রী আত্মসাৎ সহ বিভিন্ন অভিযোগে সাবেক ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুল গাফফার কে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি বিগত ১৯/০৯/২০ ইং তারিখে ভারপ্রাপ্ত সুপারের পদ থেকে বহিষ্কার করেছে। পরবর্তীতে সহকারী শিক্ষকের পদ থেকেও তাকে বহিষ্কার করে কমিটি।পরিচালনা কমিটি তৎক্ষণাৎ সুপারের শূন্যপদে প্রবীণ শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মালিককে মাদ্রাসার সুপার নিয়োগ দেয়। ফলে বহিষ্কৃত আব্দুল গাফফার নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে । সে এলাকার কর্মহীন বেকার যুবক সন্ত্রাসী আব্দু্ল হানিফ ও জামায়াতের উপজেলা সহকারী সেক্রেটারি তালিকাভুক্ত চোরাচালানী গোলাম কিবরিয়া এবং জামায়াতের দলীয় পত্রিকা দৈনিক জালালাবাদের উপজেলা সংবাদদাতা বেলাল আহমদের যোগসাজশে জৈন্তাপুর মহিলা মাদ্রাসা অবৈধভাবে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালায়।জানা যায়, করোনাকালীন বন্ধের সময় ১৫ নভেম্বর রোববার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আদেশ অমান্য করে গোপনে কিছু বখাটে যুবক নিয়ে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয় হানিফ ,গাফফার ও কিবরিয়া।

তারা মাদ্রাসার তালা ভেঙ্গে বেআইনী ভাবে অফিসকক্ষে প্রবেশ করে এবং কিছু সময় অতিবাহিত করে। এই চক্র অত্যন্ত সুকৌশলে জৈন্তাপুর থানা পুলিশ কেও মিসগাইড করে।তারা মাদ্রাসায় অবস্থান করতে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে জৈন্তাপুর পুলিশ কে সহযোগীতা করতে একটি ভূয়া দরখাস্ত থানায় প্রেরণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার সকালে জৈন্তাপুর মডেল থানার সাব ইন্সপেক্টর মোফাখখারুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ মাদ্রাসায় অবস্থান নেয় এবং কমিটি কর্তৃক বহিষ্কৃত প্রাক্তন সুপার গাফফার ও বখাটে হানিফ গং কে পাহারা ও নিরাপত্তা দেয়। পুলিশের এমন ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জানা যায়, উপজেলা সদরে অবস্থিত জৈন্তাপুর মহিলা মাদ্রাসা দখলের জন্য হানিফ ও গাফফার চক্র দীর্ঘদিন থেকে অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৪ সালে এ চক্র ঐ মাদ্রাসা দখলের চেষ্টা করেছিল।

এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে তারা পালিয়ে যায়। এ বছর করোনা মহামারির সুযোগে অবৈধ চোরাচালান ব্যবসার সাথে জড়িত গাফফার ও হানিফ বাহিনী আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তারা বিভিন্ন ভাবে কমিটির সাথে সংঘর্ষ বাঁধানোর চেষ্টা করছে। জৈন্তাপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার এ বিষয়ে অবগত আছেন বলে জানা যায়। তিনি এবং নিজপাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও এলাকার মুরুব্বীদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রোববার গাফফার -হানিফ চক্র মাদ্রাসার দারোয়ান কে জিম্মি করে জোরপূর্বক ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।

সমুদয় বিষয়টি মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল মালিক ও মাদ্রাসা কমিটির সহ সভাপতি প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল খালিক এর নেতৃত্ব একটি প্রতিনিধি দল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা পারভীন কে অবগত করেন। ইউ এন ও কমিটিকে ও প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল মালিক কে নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাওয়ার মৌখিক নির্দেশনা দেন এবং ফোন করে বহিষ্কৃত সুপার আব্দুল গাফফার কে ক্যাম্পাসে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। পরদিন সোমবার (১৬ নভেম্বর) প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল মালিক যথারীতি মাদ্রাসায় যান। পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দও মাদ্রাসায় যান। কমিটির সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল খালিক ও এলাকার মুরুব্বিগণ প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল মালিক কে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিচয় করে দেন।

এমন সময় সন্ত্রাসী হানিফ, আখলাকুল আম্বিয়া, আব্দুশ শুকুর,সাংবাদিক বেলাল ও সরকারী কর্মচারী আলতাফ মাদ্রাসার অফিস কক্ষে প্রবেশ করে। তারা উত্তেজিত হয়ে কথা বলে ও মারমুখী আচরণ করে। কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম বিশৃংখলাকারী হানিফ ও আখলাকুল আম্বিয়া গংদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সংঘর্ষ সৃষ্টির বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে জানান। এ ঘটনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা পারভীনের গোচরীভূত হলে তিনি উভয়পক্ষকে মাদ্রাসায় যেতে নিষেধ করেন। এবং মাদ্রাসার এসাইনমেন্টে পরীক্ষাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য ইউ এন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও পদক্ষেপ নিবেন বলে তিনি জানান । জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মৌখিক নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সোলায়মান হোসেন ১৭ নভেম্বর মঙ্গল বার মাদ্রাসার চলমান কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়র শিক্ষককে সাময়িক ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব প্রদানের জন্য পরিচালনা কমিটির সভাপতি এডভোকেট আব্দুল আহাদ কে লিখিতভাবে অনুরোধ জানান।

এ ব্যাপারে কমিটির সভাপতি এডভোকেট আব্দুল আহাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, জৈন্তা জামেয়া ইসলামীয়া মহিলা মাদরাসার বর্তমান সুপার মাওলানা আব্দুল মালিক সাহেবের ছুটিজনিত কারণ এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মৌখিক নির্দেশনার প্রেক্ষিতে জৈন্তাপুর উপজেলা মাধ্যামিক শিক্ষা অফিসের লিখিত অনুরোধে ছাত্রীদের এসাইনমেন্ট পরীক্ষা গ্রহনের জন্য গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত উক্ত মহিলা মাদরাসার পরিচালনা কমিটির জরুরী সভায় মাদরাসার সবচেয়ে সিনিয়র শিক্ষক,২০০৭ ইং থেকে মাদরাসায় শিক্ষকের দায়িত্ব পালনকারী মাওলানা আনোয়ার হোসেন কে (বর্তমান সুপারের ছুটিকালীন সময়ে) সাময়িক দায়িত্ব পালনের জন্য ভারপ্রাপ্ত সুপার এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

বিষয়টি লিখিতভাবে আমরা চেয়ারম্যান-উপজেলা পরিষদ জৈন্তাপুর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জৈন্তাপুর, মাধ্যামিক শিক্ষা অফিসার জৈন্তাপুর ও চেয়ারম্যান ১নং নিজপাট ইউপি, জৈন্তাপুর কে অবহিত করেছি।

Development by: webnewsdesign.com