জমে উঠেছে রাজশাহীর আমের বাজার বানেশ্বর

বুধবার, ৩১ মে ২০২৩ | ৫:৩০ অপরাহ্ণ

জমে উঠেছে রাজশাহীর আমের বাজার বানেশ্বর
জমে উঠেছে রাজশাহীর আমের বাজার বানেশ্বর
apps

ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে জমে উঠেছে রাজশাহীর আমের বাজার। প্রতিদিনই ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার গাছ থেকে আম নামিয়ে বাজারে নিয়ে আসা হচ্ছে। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে মৌসুমি ফলটির সরবরাহ বেড়েছে হাট-বাজারে। তবে বৃষ্টি কম হওয়ায় তীব্র খরার কবলে পড়েছে রাজশাহীর আম।

বুধবার (৩১ মে) সকালে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের বাজার বানেশ্বর ঘুরে দেখা যায়, গোপালভোগ আম ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাত ১৬০০ থেকে ১৮০০, লক্ষণভোগ বা লখনা ৮০০ থেকে ৯০০, রানি পছন্দ ৯০০ থেকে ১৪০০ ও গুটি জাতের আম ৯০০ থেকে ১৫০০ টাকা আকার ভেদে প্রতি মণ কেনাবেচা হচ্ছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হচ্ছে আরও বেশি। এদিকে বাড়তি দাম নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন সাধারণ ক্রেতা ও ভোক্তারা। মুনাফায় আছেন মধ্যস্বত্বভোগী, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা।

আম ক্রেতা সামিউল ইসলাম বলেন, গাছ থেকে কম দামে আম কিনে আমাদের কাছ থেকে বেশি দামে বিক্রি করছে। এ ছাড়াও বানেশ্বরের তুলনায় রাজশাহীর অন্য বাজারে আমের দাম একটু বেশি নেওয়া হয়। বানেশ্বর বাজারের বিক্রেতা মাইনুল ইসলাম জানান, আগের চেয়ে কেনাবেচা জমজমাট হয়েছে। বাজারে সরবরাহ অনেক বেড়েছে। তবে গোলাপভোগ আম শেষের দিকে। কাঁচা ফলের বাজার একেক দিন একেক রকম হয়।

পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটের ব্যবসায়ী শামীম বলেন, আমের দাম প্রতিদিনই বাড়ে। সাধারণত জাত ভেদে আম ওঠার পর সেটি শেষ হওয়া হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে মণ প্রতি ২০০ টাকা করে বাড়ে। আর মৌসুমের শেষ হয়ে এলে সরবরাহ কমতে থাকে। তখন দুই দিন পর পর এক লাফে মণ প্রতি ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ে। তাই আমের দাম এখন আর কমবে না। বাড়তেই থাকবে।

রাজশাহী মহানগরীর শাল বাগান এলাকার আম চাষি ও ব্যবসায়ী মোশরারফ হোসেন জানান, বানেশ্বর বাজারে সরবরাহ বেশি থাকে। তাই দাম সেখানে একটু কম হয়। তবে খুব বেশি ব্যবধান হয় না।রাজশাহী জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়েরও অনেক পরে বাগান থেকে সবাই আম নামিয়েছে। তাই পর্যায়ক্রমে বাজারে আসছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন জানান, এবার রাজশাহীতে দেড় হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্য হবে বলে আশা করছে। ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯৮৬টি আম গাছ আছে। জেলায় ৯৫ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। গতবার ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল। এবার বাগান বেড়েছে এক হাজার ৬৩ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি ১৩ দশমিক ২০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে জেলায় এ বছর মোট দুই লাখ ৫৮ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে। তিনি আরো জানান, এবার খুবই ভালো ফলন আছে। গত বছর আমের মণ প্রতি তিন হাজার ২০০ থেকে চার হাজার টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। এবারও চাষিরা ভালো দাম পাবে এমনটাই আশা করছেন।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে প্রতি বছরই তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এবারও সংশ্লিষ্টদের মতামতের ভিত্তিতে তারিখ ঠিক করা হয়েছে। এর আগে যদি কোনও মালিকের আম পেকে যায়, তাহলে তিনি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার থেকে প্রত্যয়নপত্র নিয়ে গাছ থেকে আম নামিয়ে বাজারজাত করতে পারবেন।উল্লেখ্য, বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত মনিটরিং সভায় ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৪ মে) থেকে গুটি আম বাজারজাত করা হচ্ছে। গোপালভোগ ১৫ মে, লক্ষণভোগ ও রানি পছন্দ ২০ মে, হিমসাগর ২৫ মে, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি, ১০ জুন আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি-৪, ১০ জুলাই থেকে গৌড়মতি ও ২০ আগস্ট ইলামতি আম বাজারজাত শুরু হবে। আর কাটিমন ও বারি-১১ সারা বছরই বাজারজাত করা যাবে বলে জানানো হয়।

Development by: webnewsdesign.com