জাবি ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, আটক ২

সোমবার, ১৫ মে ২০২৩ | ১:০৩ অপরাহ্ণ

জাবি ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, আটক ২
জাবি ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ, আটক ২
apps

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। পরে অভিযুক্ত দুজনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।রোববার (১৪ মে) দিবাগত রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ইসলামনগর এলাকার একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্তরা হলেন মো. রাকিব হোসেন (২৮) ও মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ (২৮)। রাকিবের বাড়ি ঢাকায়। তার বাবার নাম মো. শাজাহান মিয়া। আর মেজবাহ উদ্দিনের তার বাড়ি ঝালকাঠি জেলায়। তার বাবার নাম মো. মোফাজ্জেল হোসেন খান।

প্রাথমিকভাবে অভিযুক্তরা ধর্ষণচেষ্টার কথা স্বীকার করেছেন। ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি ইসলামনগরের একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।

জানা যায়, ৪২ ব্যাচের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মিশুর সঙ্গে গত দুইদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসেন রাকিব ও মেজবাহ। এ সময় মিশুর মাধ্যমে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অন্যান্যদের সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়। সারাদিনের ঘোরাঘুরি শেষে শনিবার রাতে ভুক্তভোগীর বাসায় অবস্থান করেন রাকিব, মেজবাহ ও মিশু।

পরদিন সকালে মিশু চাকরি সূত্রে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। তবে রাকিব ও মেজবাহ ক্যাম্পাসেই অবস্থান করেন। রোববার রাতে পুনরায় ঐ ছাত্রীর বাসায় অবস্থান করতে যান দুই অভিযুক্ত। রাতে রান্নাবান্না শেষে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্রাম নিতে গেলে ঘুমন্ত অবস্থায় রাকিব তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বুঝতে পেরে চিৎকার করে আশেপাশে থাকা ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের জড়ো করেন। পরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দুই অভিযুক্তকে আটক করে ক্যাম্পাসের ট্রান্সপোর্ট এলাকায় নিয়ে এসে মারধর ও জিজ্ঞাসাবাদ করে আশুলিয়া থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন।

ভুক্তভোগী বলেন, আমি একা থাকতে ভয় পাই। ক্যাম্পাসে তো একটা বাসা নিলে অনেকেই আসে। মিশু ভাই আমার পরিচিত ও অভিযুক্তদের সঙ্গে আমার সখ্যতা হওয়ায় আমার বাসায় থাকার জায়গা দেই। পরদিন রোববার রাতেও তারা আমার বাসায় যান এবং রাতের খাবারের জন্য রান্না করি। পরে আমি অসুস্থ অনুভব করায় গেস্টরুমে ঘুমিয়ে যাই।

তিনি আরও বলেন, হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি অভিযুক্ত রাকিবের জামা-কাপড় খোলা এবং আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করছে। আমি তখন দৌড়ে আমার বেডরুমে গিয়ে দেখি মেজবাহ বসে আছে এবং সে আমাকে দেখে চমকে উঠে। পরে আমি সঙ্গে সঙ্গে তাদের বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলি এবং ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের কাছে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাকিব হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী ঘুমাচ্ছিলেন। এ সময় আমি তার শরীরে হাত দিই। আমার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল। আমি দরজা বন্ধ করে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছি।

আরেক অভিযুক্ত মেজবাহ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভুক্তভোগী বিছানায় ঘুমাচ্ছিলেন আর রাকিব আধা শোয়া অবস্থায় ছিলেন। আমার ক্ষুধা লাগায় খাবার খেতে ডিম ভাজতে যাই। ডিম ভেজে ফিরে দরজা বন্ধ দেখতে পাই। দরজা বন্ধ পেয়ে আমি চিন্তিত হয়ে যাই এবং পাশের রুমে গিয়ে বসি। এ সময় ভুক্তভোগী চিৎকার করতে করতে রুমের বাইরে বেরিয়ে আসে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৪২ ব্যাচের সাবেক ছাত্র নাইমুল আলম মিশু বলেন, মেজবাহ আমার কলেজের বন্ধু। রাকিব তার বন্ধু। তারা ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসে ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে পরিচিত হয়। শনিবার রাতে তারা ভুক্তভোগীর বাসায় অবস্থান করতে গেলে আমাকেও সেখানে যেতে বলে ভুক্তভোগী। দু’জন নতুন অতিথি তার বাসায় অবস্থান করছে, কি না কি হয় এই ভেবে আমিও সেই রাতে ভুক্তভোগীর বাসায় অবস্থান করি। পরদিন সকালে আমি অফিস করতে চলে আসি। তবে তারা যে পুনরায় ভুক্তভোগীর বাসায় অবস্থান করতে গেছে এটি আমি জানতাম না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান সুদীপ্ত শাহীন বলেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ঘটনা। ঘটনাটি ঘটেছে ইসলামনগর এলাকায় একটি বাসায়। তাই এ বিষয়ে আমাদের কথা বলার কিছু নেই।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সহকারী প্রক্টর মহিবুর রৌফ বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমরা এসেছিলাম। ঘটনাটি ঘটেছে ইসলামনগর গ্রামে। যেহেতু এটা ক্যাম্পাসের মধ্যে ঘটেনি তাই আমরা আশুলিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি।

আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক সোহেল রানা খন্দকার বলেন, ৯৯৯ এ খবর পেয়ে আমরা ক্যাম্পাসে এসেছি। অভিযুক্তদের আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Development by: webnewsdesign.com