অধ্যাপক ডা. ইফতেখার মো. মুনির
কয়েকটি অসুখ একত্রে মিলিত হয়ে চোখে গ্লুকোমার সৃষ্টি করে। এতে চোখের অপটিক নার্ভ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর এ কারণে দেখতে পাওয়ার শক্তিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়। পরিণামে ব্যক্তিটিকে বরণ করতে হয় অন্ধত্ব। তবে শুরুতেই রোগটি ধরে ফেলা সম্ভব হলে এবং ভালো চিকিৎসা পেলে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। গ্লুকোমার প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো উপসর্গ থাকে না। যখন উপসর্গ বোঝা যায়, তখন দেখা যায়, রোগটি অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। এটি বেড়ে গেলে দৃষ্টিশক্তির যে ক্ষতি হয়ে যায়, চিকিৎসায় তাকে আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না।
কারণ : স্বাভাবিক চোখে অ্যাকুয়াস হিউমার নামক এক ধরনের তরল পদার্থ থাকে, যা উৎপন্ন হওয়ার পর খুব স্বাভাবিক নিয়মে চোখের অভ্যন্তরে জমা হয়ে থাকে এবং প্রয়োজন অনুসারে বেরিয়ে আসে। এই তরল পদার্থ অক্ষিগোলক মসৃণ, সুরক্ষিত এবং আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে। যখন এই তরল নিষ্কাশিত হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়, তখন চোখের চাপ বেড়ে যায়। ক্রনিক গ্লুকোমার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অ্যাকুয়াস হিউমার বের হওয়ার ছোট ছোট চ্যানেলগুলোয় আবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তরলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে চোখের চাপও বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় অপটিক নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা দেখা দেয়। কেন এই চ্যানেলগুলোয় আবদ্ধতা দেখা যায়, তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। কিন্তু যাদের বংশগতভাবে এ রোগের সমস্যা রয়েছে, আগে চোখের কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করতে হয়েছে এবং যাদের বয়স ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে, তাদের গ্লুকোমা হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
লক্ষণ : চোখে কম দেখা, চোখে ব্যথা হওয়া, দৃষ্টি ঘোলাটে হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখের অভ্যন্তরে কোনো কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করা, অন্ধত্ব বা চোখে না দেখা, চোখ থেকে সাদা বর্ণের তরল জাতীয় পদার্থ বের হওয়া, ডাবল ভিশন, চোখের পাতায় পিণ্ড বা চাকা হওয়া ইত্যাদি। এ রোগ নিরাময়ে চোখের ড্রপের সাহায্যে চিকিৎসা দেওয়া যায়। তবে এটি সারা জীবন চালিয়ে যেতে হয়। এর দুটি প্রতিবন্ধকতা হলো সারা জীবনের জন্য ব্যয়নির্বাহ এবং ওষুধ দিতে ভুলে যাওয়া। এ ছাড়া অপারেশনের মতো স্থায়ী পদ্ধতির মাধ্যমেও চিকিৎসা নেওয়া যায়। চোখের প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওষুধের চেয়ে এ পদ্ধতি বেশি কার্যকর। কিছু কিছু ক্ষেত্রে লেজারের সাহায্যেও চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। গ্লুকোমার অন্ধত্ব থেকে মুক্তি পেতে রোগ শনাক্তকরণ জরুরি। শনাক্তের পর উচিত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা এবং চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের পর্যবেক্ষণে থেকে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া।
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইন্সটিটিউট এবং গ্লুুকোমা বিশেষজ্ঞ
বাংলাদেশ আই হসপিটাল, শান্তিনগর, ঢাকা
Development by: webnewsdesign.com