কোরবানি ঈদকে চুইঝাল বিক্রির প্রধান মৌসুম বলা যেতে পারে

বৃহস্পতিবার, ০৭ জুলাই ২০২২ | ৭:১৭ অপরাহ্ণ

কোরবানি ঈদকে চুইঝাল বিক্রির প্রধান মৌসুম বলা যেতে পারে
apps

মাংসের স্বাদ বাড়াতে চুইঝাল অন্যতম মসলা হিসেবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে প্রিয়। চুইঝাল পছন্দ করেন না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়ালা দুষ্কর। আসন্ন ঈদুল আজহা কেন্দ্র করে বাগেরহাটে বাড়ছে চুইঝালের চাহিদা। তবে দামও বেড়েছে কিছুটা ঈদ সামনে রেখে জমে উঠেছে ‘চুইঝালের’ বাজার

কোরবানি যতই ঘনিয়ে আসছে, চুইঝালের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের। বছরের সবসময়ই চুইঝালের চাষ হয় ও হাটবাজারে পাওয়া যায়। তবে কোরবানি ঈদকে চুইঝাল বিক্রির প্রধান মৌসুম বলা যেতে পারে। সাধারণ সময়ে চুইঝাল কেজি প্রতি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রয় হলেও বর্তমানে আকারভেদে দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা বাগেরহাট, খুলনা, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা এলাকায় জনপ্রিয় একটি মসলা চুইঝাল। বর্তমানে দেশের অন্যান্য জেলায়ও ঝাল হিসেবে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।চুই লতাজাতীয় গাছ। এর কাণ্ড ধূসর ও পাতা পানপাতার মতো, দেখতে সবুজ রঙের। চুইঝাল খেতে ঝাল হলেও এর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুণ।

চুইলতার শিকড়, কাণ্ড, পাতা, ফুল-ফল সবই ভেষজ গুণসম্পন্ন। এ ছাড়াও মসলা হিসেবেও এটি ব্যবহৃত হয়। তবে ঝাল হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় হাঁস ও গরুর মাংস রান্না করতে। রান্নার জন্য চুইঝালের কাণ্ড ব্যবহার করা হয়। চুইঝালে দশমিক ৭ শতাংশ সুগন্ধি তেল থাকে। এ ছাড়াও এতে রয়েছে আইসোফ্লাভোন, অ্যালকালয়েড, পিপালারিটিন, পোপিরন, পোলার্টিন, গ্লাইকোসাইডস, মিউসিলেজ, গ্লুকোজ, ফ্রুকটোজ, সিজামিন ও পিপলাস্টেরল।

বাগেরহাট শহরের প্রধান বাজারে চুইঝাল বিক্রেতা জনি বলেন, ‘চুইঝাল সারা বছর মোটামুটি ভালোই বিক্রি হয়। বাগেরহাটসহ খুলনাঞ্চলের অন্যতম বিখ্যাত মসলা চুইঝাল। বছরের প্রায় সবসময় আমরা চুইঝাল বিক্রি করে থাকি। কোরবানির উৎসবের সময় ঘরে ঘরে মাংস রান্না বৃদ্ধি পায়। মাংসের স্বাদ বাড়াতে মানুষ চুইঝাল বেশি কিনে থাকে। যার ফলে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চুইঝালের দাম কিছুটা বেড়েছে।’

জনি আরও বলেন, ‘আগে চুইঝাল চিকন (আকারে ছোট) ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় ও কিছুটা বড় চুইঝাল ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। কোরবানি উপলক্ষে বাজারে চাহিদা বাড়ায় পাইকারি দরে কিনতে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। তাই চুইঝালের সাইজ অনুযায়ী কেজিপ্রতি ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছি।’

আজিজুর রহমান টিটু নামের এক চুইঝাল চাষি বলেন, চুইঝাল মূলত একটি লতাগুল্ম গাছের শিকড় ও কাণ্ড। একটি গাছ থেকে পরিণত চুইঝাল সংগ্রহ করতে হলে গাছটি কেটে সংগ্রহ করতে হয়। একটি গাছ বড় হতে প্রায় ছয় মাস থেকে বছরখানেক সময় লাগে। সে জন্য চুইঝালের দাম কিছুটা বেশি। কোরবানি উপলক্ষে চুইঝালের চাহিদা বেড়েছে, পরিণত গাছের পরিমাণ কম থাকায় দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাজারের আরেক ব্যবসায়ী তালিম হোসেন বলেন, ‘সাধারণত দৈনিক ৫ থেকে ১০ কেজি চুইঝাল বিক্রি হয়। কিন্তু ঈদের সময় চাহিদা বাড়ায় দৈনিক প্রায় ২০ থেকে ৩০ কেজি চুইঝাল বিক্রি করি আমরা। চাষি ও গৃহস্থদের কাছ থেকে আমরা চুইঝাল কিনে থাকি। চাহিদা বাড়লে অপরিপক্ব গাছ কেটে দাম কিছুটা বাড়িয়ে দেন পাইকাররা। তার প্রভাবেই ঈদের সময় চুইঝালের দাম সামান্য বৃদ্ধি পায়।’

চুইঝাল কিনতে আসা তানজীম আহম্মেদ বলেন, ‘চুইঝাল ছাড়া গরুর মাংসের স্বাদ পুরোপুরি পাই না । ঈদের সময় চুইঝাল দিয়ে রান্না করা মাংস অতিথিদের খুবই পছন্দের। তাই দাম এ সময়ে যদিও একটু বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও কোরবানিতে মাংস খেতে চুইঝাল লাগবেই।’শেখ সাদী নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘চুইঝালের দাম ঈদের আগে আরও বাড়তে পারে। তাই ভিড় এড়াতে আগেভাগেই চুইঝাল কিনতে এসেছি। আমরা শুধু গরুর মাংস নয়, সব ধরনের মাংস ও মজাদার খাবারেই চুইঝাল খাই। কোরবানি উপলক্ষে দাম কিছুটা বেড়েছে।’

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ঈদের সময় চুইঝালের কদর বেড়ে যায়। জেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে চাষ করে প্রায় ৩০ টন চুইঝাল উৎপাদন হয়, যার বাজারমূল্য দেড় কোটি টাকার বেশি। ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিকভাবে বাগেরহাটে দিন দিন চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে চুইঝালের।

Development by: webnewsdesign.com