ক্ষমতার অপব্যবহারে জন্য কোন অবস্থাতেই নেত্রী বরদাস্ত করবেন না: কাদের

বৃহস্পতিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২০ | ৫:৩৩ অপরাহ্ণ

ক্ষমতার অপব্যবহারে জন্য কোন অবস্থাতেই নেত্রী বরদাস্ত করবেন না: কাদের
apps

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলের বাহিরে গিয়ে যারা নির্বাচন করেছে তাদের আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবেনা, ‘বিগত নির্বাচনে যারা দলের নির্দেশ অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হয়েছেন বা জয়ী হয়েছেন তাদেরকে দলীয় মনোয়ন দেওয়া হবে না। দয়া করে তারা যেন মনোনয়নপত্র না কিনে।’
বৃহস্পতিবার(০৩ডিসেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় ভার্চুয়াল অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। লক্ষ্মীপুরের স্থানীয় সরকার নির্বাচন গুলোতে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দল এখন অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে আছে।’

প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দলের ইমেজ ঠিক রাখতে হবে। উন্নয়ন করে কোন লাভ নেই, ভাবমূর্তি যদি অপকর্মের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। লক্ষ্মীপুরসহ বাংলাদেশের সাফল্যগুলো স্নান হয়ে যাবে। কাজেই আমরা দলের ভাবমূর্তি উন্নয়নের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। জেলায় জেলায় অন্তঃকোন্দল। নিজেদের মধ্যে ভূল বোঝাবুঝি থাকবে, আবার নিজেরা বসেই সেটা মিটিয়ে নিবেন। কিন্ত প্রকাশ্যে একে অন্যের বিরুদ্ধে গেলে সেটা দলের ইমেজের জন্য খুবই খারাপ।’
দলের নির্দেশ মেনে কার্যক্রম পরিচলানার জন্য বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘কর্মীদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কঠোর বার্তা- দলের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘শেখ হসিনা সরকার অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে। দলীয় পরিচয়ে শেখ হসিনার কাছে কোন অপরাধী নিজেদের আত্মরক্ষার ঢাল হতে পারে না। তাই দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যেন কোন অপকর্ম করতে না পারে সেদিকে আপনাদের তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখতে হবে। ক্ষমতার অপ্রব্যবহারের জন্য দলের পদ কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। মনোনয়ন বাণিজ্য কোন অবস্থাতেই নেত্রী বরদাস্ত করবেন না। এ সব বিষয়ে নজরদারি আছে। কাজেই আপনাদের সর্তক থাকতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিজয়ের মাসে একটি উগ্র ও সাম্প্রদায়িক গোষ্টি ভাস্কর্য আর মূর্তির নামে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্প্রতি বিনষ্টের অপচেষ্টা করছে। লক্ষ্মীপুরে এ সাম্প্রদায়িক গোষ্টির দাপট আমরা অতীতে দেখেছি। যারা নির্বাচনে প্রত্যাখ্যান হয়েছে জনগণ দ্বারা, তারা এখন ষড়যন্ত্রের দৌঁড়াদৌঁড়ি করছে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য। ভাস্কর্যের বিষয়টি সারা দুনিয়ায় স্বীকৃত। বিভিন্ন দেশে ভাস্কর্য আছে। এটাকে ইস্যু করে সাম্প্রদায়িক মহল যড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে আপনাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জবাব দিতে হবে। যারা এর বিরুদ্ধে উস্কানী দিচ্ছে এবং অর্থের যোগান দিচ্ছে তাদের সম্পর্কে সরকার সজাগ রয়েছে। সরকারের সফলতাকে দুর্বল ভাববেন না। জনগণের শান্তি বিনষ্ট করলে জনগণই রুখে দাঁড়াবে।’

তিনি হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, ‘রাষ্ট্র বিরোধী কোন বক্তব্য বরদাস্ত করা হবে না। ধর্মীয় ইস্যুকে সামনে এনে শান্তি বিনষ্টের যে কোন অপ্রচেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। নির্বাচনে এবং আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে। তারা আবার ‘আগুন সন্ত্রাস’ বেচে নিয়েছে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে সকল রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে। কিন্তু কর্মসূচির নামে জনগণের শান্তি বিনষ্টের অপচেষ্টা করলে আ’লীগ সরকার জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের সঠিক জবাব দেওয়া জন্য প্রস্তত আছে। সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর। বিএনপি বলেছে- আওয়ামী সরকার করোনার চেয়ে ভয়ানক, তারা ঠিকই বলেছে- আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকার ভয়নক অবস্থানে থাকবে। রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করলে তাদের মুখোশ উম্মোচন করা হবে। দলমত নির্বিশেষে শেখ হাসিনা সরকার অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
তিনি বলেন- ‘অতীতে লক্ষ্মীপুরের আওয়ামীলীগের কর্মীরা অত্যাচারিত হয়েছে। দু-দিনে যারা দলের কর্মীদের আশ্রয় দিয়েছেন তাদের কথা আপনারা এতো তাড়াতাড়ি ভূলে যাবেন, এটা আমি মনে করি না। লক্ষ্মীপুরের কর্মীরা সেখানে প্রতিনিয়ত নিগৃহীত হয়েছে। কোথাও না কোথাও রক্তও ঝরেছে। সেই দিনগুলোর কথা ভূলে যাবেন না। আজকের এ সুদিন একদিন দুর্দিনেও রূপ নিতে পারে। দেশে কখন কি ঘটে, চোখের ফলকে কখন কি হয়ে যায়- আমরা কেউ তা জানি না। ১৫ আগষ্ট রাতে সবচেয়ে নৃশংসতম হত্যাকান্ড ধানমন্ডিতে ঘটে গেলো। সেখানে বঙ্গবন্ধুসহ স্ব-পরিবারে প্রাণের বাতি নিভে গেল। এ দেশ বীরের দেশ, এ দেশ আবার ষড়যন্ত্রকারীদের দেশ। কখন কি ঘটে কেউ জানে না। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়- এ কথা যেন কেউ ভূলে না যায়। জনগণের জন্য কাজ করে ভালো আচরণ করে তাদের খুশি রাখা একজন কর্মীর প্রধান দায়িত্ব।’
পরিশেষে তিনি বলেন, ‘লক্ষ্মীপুরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। সড়ক বিভাগেও উন্নয়ন হয়েছে। আশাকরি আপনারা শতভাগ বিদ্যুৎ পেয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকারের আরও অনেক উন্নয়ন লক্ষ্মীপুরে আছে। কিন্তু অন্যান্য জেলার চেয়ে লক্ষ্মীপুর পিছিয়ে আছে- একথা আমি মন্ত্রণালয়ে বলেছি। সবাই এগিয়ে গেলে লক্ষ্মীপুর কেন পিছিয়ে থাকবে। রাস্তাঘাটের আরও উন্নতি করতে হবে। আমি বৃহত্তর নোয়াখালীর সন্তান হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব।’’ তিনি বলেন, ‘‘লক্ষ্মীপুর থেকে আমি যখন কারো কোন কথা শুনি সবার মুখে শুধু নিজেদের অন্তকলহ। কিন্তু সড়কের উন্নয়নের বিষয়ে কারো কোন কথা থাকে না। লক্ষ্মীপুর কোন অবস্থাতেই পিছিয়ে থাকতে পারেনা। যেটা আপনারা পারবেন না সেটা আমাকে বলবেন, আমি সেটা করবো। লক্ষ্মীপুরের লক্ষ্মী ফিরিয়ে আনতে হবে। শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করুন। নিজেরা নিজেদের শত্রু হবেন না। আপনঘরে শত্রু থাকলে বাহিরের শত্রুর দরকার হয় না।’

সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামাল এবং লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।

সভার সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এড. নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন।

সভায় মাহবুব-উল আলম হানিফ অচিরেই লক্ষ্মীপুরের মেয়াদউত্তীর্ণ উপজেলা এবং পৌর কমিটির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করার জন্য জেলার নেতাদের নির্দেশ দেন।

Development by: webnewsdesign.com