কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দুচিন্তায় রাজশাহীর গরুর খামারিরা

মঙ্গলবার, ২২ জুন ২০২১ | ৫:৩৫ অপরাহ্ণ

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দুচিন্তায় রাজশাহীর গরুর খামারিরা
apps

বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ছে কোরবানি ঈদ। ঈদ আসতে দেরি আর এক মাস। রাজশাহীর দুর্গাপুরে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রাকৃতিক পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রস্তুত করা হচ্ছে কোরবানির গরু। কিন্তু গো-খাদ্যের সংকট, মূল্য বৃদ্ধি, বাজার মন্দা, স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় পশুর হাট স্থাপনে বিধিনিষেধসহ ইত্যাদি কারণে খামারিরা ভাল দাম নিয়ে দুচিন্তায় রয়েছেন। করোনা সংকটে গতবছরের মতো এবারও লোকশানের আশঙ্কা করছেন খামারিরা।

জানা যায়, উপজেলার একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নে খামারি ও চাষিরা প্রতিযোগিতামূলক প্রাকৃতিক উপায়ে প্রায় ২০ হাজার গরু মোটাতাজাকরণ করছেন। এসব সুস্থ গরু নিজ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে বাহিরেও সরবরাহ করা হবে বলে জানান ব্যবসায়ী ও খামারিরা। তবে করোনায় ব্যবসায়ীদের অনলাইনে গরু বিক্রির পরামর্শ দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়নে ছোট বড় প্রায় ১শ ২৫টি গরুর খামার রয়েছে। এসব গরুর খামারে প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণের প্রতিযোগিতা চলছে। সম্প্রতি প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজা করণে ১২৫ খামারিকে প্রশিক্ষণ, কৃমি নাশক ওষুধ ও ভিটামিন মিনারেল জাতীয় ওষুধ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলায় ৫ হাজার পরিবারে ২-৩টি করে গরু প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এসব খামার ও পরিবার থেকে কোরবানির জন্য ২০ হাজার গরু টার্গেট করা হয়েছে। এছাড়াও ৩০ হাজার ছাগল স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। এসব সুস্থ গরু ও ছাগল নিজ উপজেলা ও জেলার চাহিদা পূরণ করে ঢাকায় কোরবানির হাটে সরবরাহ করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিবছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে উপজেলায় মৌসুমী খামারি ও ব্যবসায়ীরা মানবস্বাস্থ্যের ক্ষতিকর অবৈধ স্টেরয়েড হরমোন ব্যাবহার করে দ্রুত গরু মোটাতাজা করত। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কিন্তু এবার প্রাণিসম্পদ বিভাগের তৎপরতার কারণে চলতি বছর এই প্রবণতা অনেকটাই কম। এ বছর ব্যাপক হারে প্রাকৃতিক উপায়ে খড়, ঘাস, বিভিন্ন প্রকারের ভুষি, খৈল এবং ভিটামিন খাইয়ে গরু মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে।

খামারিরা জানান, গরুকে প্রাকৃতিক পন্থায় মোটাতাজা ও সুস্থ রাখতে সাধারণত খড়, লালি-গুড়, ভাতের মাড়, তাজা ঘাস, খৈল, গম, ছোলা, খেসারি, মাষকলাই, মটরের ভুসিসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার দেয়া হয়। গরুর জন্য এটা বিজ্ঞানসম্মত। এ নিয়মে গরু মোটাতাজা করা হলে ক্রেতা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন না। এ ধরনের গরুর মাংস খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি থাকে না। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা গরুর চাহিদা ও দাম ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে গো-খাদ্য বস্তা প্রতি দাম বেড়েছে ১শ টাকার ওপরে। ফলে খামারি ও চাষিরা অনেকটাই বেকায়দায় রয়েছে।

উপজেলার দেলুয়াবাড়ী গ্রামের আবু তাহের নামের এক মৌসুমী ব্যবসায়ী জানান, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার ছোটবড় ১২টি গরু প্রাকৃতি উপায়ে মোটাতাজা করণ করছেন। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের চিকিৎসকরা আমার খামারের গরু পর্যবেক্ষণ করছেন। তার খামারে তিন স্তরের গরু রয়েছে। ছোট, বড় ও মাঝারি। এসব সুস্থ গরু কোরবানির হাটে সরবরাহ করা হবে।

তিনি বলেন, গত বছর ঈদুল আজহার সময় এ অঞ্চলের কিছু কিছু অসাধু মৌসুমি ব্যবসায়ী গরুকে মোটাতাজা করতে স্টেরয়েড জাতীয় নানা ওষুধ ব্যবহার করেছে। অসাধু উপায়ে গুরু মোটাতাজা করতে গরু মরে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। গত বছর এভাবে গরু মোটাতাজাকরণ করতে গিয়ে অনেক খামারে গরুর মৃত্যু হয়েছে। এমনকি কোরবানির হাটেও গরুর মৃত্যু হয়েছে। অধিক লাভের আশায় তারা গরু মোটাতাজা করতে ব্যবহার করে ডেক্সিন, স্টেরয়েড, হরমোন, উচ্চমাত্রার রাসায়নিক। তবে এবার এসব চিত্র নেই বললেই চলে।

উপজেলার চৌপুকুরিয়া গ্রামের খামারি আবুল হাসনাত বলেন, ১৫টি গরু মোটাতাজা করছি। ইতিমধ্যে বিক্রি শুরু করছি। দেশিয় পদ্ধতিতে শুধু সবুজ ঘাস, খড়, গম ও কালাইয়ের ভুসি, খৈল এবং ফিড খাওয়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শে গরুর হজমশক্তি বৃদ্ধি এবং শারীরিক গঠনের জন্য জিঙ্ক খাওয়াচ্ছি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আব্দুল কাদির বলেন, করোনা সংকটের মধ্যেও এবার ব্যাপকহারে গরু লালন পালন করছেন চাষিরা। এবার ওষুধ বা ইনজেকশন দিয়ে কোনো গরু মোটা করা হচ্ছে না। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ তৎপর রয়েছেন। চাষি ও খামারিদের প্রাকৃতিক উপায়ে গরু মোটাতাজাকরণে প্রশিক্ষণ ও নানান প্রচারণা চালানো হয়েছে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন খামার ঘুরে চাষিদের নানা রকম পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Development by: webnewsdesign.com