জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি

বুধবার, ১৩ জুলাই ২০২২ | ৩:৫১ অপরাহ্ণ

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপে ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি
apps

প্রতি সেকেন্ডে আলোর গতিবেগ ১ লাখ ৮৬ হাজার মাইল। সেই হিসাবে বর্তমান নক্ষত্রের যে আলো আমরা দেখি, তা কিন্তু আজকের নয়। তা আসলে ১৩০০ কোটি বছরেরও বেশি পুরোনো। যা এতদিনে আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। টেলিস্কোপে পৌঁছানোর আগে কয়েকশ কোটি বছর ধরে ভ্রমণ করেছে এ আলো। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ যে ছায়াপথের ছবি তুলেছে, তা ৪৬০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে। সেই হিসাবে যে ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়েছে তা ১৩০০ কোটি বছর আগের।

বিজ্ঞানীদের মতে, মহাজগতের বয়স ১ হাজার ৩৮০ কোটি বছর। বিজ্ঞানীদের সুবিধা হওয়ার আরও বড় কারণ হলো, উন্নত টেলিস্কোপ হওয়ায় জেমস ওয়েব উজ্জ্বল আর স্পষ্ট ছবি ক্যামেরাবন্দি করেছে।নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেন, আমরা ১ হাজার ৩০০ কোটি বছরেরও বেশি পেছনের দিকে তাকাচ্ছি। তিনি আশা প্রকাশ করে আরও বলেন, নাসা শিগগিরই আরও ছবি প্রকাশ করবে। সেগুলো প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি বছর আগের। এসব ছবি মহাবিশ্বের আনুমানিক শুরুর বিন্দুর কাছাকাছি। অর্থাৎ আমরা প্রায় শুরুতে ফিরে যাচ্ছি।বিজ্ঞানীরা ওয়েব টেলিস্কোপের তথ্যের গুণগত মান বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারছেন যে, এ ছবিতে যা দেখা যাচ্ছে এই টেলিস্কোপ তার থেকেও অনেক গভীরে গিয়ে মহাজগতের চিত্র তুলে আনতে সক্ষম। ফলে অতি শক্তিশালী এ দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে মহাশূন্যের অনেক ভেতর পর্যন্ত এখন দেখা এবং তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।

বিজ্ঞানীদের আশা পৃথিবীর মতো যেসব গ্রহের বাতাসে গ্যাস রয়েছে, একদিন হয়তো ওয়েব টেলিস্কোপ সেসব গ্রহের ওপর নজরদারি করতে সক্ষম হবে। সেটা হলে ওই সব গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে একটা ধারণা পাবার যথেষ্ট সম্ভাবনা তৈরি হবে।কয়েক দশকের অপেক্ষা শেষে দ্য জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তোলা ছবিটি দেখার সুযোগ হলো বিশ্ববাসীর। এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী ও বৃহত্তর টেলিস্কোপ।নাসা জানিয়েছে, এ যাবত বহির্বিশ্বের যত ছবি তোলা হয়েছে, তার মধ্যেই এটিই সবচেয়ে গভীর, তীক্ষ্ণ ও পরিচ্ছন্ন ইনফ্রারেড ছবি। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) মহাশূন্যের ‘এসএমএসিএস-৭২৩’ নামের ছায়াপথগুচ্ছের এই ছবি প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও একদিন আগে হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে এ ছবি উন্মুক্ত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

প্রায় ২৫ বছর ধরে চেষ্টার পর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের অর্থায়নে কয়েক হাজার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী টেলিস্কোপটি গেল বছর মহাকাশে স্থাপন করেন। কানাডীয় মহাকাশ সংস্থার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দল কাজ করেছে এ ছবি তোলা ও বিশ্লেষণে। সেই দলে লামীয়া আশরাফ মওলা নামে এক বাংলাদেশিও আছেন।লামীয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পিএইচডি গবেষণার সময় হাবল টেলিস্কোপ নিয়ে কাজ করেছি। তখন থেকেই ইচ্ছা ছিল জেমস ওয়েবে কাজ করার। সেই সুযোগও পেয়েছি।জেমস ওয়েবের ক্যামেরা বর্ণালির ইনফ্রারেড অংশে কাজ করে। যা সাদা চোখে দেখা যায় না। কিন্তু নাসার নতুন ছবির রঙ দৃশ্যমান।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের চোখে দৃশ্যমান করতে নভো দূরবিনের ছবি সবচেয়ে বড় তরঙ্গ দৈর্ঘ্যকে লাল, মাঝেরটিকে সবুজ ও সবচেয়ে ছোট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোকে নীল হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। আর তাতেই ছবিটি আমাদের জন্য দৃশ্যমান হয়েছে। ডিজিটাল মাধ্যমে করা হয়েছে এ কাজ।তিনি বলেন, ছবিতে উজ্জ্বল সাদা আলো হলো আমাদের ছায়াপথের তারা। আর দূরবর্তী গ্যালাক্সিগুলোকে এখানে যাচ্ছে লাল বা লালচে হিসেবে। সবচেয়ে কাছে যে গ্যালাক্সি, চারশ ষাট কোটি আলোকবর্ষ দূরের। আর দূরেরগুলো প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি আলোকবর্ষের দূরের।জেমস ওয়েবের জন্য দীর্ঘ ২৫ বছরের অপেক্ষা সফল হয়েছে। এতদিন বিশ্বকে যেভাবে দেখা হতো, তা চিরতরে বদলে গেছে। মহাজাগতিক ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়ে নজর দেবে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ।এ ছবিতে কিছু দূরবর্তী ছায়াপথ ও তারকাও উঠে এসেছে, যা আগে কখনো দেখা যায়নি।

Development by: webnewsdesign.com