হলুদের চাদরে ঢাকা রাজশাহীর গোদাগাড়ীর ফসলের মাঠগুলো। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সরিষা ফুলের হলুদ আর হলুদ। সরিষা ক্ষেতের পাশে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মৌচাষিরা। এক হাত বৌল্লা বার হাত শিং উড়ে যায় বৌল্লা ধা তিং তিং। সে বৌল্লা দিয়ে সুস্বাদু মধু সংগ্রহে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌ চাষীরা।
এ মধু চাষ লাভজনক হওয়ায় আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় চাষিদের। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও স্থানীয় মৌ চাষীদের পাশাপাশি পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে মৌ-খামারি গোদাগাড়ীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরিষা ফুল থেকে বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহ করছে। তাদের সংগৃহীত এই রাজশাহী, নাটোর, বগুড়া পাবনা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করছেন।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, গোদাগাড়ী উপজেলায় এবছর ৭ হাজর ২শ ১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। বারিত সরিষা-১৪ জাত ২ হাজার ৮শ ৪৫ হেক্টর, বারি সরিষা-১৫ জাত ২ হাজার ৬শ ৯০ হেক্টর, বারি সরিষা-১৭ জাত ২শ ৩৫ হেক্টর, এছাড়া বিনা সরিষা সহ স্থানীয় কিছু জাত চাষ হয়েছে। এছাড়া প্রতি সরিষা জমি থেকে বাড়তি আয় করতে অনেক বেকার যুবক এবং বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকগণ মৌবাক্স স্থাপন করেছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গোদাগাড়ী সকল ধরনের কারিগরী সহযোগিতা করছে এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন।
তনি আরও বলেন, ২০ জনের মত গোদাগাড়ী উপজেলার মৌ চাষী কিছু বাহিরে থেকেও আসে। সারা বছর সরিষা আম, লিচু সরিষা থেকে প্রায় ৪/৫ টন মধু উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। এই মধু সংগ্রহ চলবে আগামী এপ্রিল পর্যন্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে সরিষার ভালো আবাদ হয়েছে। মধু সংগ্রহের জন্য ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে বসানো হয়েছে কয়েকশ মৌবাক্স। সকালে মধু সংগ্রহের জন্য খোলে দেয়া হয় মৌবাক্সগুলো। মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বসে মধু সংগ্রহ করে বাক্সের চাকে জমা করে। আর প্রতি সপ্তাহে একবার মৌবাক্স থেকে মধু সংগ্রহ করেন মৌয়ালীরা। মেশিনের মাধ্যমে মধু সংরক্ষণ করে বাজারজাতের ব্যবস্থা করেন।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা মৌ-খামারের মালিক মো. জামাল শেখ বলেন, ২০০৩ সালে আমি বাক্স নিয়ে মৌখামার শুরু করি। বর্তমানে আমি এ কাজে ভালই লাভবান হচ্ছি। হুজরাপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাক মাস্টার বলেন, মৌচাষী সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ ব্যবসাটি বেশ লাভ জনক। সপ্তাহের একদিন মৌ চাষিরা বিশেষ কায়দায় মধু সংগ্রহ করেন। এখানে খাঁটি মধু পাওয়া যায়। গুনগত মান ভালো হওয়ায় ৪শ’ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আমি ৪০০ টাকা দিয়ে ১ কেজি ক্রয় করছি।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম বলেন, মধু সংগ্রহ লাভজনক হওয়ায় দিনে দিনে বেকার যুবকদের আগ্রহ বাড়ছে। মৌমাছি শুধু মধুই সংগ্রহ করে না, ফসলের জন্য ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ মেরে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের সহায়তা করে থাকে।
Development by: webnewsdesign.com