মহামারি করোনায় সারা বিশ্ব থমকে গেছে। ঠিক সেই মূহুর্তে সরকার করোনা সংক্রমণ রোধে ১৪ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে। আর এই লকডাউনে ভরা ফলের মৌসুমে বাজারে ক্রেতা সংকটে হাঁড়িভাঙা আম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দিনাজপুরের হিলি আম ব্যবসায়ীরা।
হিলি বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, আম বাগান থেকে ব্যবসায়ীরা নিজেই আম পেড়ে ভ্যানে করে হাটে বাজারে, শহরের অলিগলি আর গ্রাম গঞ্জে ঘুরে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, লকডাউনের কারণে খুবই সমস্যা হচ্ছে আমাদের। বাগান থেকে আম বিভিন্ন স্থানে সহজে নিয়ে যেতে পারছি না। এখন বাজারে হাঁড়িভাঙা আমের ভরা মৌসুম। আশপাশের হাট বাজারসহ বড় বড় শহরেও পণ্যবাহী ট্রাকযোগে অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিয়ে নিয়ে গেলেও তেমন লাভ হচ্ছে না। চলমান লকডাউনের কারণে সব জায়গাতে ক্রেতা শূন্য।
ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, প্রতি বছর এই আমের মৌসুমে উত্তরবঙ্গের রংপুর ও হিলির পার্শ্ববর্তী উপজেলা নবাবগঞ্জের আম চাষিদের বাগান থেকে সুস্বাদু হাঁড়িভাঙা আম ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ সারাদেশে বিক্রি করেন। লাভবান হতো আমচাষি, বাগান ব্যবসায়ীসহ পাইকারী ব্যবসায়ীরা। আমের এই মৌসুমে বাজার প্রতি কেজি আম বিক্রি হতো ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। আর এখন লকডাউনে তা বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সকালে হিলির সাপ্তাহিক হাট বারে দেখা গেছে, শহর ও গ্রাম গঞ্জের সকাল সকাল লোকজন ভ্যান আর বাইসাইকেলে করে বাজারে আসছেন। হাতে আছে বাজারের ব্যাগ, চাল, ডাল, তেল আর সবজি বাজার। কোনো রকম নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে আবার তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরছেন।
বাজার করতে আসা শাহারিয়ার আলমাস রক্তিম বলেন,লকডাউনের মধ্যেও বাজারে আসতে হচ্ছে, পেট তো লকডাউন বুঝেনা।সকালে আসছি এসে দেখি কাঁচাবাজার, মাছের বাজারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দোকান ছাড়া কিছু খোলা নেই। ফলের দোকান খোলা আছে। কিন্তু এই সময় কী আর ফল কিনবো, কামাই রোজগার নেই! আমের দাম অনেকটাই কম, কিন্তু আম দিয়ে তো আর খিদা মিটবে না।
হিলি চারমাথা মোড়ের হাঁড়িভাঙা আম ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, এর আগে কখনও এমন আমের ব্যবসা হয়নি ভাই। এবার লকডাউনে অনেক টাকা লোকসান গুনতে হবে। পার্শ্ববর্তী পাঁচবিবি উপজেলার চেঁচড়া গ্রাম ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটা হাঁড়িভাঙা আমের বাগান নিয়েছিলাম। আম বাগান মালিককে তো সবি টাকা শোধ দিতে হয়েছে। কিন্তু আম বিক্রি করে এখনো আসল টাকা তুলতে পারিনি।
লকডাউনে বাহিরে আম নিয়ে যেতে পারছি না। এলাকায় ঘুরে ঘুরে আর কত আম বিক্রি করা যায়। আজ আমি এক ভ্যান আম নিয়ে বের হয়েছি। বিক্রি করছি ২৫ টাকা আর ৩০ টাকা কেজি দরে। অনেক আশা করে বাগানটা নিয়েছিলাম। মনে হয় না অর্ধেক টাকাও তুলতে পারবো না।
কথা হয় পার্শ্ববর্তী উপজেলা নবাবগঞ্জের হাঁড়িভাঙা আমের বাগান ব্যবসায়ী আরাফাত হোসেনের সাথে তিনি বলেন, আজ কিছু বেশি পাকা আম ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলাম। কারণ আজ বিক্রি না করলে আগামীকাল ফেলে দিতে হবে। নবাবগঞ্জে আমার চারটি হাঁড়িভাঙা আমের বাগান কেনা আছে। সব বাগানের আম পাক ধরেছে। ঢাকায় নিতেও ভরসা পাচ্ছি না। শুনতেছি ঢাকার বাজারেও ক্রেতা সংকট এবং দাম কোম।
Development by: webnewsdesign.com