জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধি
সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় গরু। ভারতীয় এসব গরু চোলাচালানের নিরাপদ রোট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এ তিন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মেঠো ও ফাঁড়িপথ। এর এই চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছেন জৈন্তাপুর থানার হরিপুর এলাকার মৃত তোতা মিয়ার ছেলে আব্দুল খালিক এবং রুবেল নামের দুই ব্যক্তি। গরু ছাড়াও ভারত থেকে চোরাই পথে খালিক ও রুবেল চা- পাতা, কসমেটিক্স, শাড়ি কাপড়, পাতর বিড়ি, সিগারেট এবং মাদকদ্রব্যসহ বিভিন্ন ধরনের অবৈধ পণ্য বাংলাদেমে এনে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রয় করছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো সংবাদকর্মী কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করলে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে খালিক ও রুবেল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে প্রায় প্রতিদিন ১২০০ থেকে ১৫০০ ভারতীয় গরু ঢুকে। এই গরুগুলো ভারত থেকে চোরাইপথে নিয়ে আসেন আব্দুল খালিক এবং রুবেল। পরে ওইসব গরু মো. আব্দুল খালিক স্থানীয় হরিপুর বাজারে উঠান এবং কাস্টমস বিভাগের সিল অথবা কোনো ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই বাজারের একটি ভূয়া সিট মেমো দিয়ে বিক্রি করে অবৈধ গরুগুলু বৈধ করার চেষ্টা করেন। এছাড়াও চোরাই পথে আসা গরুগুলো রাতের আধারে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাচার করেন খালিক ও রুবেল। জানা গেছে, বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন এবং ইঞ্জেকশন পুশ করার কারণে ওইসব গরুর দেহে বাসা বাধে বিভিন্ন রোগ ও ভাইরাসের। পশু নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বিক্রি হওয়া ওইসব গরুর গোশত হয়ে উঠে মানবদেহের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকারক। পরবর্তীতে এই গরুগুলোর গোশত খেয়ে অনেকেই হন বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, অবৈধভাবে ভারতীয় গরুর চালান আনতে গিয়ে খালিক ও রুবেল জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙান। তাদের নাম ভাঙিয়ে খালিক ও রুবেল দীর্ঘদিন যাবত অবাধে চালিয়ে আসছেন এই অবৈধ ব্যবসা। তারা জৈন্তাপুরের বিড়াখাই গ্রাম দিয়ে সারী নদী পার হয়ে গোয়াইনঘাটের মনঞ্জিলতলা, কাকুনাখাই, বারহাল খাসঁমৌজা, হাজরাই, ফুলের গ্রাম এবং লাফনাউট গ্রামের আংশিক অংশ দিয়ে প্রতিনিয়ত দিনে ও রাতে কিংবা ভোর সকালে এসব গরু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকান। এরপর তারা ঐসব গরু দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে বিভিন্ন নিরাপদ রোড ব্যবহার করেন। অপরদিকে রাতের আঁধার ঘনিয়ে এলে ঐ সকল গরুগুলিকে জড়ো করে রাখেন বিভিন্ন হাওরে। বাংলাদেশে প্রবেশের পর সময়ণ বুঝে দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে পাঠানো হয় গরুগুলো।
এদিকে বৈধভাবে এসব গরু পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানি করলে চালানপ্রতি অনেক টাকা রাজস্ব^ পেত বাংলাদেশ সরকার। কিন্ত চোরাকারবারীদের কারণে সরকার প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হরাচ্ছে। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাদের নিজেদের অনুকূলে নিয়ে খালিক ও রুবেল সহ চোরাকারবারীরা ভারতীয় গরুর বহর দেশে প্রতিনিয়ত প্রবেশ করে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা গুলির হাটবাজারে পাঠায়। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন- জরুরি ভিত্তিতে চোরাকারবারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে সরকার মোটা অংকের টাকার রাজস্ব হারাবে।
গরু চোরাচালান প্রসঙ্গে জৈন্তাপুর থানার ওসি শ্যামল বণিক এ প্রতিবেদককে বলেন, উল্লেখিত এলাকাগুলোর সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালান হচ্ছে- এ বিষয়টি আসলে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। হচ্ছে ঠিকই- তবে এ বিষয়ে প্রশাসন তৎপর রয়েছে এবং আগে থেকে চোরাচালান অনেক কমে গেছে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আসলে বিজিবির দায়িত্ব বা তৎপরতা বেশি। পুলিশ প্রশাসনও তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করে।
এ প্রসঙ্গে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৌরীন করিম বলেন, ‘ওই বিষয়টা আমার জানা নেই। তবে কেউ যদি বাজার ইজারা নিয়ে ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু নিয়ে এসে বিক্রি করে তবে তার ইজারা বাতিল করা হবে এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসক মহোদয় এবং জৈন্তাপুর থানার ওসি সাহেবের সঙ্গে আলাপ করবো, যাতে এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়।’ প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে গরু আনা হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেউ যদি প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে অবৈধ কাজ করে তবে সেটার দায়ভার তার নিজের। তারপরও বিষয়টা আমরা দেখছি।
এ বিষয়ে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ কিছু ঢুকা বা বের হওয়া- এটা দেখার বিষয় সম্পূর্ণ বিজিবির। তবে ঢুকে আমাদের থানা এলাকায় চলে আসলে সেটা পুলিশের দেখার বিষয় এবং থানা এলাকা যাতে কোনো ধরনের চারাচালান পণ্যের নিরাপদ রুট না হয় সে ব্যাপারে ওসিদের আমি কঠোর নির্দেশ দিয়েছি।
Development by: webnewsdesign.com