চলতি রোপা আমন মৌসুমে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন বুনছেন কাজিপুরের কৃষকরা

বুধবার, ১২ অক্টোবর ২০২২ | ৫:৫৩ অপরাহ্ণ

চলতি রোপা আমন মৌসুমে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন বুনছেন কাজিপুরের কৃষকরা
apps

সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে উপজেলায় চলতি রোপা আমন মৌসুমে যেন কোনভাবেই সারের কৃত্রিম সংকট ও কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নিতে না পারে সে বিষয়ে সর্তকতার সাথে মাঠে নেমেছেন এবং কৃষকদের নিবিগ্নে সার বিতরণ নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিস। বরাদ্দকৃত রাসায়নিক সার কৃষকেরা যাতে সঠিক সময়ে ন্যায্য দামে সার পায় সেই লক্ষ্যে মাঠে কঠোরভাবে তদারকি ও দেখভাল করছেন কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রেজাউল করিম এর নেতৃত্বে একটি টিম।যার কারণে কৃষকদের ফসল উৎপাদন কর্মকান্ড করতে কোন সমস্যা হয়নি।

উপজেলা কৃষি থেকে জানা যায়, কাজিপুরে ১২ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় রোপা আমন মৌসুমে ধান রোপনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১০৭১০ হেক্টর জমিতে কিন্তু লক্ষমাত্রা অর্জিত ১১১০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ হয়েছে।যেখানে হাইব্রিড ১০০ হেঃ,উপশি ৮৫০০ হেঃ এবং স্থানীয় জাতের ২৫০০ হেঃ জমিতে ধান চাষাবাদ হয়েছে। ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে প্রণোদনা সহায়তায় আওতায় ৮০০ জন কৃষক / (বিঘা জমি) কৃষকের মাঝে ধানের বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে কৃষি পূর্ণবাসন কর্মসূচির আওতায় ১৪০০ জন কৃষক /( বিঘা জমি) মাঝে বিনামূল্যে ধানের (নাবি) বীজ ও ডিএপি, এম ও পি সার বিতরণ করা হয়েছে।

চলতি গত তিন মাসে কাজিপুরে রাসায়নিক সার বরাদ্দের পরিমাণ ইউরিয়া ১৭২৮ মেট্রিকটন, যা ইতোমধ্যে সুস্ঠভাবে বিতরণ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের এমন তদারকিতে অনেকটা খুশি কৃষকেরা। উপজেলার কৃষকরা এবার রোপা আমন মৌসুমে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন বুনছেন। উপজেলার যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ের কাজিপুর সদর ইউনিয়ন, পৌরসভা,মাইজবাড়ি ইউনিয়ন, শুভগাছা ইউনিয়ন, গান্ধাইল ইউনিয়ন, চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়ন, সোনামুখি ইউনিয়নের বিস্তৃত এলাকায় রোপা আমন ধানের সবুজ সমারোহ পরিলক্ষিত হচ্ছে।

মাঠ ভরা ফসল দেখে কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ছোঁয়া। উপজেলায় চলতি রোপা আমন মৌসুমে এবার ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। চারদিকে এখন সবুজের সমারোহ। পোকামাকড় ছাড়াই বেড়ে ওঠা সোনালি ধানে ভরে গেছে মাঠ। দিগন্ত জোড়া সবুজ ফসলের মাঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বিকশিত করে তুলেছে। মাঠ ভরা ফসল দেখে কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের ছোঁয়া। যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটে তাহলে এবার আমনের বাম্পার ফলনের আশা করছেন এই কাজিপুরের কৃষকরা।

আমন মৌসুমের শুরুতেই বৃষ্টি না হলেও পরবর্তীতে বৃষ্টি হওয়ায় মাঠের ফলন দেখে হতাশ কৃষককুল অনেকটা আশান্বিত। ইতিমধ্যেই জমির ধান গামর হয়ে ধানের শীষ বের হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ধানের রোগ মোকাবেলায় সতর্কতার সাথে জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করছে কৃষকরা।

উপজেলার মাইজবাড়ি ইউনিয়নের পাইকরতলী গ্রামের কৃষক শাহজাহান, সিদ্দিক হোসেন, জাহাঙ্গীর ভুঁইয়া সহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই এবার আমন ধানে পোকামাকড়ের আক্রমন খুব কম, ও আবহাওয়া ভাল থাকায় সময় মত বৃষ্টিপাত না হলেও আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করা যাচ্ছে।কৃষি অফিসের পরামর্শ নিয়ে রোপনকৃত ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। আশা করছি কোন দুর্যোগ না হলে ভালো ফলন পাবো।সোনামুখি ইউনিয়নের পরানপুর গ্রামের কৃষক আলহাজ্ব এমদাদুল হক ভূট্র বলেন, আমি ৮ বিঘা জমিতে ধান চাষাবাদ করেছি প্রথমে বৃষ্টি না হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হলে ও পরবর্তীতে কোন সমস্যা হয় নি, উৎপাদন ভালো হয়েছে, দুর্যোগ সৃষ্টি না হলে ফলন ভালো হওয়ার আশা করছি।

চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের কবিহার গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ জানান , বুক ভরা আশা নিয়ে দিনভর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষি অফিসের সহযোগিতা ও পরামর্শে মাঠে কাজ করে যাচ্ছি, যদিও এবার পোকামাকড়ের আক্রমন কম, আমন ধান গত বছরের চেয়ে এবার ভাল হয়েছে। তবে আশা করা যাচ্ছে যদি কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ না আসে তবে এবার আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই উপজেলার কৃষকরা বিপুল পরিমান ফসল উৎপাদন করে অত্র এলাকার খাদ্যের চাহিদা পূরণ করেও উৎপাদিত ধান কাজিপুরের বাইরে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে থাকে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রেজাউল করিম বলেন, আমন ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষক ভাইদের প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রণোদনা সহায়তা প্রদান, বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করে আসছি। এবং কৃষকরা নিয়মিত কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ রাখছে এবং আমাদের পরামর্শমত ধান চাষ করেছে।সর্বোপরি কৃষকের মাঝে আমরা সুষ্ঠুভাবে সার বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছি। আরও বলেন, আবহাওয়া কিছুটা প্রতিকূলে থাকলেও রোগ-বালাই পোকামাকড় তেমন একটা নেই। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে এতে কৃষকরা অনেকটা লাভবান হবে।

মাইজবাড়ি ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহীন আলম, গান্ধাইল ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন এবং চরগিরিস ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত মাঠে যাচ্ছি, ধানের আবাদের সার্বিক অবস্থা কেমন তা বাস্তবে দেখে পরামর্শ দিচ্ছি এবং আমাদের কৃষক ভাইদের কীটনাশক প্রয়োগ সহ সকল ধরনের পরামর্শ প্রদান করে আসছি।বড় কোন সমস্যা হলে উপজেলা কৃষি অফিসার রেজাউল করিম মহোদয় এর সাথে পরামর্শ করে সমাধান দিয়ে যাচ্ছি। প্রাকৃতিক কোন বিপর্যায় না হলে কৃষকরা তাদের কাংখিত ধান ঘরে তুলতে পারবে।

Development by: webnewsdesign.com