চরবালিথায় সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩১ ভুমিহীন পরিবার সম্বল হারাতে বসেছে

বুধবার, ২৫ নভেম্বর ২০২০ | ৭:৪৪ অপরাহ্ণ

চরবালিথায় সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে ৩১ ভুমিহীন পরিবার সম্বল হারাতে বসেছে
apps

সাতক্ষীরার দেবহাটায় ভুমিহীনদের বন্দোবস্তকৃত ও বন্দোবস্তের প্রস্তাবনা প্রেরিত জমিতে সরকারী ‘জমি নেই, ঘর নেই’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পথে বসতে চলেছে ৩১টি ভুমিহীন পরিবার।

ভুমিদস্যুদের কবল থেকে বহু হামলা, মামলা খেয়ে সাতক্ষীরা সদর ও দেবহাটার সীমান্তবর্তী চরবালিথা গ্রামের ওই জমি পুনরুদ্ধারের পর প্রায় ৩০ বছর যাবৎ সেখানে বসবাস, ভোগদখল করে আসলেও সম্প্রতি সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে উচ্ছেদের মুখে পড়েছেন অসহায় খেটে খাওয়া ভুমিহীন পরিবার গুলো।

এর আগে বালিথা মৌজার সাবেক এসএ ১০৪ এবং বর্তমান ১৮ দাগে ২ একর ৪০ শতক এবং সাবেক এসএ ১০৪ এবং বর্তমান ২৫ দাগে ৫ একর ৫০ শতক খাল ভরাটি জমি সেখানে বসবাসরত এসকল ৩১ ভূমিহীন পরিবারের মাঝে একসনা বন্দোবস্ত দেয় সরকার। পরবর্তীতে ভুমিহীন পরিবার গুলো সরকারি সকল নিয়ম মেনে সরকারের কাছে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চাইলে চলতি বছরেই বিষয়টি উপজেলা কৃষি সরকারি খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটির সভায় উত্থাপন পরবর্তী আলোচনা ও যাচাই বাছাই শেষে বসবাসরত এবং ভোগদখলীয় ভুমিহীনদের মাঝে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়ার জন্য দুই দফায় ২২ ভুমিহীন পরিবারের নামের প্রস্তাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রেরণ করেন সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া আফরীন।

প্রস্তাবনা প্রেরণের কিছু দিনের মধ্যে সাজিয়া আফরীনের বদলী ও নতুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগ দেন তাছলিমা আক্তার। এরইমধ্যে চলে আসে সরকারি জমি নেই, ঘর নেই প্রকল্প। যা বাস্তবায়নের জন্য দেখা দেয় সরকারি খাসজমির খোঁজ এবং পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা।

ভুমিহীন আব্দুর রাজ্জাক (৬০), আহাদ আলী (৫৭), মাহমুদ সরদার (৫৮), ইউনুস আলী (৬২), আবুল হোসেন (৭৫), নুরুন্নাহার (৪৫), মনোয়ারা (৫০) সহ ভুক্তভোগীরা জানান, সাজিয়া আফরীনের বদলীর পর ওই সরকারি জমি তাদেরকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দেয়ার প্রক্রিয়া মুখ থুবড়ে পড়েছে। সেখানে ভোগদখলে থাকা ভুমিহীনদের অধিকাংশরাই কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুল হকের সমর্থক হওয়ায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুল ইসলাম তাদের ওই জমিতে অন্যদের পূর্নবাসন করাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি জমি নেই, ঘর নেই প্রকল্পের জন্য যখনই সদ্য যোগদানকৃত উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরকারি খাস জমি খোঁজাখুজি শুরু করেন, ঠিক তখনই সুযোগ বুঝে ভারপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুল ইসলাম ওই সকল ভুমিহীনদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রক্রিয়া চলমান খাস জমি কেড়ে নেয়ার পরামর্শ নির্বাহী অফিসারকে দিয়ে তাদেরকে উচ্ছেদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবার গুলোর।

এমনকি একই এলাকায় পূর্নবাসনযোগ্য বিকল্প পতিত সরকারি খাস জমি থাকা স্বত্ত্বেও সেখানে জমি নেই, ঘর নেই প্রকল্পের আওতায় পূর্নবাসনের উদ্যোগ না নিয়ে বরং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রক্রিয়া চলমান ভুমিহীনদের বসবাসরত ও ভোগদখলীয় জমি থেকে উচ্ছেদের উদ্যোগ কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। একইসাথে প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সাথে লড়াই করে টিকে থাকা নিম্নশ্রেণির এসব ভুমিহীন পরিবারের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে না নিয়ে বিকল্প উপায় হিসেবে অন্য কোনো সরকারি খাস জমি খুঁজে বের করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার ও সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের কাছে দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

ভুমিহীনদের উচ্ছেদ প্রচেষ্টার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুল ইসলাম বলেন, সরকারি ওই জমিতে বসবাসরত ভুমিহীনরা সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থক এটা সত্যি, কিন্তু সেজন্য আমি তাদেরকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছিনা। আমি ইউএনও স্যারের সাথে কয়েকবার জমি দেখতে সেখানে গিয়েছিলাম মাত্র।

Development by: webnewsdesign.com