চান্দিনায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর ২০২২ | ১২:০৩ অপরাহ্ণ

চান্দিনায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
apps

কুমিল্লার চান্দিনায় বৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর পাশাপাশি একাধিক অনুমোদনহীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই চলছে অনেক ডায়গনষ্টিক সেন্টার, প্যাথলজি সেন্টার ও ডেন্টাল চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। অনেক প্রতিষ্ঠানে নেই দক্ষ চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি।

প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব চিকিৎসক, নার্স, প্যাথলজিস্ট বা টেকনিশিয়ানও নেই, অথচ সাইনবোর্ড লাগিয়ে সাধারণ রোগীদের জীবন নিয়ে করছে ব্যবসা। ফলে চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। চিকিৎসাসেবার নামে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে অর্থ। সম্প্রতি অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে দেশজুড়ে অভিযান চালানো হয়েছে। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে কুমিল্লার চান্দিনায়, ‘দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত কোন বড় ধরণের অভিযান পরিচালিত হয়নি। যার ফলে এসব অবৈধ ও মাননিয়ন্ত্রণহীন ডায়াগনস্টিক/ ক্লিনিক সেন্টারের উদ্যোক্তারা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এই কারণেই সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে চিকিৎসা সেবা আর সেই চাহিদা পূরণ করতে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে ওই সকল প্রাইভেট ক্লিনিক (বেসরকারি হাসপাতাল) ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। প্রাইভেট কিছু ক্লিনিকের সেবার মান ঠিক থাকলেও বেশিরভাগ ক্লিনিকের চিকিৎসা সেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক মেডিকেল সেন্টার। নামমাত্র আবেদন দিয়ে পরিসংখ্যানের বাহিরেও ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।

এইসকল হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র পরিচালনার জন্য প্রায় ২১টি ভিন্ন ভিন্ন কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স বা ছাড়পত্রের প্রয়োজন হয়। নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে এসব লাইসেন্স যেমন পেতে হয়, তেমনি নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলে লাইসেন্সগুলো নবায়নও করতে হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ছাড়াও আর যেসব লাইসেন্স নিতে হয় তার মধ্যে রয়েছে-ট্রেড, ফায়ার, ফার্মেসি পরিচালনা, পরিবেশ, জেনারেটর, ব্লাডব্যাংক, বয়লার, ক্যাফেটেরিয়া ও লন্ড্রি, কমর্শিয়াল, বিএসটিআই (বেকারি), ট্রেডমার্ক (বেকারি), গভীর নলকূপ, আণবিক শক্তি কমিশন, আরসিও, মেডিকেল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ও নারকোটিকস লাইসেন্স, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এনওসি সহ ইত্যাদি কাগজ পত্রের প্রয়োজন হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে উপজেলার নবাবপুর দঃ বাজার ফজলুল হক মজুমদার মার্কেট) মা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আলম মিলিটারি মার্কেট (২য় তলা) মা ও শিশু মেডিকেল সার্ভিসেস ও কুটুম্বপুর ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে মদিনা মেডিকেল সেন্টার সহ চান্দিনা, মাধাইয়া, নবাবপুর বাজারের বেশ কয়েকটি ওইসব প্রতিষ্ঠানে নোংরা পরিবেশে চলছে চিকিৎসা সেবা, দেখে কোনোভাবেই চিকিৎসাকেন্দ্র বলা যায় না, বলা যেতে পারে মানুষ মারার ব্যবস্থাকেন্দ্র। সেখানে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে কথিত চিকিৎসাসেবা। নেই সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী অবকাঠামো। সাইনবোর্ডে সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত লেখা থাকলেও তার কোন বৈধকাগজপত্র দেখাতে পারেননি তারা।

এসকল প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ওই সেন্টারে দিচ্ছেন আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা। এক্সরে মেশিন এমন জায়গায় রাখা হয়েছে, নেই ন্যূনতম সুরক্ষা ব্যবস্থা। এতে এক্সরে, প্যাথলজি করতে আসা রোগী, যিনি এক্সরে করাচ্ছেন তিনি এবং আশপাশের মানুষ ভয়াবহ রেডিয়েশনের শিকার হচ্ছেন। রি-এজেন্টের পাশে ময়লা-আবর্জনা পড়ে আছে । এসব থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় টেকা যায় না। এ অবস্থার মধ্যেই এক্সরে, প্যাথলজি রোগীদের চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। অথচ এর পরিবেশ এতটাই নোংরা যে এখানে এক মিনিট টিকে থাকা কষ্টকর। নিরুপায় হয়ে রোগী ও তাঁর স্বজনেরা কোনোরকমে এখানে সময় পার করছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক ক্লিনিকে আধুনিক যন্ত্রপাতি, দক্ষ প্যাথলজিস্ট ও সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে অধিকাংশ ক্লিনিকেই অদক্ষ প্যাথলজিস্ট ও ভুয়া চিকিৎসক, অনভিজ্ঞ নার্স ও অদক্ষ আয়া দিয়ে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা কার্যক্রম। অর্থাৎ চিকিৎসার নামে মরণব্যবস্থা চালু রয়েছে। জানা গেছে এধরনের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো ঘিরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।

এগুলোর খোঁজখবর না নিয়ে অর্থের বিনিময়ে অনুমোদন দেওয়া হয়ে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে কোনো ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে চিকিৎসা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে শতাধিকেরও বেশি। এর মধ্যে অনুমোদন আছে হাতেগোনা কয়েকটির। আবার কয়েকটির লাইসেন্স থাকলেও তার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স পর্যন্ত নেই।

এবিষয়ে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোঃ আরিফুর রহমান দৈনিক মুক্তখবর কে জানান, যেসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমোদন নেই সেগুলোর বিরুদ্ধে মঙ্গলবার অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং কাগজপত্র ঠিক না থাকলে ওইসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে।

Development by: webnewsdesign.com