গণতন্ত্রের নামে দেশে অত্যাচারি স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে – গোলাম মোহাম্মদ কাদের

শনিবার, ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ৬:২৯ অপরাহ্ণ

গণতন্ত্রের নামে দেশে অত্যাচারি স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে – গোলাম মোহাম্মদ কাদের
গণতন্ত্রের নামে দেশে অত্যাচারি স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে - গোলাম মোহাম্মদ কাদের
apps

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি বলেছেন, গণতন্ত্রের নামে দেশে অত্যাচারি স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এ থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। দেশ ও জাতির জন্য আমরা নতুন বাংলাদেশ উপহার দেবো। তিনি বলেন, স্বৈরাচারদের কথা হচ্ছে এক সরকার দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকলে দেশে স্থিতিশীলতা আসে। এক সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে আসলে অস্থিতিশীলতার বীজ বড় হতে থাকে।

সরকার বা নেতা পরিবর্তন হতে পারে কিন্তু তাতে সমাজে ও অর্থনীতিতে কোন প্রভাব না পড়ে সেটাই হচ্ছে স্থিতিশীলতা। আমেরিকা, ভারত ও জাপানসহ অনেক দেশে রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান পরিবর্তন হয় কিন্তু তার কোন প্রভাব পড়েনা সমাজ ও অর্থনীতিতে। কিন্তু একজনকে জোর করে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় রাখলে মানুষের মনে একটি আগুন জ্বলতে শুরু করে, তা একসময় বিস্ফোরণ হয়। আমাদের দেশে স্বাভাবিকভাবে কোন পরিবর্তন হলেও দেশ কোথায় যাবে তা নিয়ে মানুষ চিন্তিত। আমরা চাই সরকার ব্যবস্থা এমন হবে তাতে সরকার পরিবর্তন হলেও স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে না। স্থিতিশীলতা এলেই বিদেশীরা বিনিয়োগ করতে আসবে।

তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র থাকলে, দেশের মানুষ দেশ পরিচালনার জন্য কেয়ারটেকারের মত প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। তারা জনগণের কথামত দেশ চালাবে এবং জনগণ তাদের সমালোচনা করতে পারবে। সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। জনগণের ইচ্ছের বাইরে চললে নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি পরিবর্তন করার ক্ষমতা থাকতে হবে জনগণের মধ্যে। দেশে নির্বাচনের নামে সিলেকশন চলছে। দেশের মানুষ ইলেকশনের নামে সিলেকশন চায় না। সংবিধান অনুযায়ী আইনকানুন ঠিক আছে কিন্তু ইলেকশনের নামে সিলেকশন হচ্ছে। বর্তমান বাস্তবতায় কেউ চাইলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। জার্মান ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্টে বলা হয়েছে ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র থেকে বাংলাদেশ এখন স্বৈরশাসিত দেশে পরিণত হয়েছে। বর্তমান পদ্ধতিকে এগিয়ে নেয়াকে গণতন্ত্রের এগিয়ে যাওয়া বলা যায় না।

আজ দুপুরে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর বনানীস্থ কার্যালয় মিলনায়তনে বেশ কয়েকজন আইনজীবি জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জনবন্ধু গোলাম মোহাম্মদ কাদের এর হাতে ফুল দিয়ে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এসময় তাদের স্বাগত জানিয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বক্তৃতায় এ কথা বলেন।

এসময় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জনবন্ধু জিএম কাদের আরো বলেন, উন্নয়নের নামে মানুষের ওপর অত্যাচার ও দেশে লুটপাট চলছে। অবকাঠামো উন্নয়ণ মানুষের উন্নয়ন নয়। প্রকৃত উন্নয়ন হচ্ছে মানুষের জীবন মানের উন্নয়ণ। মানুষের ভোটাধিকারসহ সকল অধিকার নিশ্চিত হয় গণতন্ত্রে। বৈষম্যের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়ী হয়ে আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। বৈষম্যের মাধ্যমে সরকার একটি শ্রেণী সৃষ্টি করেছে।

অর্থ-সম্পদ দিয়ে তাদের ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে, তারা আইনের উর্ধে। আর শতকরা ৯০ ভাগ মানুষকে যেনো নর্দমায় ফেলা হয়েছে। তাদের অধিকার নেই, আয় নেই, তাদের দিন চলে না। বলা হচ্ছে, মাথাপিছু আয় ৩ হাজার ডলার। দেশের কয়টি মানুষের আয় বছরে তিন হাজার ডলার? তিন হাজার কোটি টাকা আয়ের মানুষ সৃষ্টি হয়েছে, তারা বাংলাদেশের রক্ত চুষে বিদেশে টাকা পাচার করেছে। মেগা প্রকল্পের নামে তারা দেশে লুটপাট চালিয়েছে। এদের কারেণই সাধারণ মানুষ খেয়ে পড়ে থাকতে পারছে না। তৈরী পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করছে, তাদের বিভিন্ন অপবাদ দেয়া হচ্ছে। ৮ হাজার টাকা দিয়ে কিভাবে একটি পরিবার চলে? বিশ^বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারলে শ্রমিকদের রেশন দেয়া হোক, দ্রব্যমূল্যে কমিয়ে দেয়া হোক। যেনো দাশপ্রথা চলছে, ওরা মরে গেলে যাক, ওদের দিয়ে আমাদের ব্যবসা করতে হবে। সিপিডির দেয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৪ জনের একটি পরিবারের শুধু মাসের খাবার খরচ ২২ হাজার ৪২১ টাকা। তাহলে তাদের বিদ্যুত বিল, বাসা ভাড়া, চিকিৎসা ও পোশাকের খরচ আসবে কোথা থেকে? শ্রমিকরা রাস্তায় নামলেই নাশকতাকারী? তাদের দেখভালের দায়িত্ব কার? সরকার কোথায় টাকা পায়? এই মানুষগুলোর টাকায় তো সরকার দেশ চালাচ্ছে।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জনবন্ধু জিএম কাদের আরো বলেন, একটি দেশের বিচার বিভাগ সভ্যতা ও গণতন্ত্রের প্রতিক। বিচার বিভাগ দিয়েই একটি দেশের গণতন্ত্র ও সুশাসন পরিমাপ করা যায়। সংবিধানে আইনের সমতার কথা বলা আছে। রাজতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্র কখনোই আইনের শাসন দিতে পারে না। এতে একটি গোষ্ঠি বা ব্যক্তি আইনের উর্ধে থাকে। আইনের শাসন নিশ্চিত করতেই গণতন্ত্রের আবির্ভাব হয়েছিলো। গণতন্ত্রে কেউই আইনের উর্ধে থাকতে পারবে না। নিউইয়ার্ক টাইমস কয়েকদিন আগে নিবন্ধ লিখেছে, বাংলাদেশে বিচারিক হয়রানীর শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের দেশে হয়রানী করা হচ্ছে তা বিভিন্ন দেশে আলোচিত হচ্ছে। সংবিধানের ১০৯ ধারায় বলা আছে হাই কোর্টের অধিনে থাকবে অধিনস্থ আদালত বা ট্রাইবুন্যাল। আবার ১০৬ ধারায় বলা আছে তাদের প্রমোশন থেকে সব কিছু দেখবে দেশের রাষ্ট্রপতি। আবার, ৪৮ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি দুটি কাজ ছাড়া সবকিছুতেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে হবে। তাই নিম্ন আদালত শতভাগ সরকার বা মন্ত্রনালয়ের অধিনস্থ, তাদের কোন স্বাধীনতা নেই। ৯৫ ধারা অনুযায়ী বিচারপতি নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রীর সাথে। তাই, নিম্ন আদালত সম্পূর্ণ ও উচ্চ আদালতের প্রায় ৯৯ ভাগই সরকার প্রধানের অধিনে রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে আমাদের সংবিধান। এমন বাস্তবতায় আইন সবার জন্য সমান হতে পারে না।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মোঃ মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধংস করে দিয়েছে। কয়েক দিনের উপনির্বাচনেও এখন সরকারকে সিল মারতে হয়। বর্তমান ব্যবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। আনুপাতিক হারে নির্বাচন হলেই দেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, জাতীয় পার্টি কাউকে বৈধতা দেয়ার জন্য নির্বাচনে যাবে না। কারো ক্ষমতার সিঁড়ি হতেও নির্বাচনে যাবে না জাতীয় পার্টি। প্রমাণ হয়েছে সরকারী দলের কর্মীরা ১ মিনিটে ৪৫টি ভোট দিতে পারে। তাই বর্তমান ব্যবস্থায় নির্বাচনে যাওয়া হচ্ছে, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সাঁতার কাটা।

জাতীয় আইনজীবী ফেডারেশনের সভাপতি শেখ মুহাম্মহদ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এর পরিচালনায় এবং যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম এর পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত উক্ত যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি, প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মুজিবুল হক চুন্নু এমপি, কো-চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি। এডভোকেট সুলতান আহ্মেদ খান ও শহীদুল ইসলাম মোল্লার নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি’র হাতে ফুল দিয়ে অর্ধ শতাধিক আইনজীবী জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম আব্দুল মান্নান, সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, এডভোকেট মোঃ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এর উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন, এডভোকেট লিয়াকত আলী খান, এডভোকেট লাকী বেগম, আনিসুল ইসলাম মন্ডল, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মমতাজ উদ্দিন, এডভোকেট জহিরুল হক জহির, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা, মোঃ খলিলু রহমান খলিল। ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান এমপি, আমিনুল ইসলাম ঝন্টু, জাহাঙ্গীর আহমেদ, মোঃ জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব ফখরুল আহসান শাহজাদা, এডভোকেট আব্দুল হামিদ ভাষানী, সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন মঞ্জু, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য এডভোকেট ইউসুফ আজগর, হুমায়ুন খান, সমুন আশরাফ, এমএ রাজ্জাক খান, মঞ্জুরুল হক, এডভোকেট খন্দকার ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ, মিজানুর রহমান মিরু, ইঞ্জিনিয়ার এলাহান উদ্দিন, যুগ্ম সম্পাদক আজহারুল ইসলাম সরকার, সমরেশ মন্ডল মানিক, এডভোকেট আব্দুর রশীদ, মীর সামছুল আলম লিপ্টন, কেন্দ্রীয় নেতা মোজাম্মেল হক, আবু মুসা সরকার, খন্দকার কামরুজ্জামান মন্ডল, মোঃ জাকির হোসেন খান, সোহেল রহমান, এডভোকেট নজরুল ইসলাম খান, এডভোকেট জিন্নাত আলী, এডভোকেট আবু ওহাব, শামীম আহমেদ রিজভী, সামছুল হুদা, আনোয়ার হোসেন শান্ত, শাহীন আরা সুলতানা রীমা, শামীম আহমেদ রিজভী, মাওলানা মোঃ কামাল উদ্দিন হাওলাদার, এডভোকেট ফিরোজ, আল আমিন সরকার।

Development by: webnewsdesign.com