চোখের প্রেশার ও গ্লুকোমার আধুনিক জটিল রোগ চিকিৎসা

সোমবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৩ | ১২:১৫ অপরাহ্ণ

চোখের প্রেশার ও গ্লুকোমার আধুনিক জটিল রোগ চিকিৎসা
চোখের প্রেশার ও গ্লুকোমার আধুনিক জটিল রোগ চিকিৎসা
apps

অধ্যাপক ডা. ইফতেখার মো. মুনির
গ্লুকোমা চোখের খুব জটিল রোগ। এ রোগে চোখের অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্লুকোমার হওয়ার প্রধান কারণ হলো চোখের ভেতরে চাপ বেড়ে যাওয়া।যাদের হয় : গ্লুকোমা যে কোনো বয়সী মানুষের হতে পারে। তবে বয়স্ক লোকের এ রোগ বেশি হয়। গ্লুকোমা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা না পরলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা থাকে। গ্লুকোমায় যদি কারও দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায়, তা পুনরুদ্ধার করা যায় না। তাই প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধ উত্তম। মানুষ তিন ধরনের গ্লুকোমায় আক্রান্ত হতে পারে। এর একটি দীর্ঘস্থায়ী গ্লুকোমা। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির চোখে ধীরে ধীরে তরল নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। এতে ড্রেনেজ কোণ খোলা থাকে। এটি চোখের ভেতরে চাপ সৃষ্টি করে। দ্বিতীয় হলো অ্যাঙ্গেল ক্লোজার গ্লুকোমা। এতে চোখের ভেতরে চাপ বেড়ে যায়। কারণ সরু নিষ্কাশন কোণের মাধ্যমে চোখের তরল ঠিকভাবে সঞ্চালন করতে পারে না। ফলে আকস্মিক চাপ বাড়ে। কয়েক সেকেন্ডর মধ্যে দৃষ্টিশক্তি মারাত্মকভাবে কমে যায়। একে বলে একিউট অ্যাঙ্গেল ক্লোজার অ্যাটাক। এটি হলো তৃতীয় ধাপ। জন্মগত বা শৈশবেও কারও গ্লুকোমা হতে পারে। গর্ভাবস্থায় ড্রেনেজ সিস্টেমের ত্রুটিতে ট্র্যাবেকুলার সিস্টেম অবরুদ্ধ হয়ে চোখ বা শরীরে অন্য রোগ হতে পারে।

যারা ঝুঁকিতে : পরিবারের কেউ গ্লুকোমায় আক্রান্ত হয়েছিল, চোখে কখনো আঘাত পেয়েছেন, চোখের ত্রুটিপূর্ণ অস্ত্রোপচার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, বার্ধক্য, অপটিক স্নায়ুতে রক্ত প্রবাহ কমে গেলে, নির্দিষ্ট চোখের ড্রপের দীর্ঘদিন ব্যবহার হলে ঝুঁকি বাড়ে।

উপসর্গ : গ্লুকোমার প্রাথমিক লক্ষণ সেভাবে প্রকাশ পায় না। তবু কিছু লক্ষণ দেখে গ্লুকোমায় আক্রান্ত কিনা, বোঝা যায়। বমি বমি ভাব, চোখ, মাথা ও কপালে ব্যথা, আলোয় অসহিষ্ণুতা বোধ, চোখের পাতা জোর করে বন্ধ করা।

চিকিৎসা : গ্লুকোমা সঠিক চিকিৎসা না করলে চোখ পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। একবার দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে গেলে তা আর ফেরানো যায় না। তাই প্রথম অবস্থায় ধরা পরলে রোগের অগ্রগতি রোধ করা যায়। গ্লুকোমার চিকিৎসা নির্ভর করে এর ধরন ও তীব্রতার ওপর। গ্লুকোমা নিয়ন্ত্রণ করতে ডাক্তাররা চোখের ড্রপ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। সাধারণত গ্লুকোমা রোগে চোখে ব্যথা হয় না, তবে চোখের ড্রপের ব্যাপারে মানুষ একটু অসতর্ক থাকে। চোখের ড্রপ চোখের চাপ নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষতি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। পরিস্থিতি গুরুতর হলে লেজার অস্ত্রপচার, ফিল্টারিং সার্জারি, সাইক্লোফোটোকোগুলেশন (সিপিসি), ড্রেনেজ ইমপ্লান্ট সার্জারি, নিষ্কাশন নল, অ্যাঙ্গেল-ক্লোজার গ্লুকোমা হলে ডাক্তার লেজার পেরিফেরাল ইরিডোটমি পদ্ধতি ব্যবহার করে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

প্রতিকার : গ্লুকোমার পারিবারিক ইতিহাস চোখের ব্যাপারে সচেতন থাকুন। কমপক্ষে ৪৫ মিনিটের জন্য নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়াম করুন। গ্লুকোমা ধরা পড়লে, অস্ত্রোপচার এড়াতে সতর্কতার সঙ্গে নির্ধারিত ওষুধ গ্রহণ করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এ ব্যাপারে সচেতন থাকলে ভালো ও সুস্থ থাকবেন।

লেখক : অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

চেম্বার : বাংলাদেশ আই হসপিটাল, মালিবাগ শাখা, ঢাকা

Development by: webnewsdesign.com