জীবন কালে অনেক সময় অসুস্থতার কারণে বা অপুষ্টির কারণে কিংবা জীবনের কোন গুরুত্বপূর্ন অধ্যায় যেমন:গর্ভকালীন সময়,যখন আমাদের দৈনিক খাবার থেকে দেহের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি পূরণ হয়না,অথবা বিশেষ সময়ের জন্য আরেকটু বাড়তি পুষ্টির প্রয়োজন,তখন স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি বাড়তি পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরন করার জন্য ডাক্তার বা পুষ্টিবিদ আমাদেরকে ভিটামিন,মিনারেলস বা মাল্টিভিটামিন গ্রহণ পরামর্শ দেন।
অনেক সময় বাড়তি ভিটামিন বা মিনারেলস বা সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা এতটাই জরুরী যে,এইসব পুষ্টি উপাদানের অভাব হলে আমাদের দেহের নানা গুরুত্ব পূর্ন কাজ বাঁধাপ্রাপ্ত হয় এবং ফলাফল হিসাবে এদের অভাব জনিত লক্ষণ এবং জটিলতা প্রকাশ পায়।
তবে,আমরা অনেকে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলেও শুধুমাত্র সঠিক নিয়মে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ না করার ফলে আমরা এর সঠিক বা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পায়না।
তাই,সবারই সাপ্লিমেন্ট সম্পর্কে কিছুটা প্রাথমিক ধারণা রাখা এবং এটি গ্রহণের সঠিক নিয়ম জানা উচিত।
সাপ্লিমেন্ট,ভিটামিন বা বা মিনারেলস বা উভয়ই এক সাথে হতে পারে।যখন যে ভিটামিন বা মিনারেলসের অভাব জনিত লক্ষণ প্রকাশ পায় ডাক্তার তখন আমাদের ঐ নির্দিষ্ট ভিটামিন বা মিনারেলস গ্রহণের পরামর্শ দেন।যেমনঃভিটামিন-ডি এর অভাব হলে ডাক্তার আমাদেরকে সাপ্লিমেন্ট হিসাবে ভিটামিন-ডি গ্রহণের পরামর্শ দেন।
ভিটামিনের প্রকারভেদ
জেনে রাখা ভাল,ভিটামিন সমূহকে দ্রাব্যতার ভিত্তিতে ২ ভাগে ভাগ করা হয়।পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন এবং চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিন।পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন গুলো হল ভিটামিন-বি১,বি২,বি৩,বি৫,বি৬,বি৭,বি,৯,বি১২ বা বি কমপ্লেক্স এবং ভিটামিন-সি।
চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিন গুলো হল ভিটামিন-এ,ভিটামিন-ডি,ভিটামিন-ই,ভিটামিন-কে।
মাল্টিভিটামিন,নিউট্রশনাল সাপ্লিমেন্ট বা ভিটামিনের মেডিসিন যে নামেই ডাকি না কেন এই গুলো কতটা ভাল কাজ করবে তা নির্ভর করে আমরা এগুলো সঠিক নিয়মে গ্রহণ করছি কিনা তার উপর।
আমরা অনেকেই এই সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের সঠিক নিয়ম জানিনা বলে,যে উদ্দেশে ডাক্তার বা পুষ্টিবিদ আমাদেরকে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পরামর্শ দেন সে উদ্দেশ্যই পূরণ হয়না।অর্থাৎ,ভিটামিন এবং মিনারেলসের অভাব পূরণ হয় না।
খালি পেটে যে ভিটামিনগুলো খাবেন
পানিতে দ্রবীভূত ভিটামিন অর্থাৎ ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি গ্রহনের সঠিক সময় হল খালি পেটে অর্থাৎ একেবারে ঘুম থেকে উঠে এই দুই ধরণের ভিটামিন খেলে এদের শোষণ ভাল হয়।অর্থাৎ,শরীরের কাজে লাগে।
কারো যদি ভিটামিন-বি এবং ভিটামিন-সি এই দুই ধরণের ভিটামিনই গ্রহণ করার প্রয়োজন হয় তবে এটি দুই ভাগে গ্রহণ করা যেতে পারে।একটি সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রহণ করা যেতে পারে এবং অপরটি খাবার গ্রহণ করার ২ থেকে ২.৫ ঘন্টা পর গ্রহণ করা ভাল।
খালি পেটে পানিতে দ্রবণীয় সাপ্লিমেন্ট অর্থাৎ ভিটামিন-বি বা সি গ্রহণ করার পর অন্তত ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে অন্য কোন খাবার গ্রহণ করা উচিত।
খাবার গ্রহনের সাথে যে ধরণের ভিটামিন গ্রহণ করবেন
চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিন গুলো রাতের খাবারের সাথে গ্রহণ করা উচিত।এতে,করে এই ধরণের ভিটামিন গুলোর শোষণ ভাল হয়।আরেকটি বিষয়,মনে রাখতে হবে,এই চার ধরণের ভিটামিন অর্থাৎ,ভিটামিন-এ,ভিটামিন-ডি,ভিটামিন-ই,ভিটামিন-কেগ্রহনের সময় খাদ্য তালিকায় চর্বি জাতীয় খাবার অর্থাৎ,ঘি,মাখন বা পনির রাখতে হবে।অথবা,রান্নায় সামান্য একটু বেশি তেল ব্যবহার করলেও হবে।
যাদেরকে ডাক্তার মাল্টি-ভিটামিন গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষ করে গর্ভবতী মা এবং বয়স্ক ব্যক্তি তারা এটি সকালের নাস্তার সাথে গ্রহণ করলে ভাল।তবে,সকালের নাস্তা যেন ব্যালান্স হয়।অর্থাৎ,খাদ্য তালিকায় শর্করা,আমিষ এবং চর্বির সঠিক পরিমাণে সংমিশ্রণ থাকে।
সর্বাধিক শোষণের জন্য আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করার উপযুক্ত সময় হল সকালের খালি পেটে।আয়রন সাপ্লিমেন্ট করার পর এক গ্লাস কমলা বা মাল্টার জুস খেতে পারেন।কমলা বা মাল্টায় থাকা ভিটামিন-সি আয়রন শোষণের জন্য অপরিহার্য।
যদি,আপনাকে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেট নিতে বলা হয় তবে সেটি যেকোন বেলার খাবারের সাথে গ্রহণ করা উচিত।কারণ,ক্যালসিয়াম ব্রেক ডাউনের জন্য স্টামক জুসের প্রয়োজন।আরেকটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে বেলাতে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেট নেবেন ঐ বেলাতে শাক জাতীয় খাবার এবং আয়রন সাপ্লিমেন্ট নেয়া উচিত নয়।কারন,এতে ক্যালসিয়াম শোষণ বাঁধাগ্রস্ত হয়।
সতর্কতা:
অনেকেই না বুঝে কোন ডাক্তার বা এক্সপার্ট সাজেশন না নিয়েই ইচ্ছামত নানা ধরণের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে থাকেন,যা মোটেও উচিত নয়।যদি,মনে হয় আপনার বিশেষ কোন পুষ্টি উপাদানের ঘাতটি রয়েছে তবে সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
Development by: webnewsdesign.com