গারো মা মেয়েকে হত্যার ঘটনায় চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে পুলিশের চার্জশিট

শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৪:৫৪ অপরাহ্ণ

গারো মা মেয়েকে হত্যার ঘটনায় চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে পুলিশের চার্জশিট
apps

রাজধানীর গুলশানে গারো মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনায় চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। হত্যার কারণ হিসেবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুর এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক চুরি করতে যান। তাদের চুরি করতে দেখে ফেলায় ভিকটিম বেসেথ চিরান (৬৫) ও তার মেয়ে সুজাত চিরানকে (৪০) গলা কেটে হত্যা করা হয়।

সম্প্রতি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) স ম কাইয়ুম ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে চারজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ২৬ জনকে। আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি মামলার চার্জশিট গ্রহণের বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে। মামলায় চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- সঞ্জীব চিরান (২১), প্রবীণ সাংমা (১৯), শুভ চিসিম ওরফে শান্ত (১৮) ও রাজু সাংমা ওরফে রাসেল (২৪)।

 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা স ম কাইয়ুম জাগো নিউজকে বলেন, রাজধানীর গুলশানের কালাচাঁদপুর এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক চুরি করতে যান। তাদের চুরি করতে দেখে ফেলায় বেসেথ চিরান ও তার মেয়ে সুজাত চিরানকে আসামিরা গলা কেটে হত্যা করে। আসামিদের বিরুদ্ধ হত্যার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছি।

যেভাবে হত্যা করা হয় গারো মা-মেয়েকে

মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, মামলার আসামি সঞ্জীব চিরান, প্রবীণ সাংমা, শুভ চিসিম ওরফে শান্ত ও রাজু সাংমা ওরফে রাসেল পরস্পর বন্ধু। রাজু সাংমা উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে থাকতেন। ২০১৮ সালের ১৯ মার্চ চাকরির জন্য তার তিন বন্ধু সঞ্জীব চিরান, প্রবীণ সাংমা ও শুভ চিসিম নিজ নিজ গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে রাজু সাংমার বাসায় ওঠেন। পরের দিন তারা বন্ধু রাজুর কর্মস্থলে যান। তাদের কাছে টাকা না থাকায় সঞ্জীব চিরান পরিকল্পনা করেন যে, গুলশান থানাধীন কালাচাঁদপুরে তার নানি বেসেথ চিরান থাকেন, সেখান থেকে টাকা চুরি করা যাবে।

পরিকল্পনা মোতাবেক ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কালাচাঁদপুরের একটি হাড়ি-পাতিলের দোকান থেকে ৬০ টাকা দিয়ে আসামিরা একটি চাকু কেনেন এবং আসামি শুভ আসামি রাজুর কাছ থেকে একটা চাকু নেন। ওই দিনই সকাল ১০টার দিকে প্রবীণ সাংমা, শুভ চিসিম সঞ্জীবের নানির বাসায় যান। সেখানে সঞ্জীব চিরানের মাসি ও তার পরিবারবর্গকে দেখে ফিরে আসেন এবং পরিকল্পনা পরিবর্তন করে দুপুর ২টার দিকে সঞ্জীব চিরান ও শুভ চিসিম ঘটনাস্থলে আসেন এবং পরে রাজু সাংমা ও প্রবীণ সাংমা ঘটনাস্থলে আসেন। বাসায় সঞ্জীব চিরানের মাসি ভিকটিম সুজাত চিরান ও তার বড় মেয়ে মায়াবী ও মায়াবীর ছোট শিশুসন্তান ছিল। তখন আসামিরা পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক চুই (চোলাইমদ) খাওয়ার জন্য সুজাতা চিরানকে ২০০ টাকা দেন এবং সুজাত চুই কিনে আনেন।

 

আসামিরা তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক অপেক্ষা করতে থাকেন। বিকেল সাড়ে ৪টার পর ভিকটিম সুজাতার মেয়ে মায়াবী তার কাজে চলে গেলে আসামিরা সবাই মিয়ে চুই খান এবং সুজাত চিরানকে বেশি করে চুই খাওয়ায়। ফলে তিনি এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তখন আসামি প্রবীণ সাংমা ফোন করতে করতে বাড়ির বাইরে চলে যান এবং বাইরে লক্ষ্য রাখেন। তখন আসামি সঞ্জীব টাকা খোঁজার বাসার জন্য ওয়ারড্রব খোলার চেষ্টা করলে ভিকটিম বেসেথ চিরান বাহির থেকে দরজা নক করেন। সঞ্জীব চিরান দরজা খুলে তার নানি বেসেথ চিরানকে দেখে সুজাত চিরানের রুমে গিয়ে রাজু ও শুভকে বেঁধে রাখতে বলেন। তখন আসামি রাজু সাংমা ও চিসিম বেসেথ চিরানের গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলের এবং মরদেহ গোপন করার জন্য ওই বাসার খাটের নিচে রেখে দেন।

একপর্যায়ে আসামিরা আতঙ্কগ্রস্ত হয় এবং ভয় পায় যে, ভিকটিম সুজাত চিরান জেগে গেলে সব জানা যাবে। তখন তারা তিনজন মিলে সুজাতের রুমে যান এবং রাজু সাংমা বালিশ দিয়ে সুজাত চিরানের মুখ চেপে ধরেন। সঞ্জীব চিরান সুজাতকে চেপে ধরেন এং চাকু দিয়া শরীরে আঘাত করে এবং শুভ চিসিম গলা কাটেন। সঞ্জীব চিরানের হাতে থাকা চাকু বাঁকা হয়ে গেলে বাসার রান্নাঘর থেকে একটি চাকু এনে পুনরায় সুজাতের গলা কাটেন। এরপর তারা চাকু দুটি পরিষ্কার করে বাথরুমে ফেলে চলে যান।

চার আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আদালতে চার্জশিট

মামলার ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পর্যালোচনায় গ্রেফতারকৃত আসামি সঞ্জীব চিরান, প্রবীণ সাংমা, শুভ চিসিম ও রাজু সাংমাদের বিরুদ্ধে পেনাল কোড আইনের ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় অপরাধ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা স ম কাইয়ুম বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছি।

 

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২০ মার্চ রাত ৯টার দিকে কালাচাঁদপুর এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে বেসেথ চিরান ও তার মেয়ে সুজাত চিরানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের একজন গলাকাটা এবং অন্যজন ঝুলন্ত অবস্থায় ছিলেন।
এ ঘটনায় বাদী হয়ে ২১ মার্চ সুজাতার স্বামী আশিষ মানখিন গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় সুজাতের বোনের ছেলে সঞ্জীব এবং তার তিন বন্ধুকে আসামি করা হয়।

Development by: webnewsdesign.com