কোথায় গেল এত টাকা!

মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৩:১৯ অপরাহ্ণ

কোথায় গেল এত টাকা!
apps

সরকারের নানা কড়াকড়িতে ক্রমেই কমছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৪৩৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। গত (২০১৮-১৯) অর্থবছরের একই সময়ে সরকার সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নিয়েছিল ২৪ হাজার ৯৯৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। যা পুরো অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২০ শতাংশ। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৭৮ শতাংশ কম। টাকার অঙ্কে ব্যাখ্যা করলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমে গেছে ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। ১০ অর্থবছরের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রির এমন দশা এবারই প্রথম। মূলত বাধ্যতামূলক ই-টিআইএন সার্টিফিকেট এবং ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগে সুদ কমিয়ে দেয়ায় আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, সঞ্চয়পত্রের এ টাকা পর্যাপ্ত পরিমাণে আসেনি ব্যাংকে আমানত হিসাবে। অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে এক রকম হাওয়া হয়ে গেছে এ পরিমাণ টাকা। তবে এর বড় অংশই প্লট বা ফ্ল্যাট ক্রয়ে বিনিয়োগ হচ্ছে বলে মনে করেন তারা। একই সঙ্গে বাজার থেকে নগদ ডলার কিনে নিয়েও জমা করছেন অনেকে। এছাড়া দেশের বাইরে পাচার হওয়ার কথাও বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তথ্য মতে, একক মাস হিসেবে সর্বশেষ ডিসেম্বরে নিট বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় নেমে গেছে। অর্থাৎ আলোচিত মাসে যত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, তার চেয়ে আগের কেনা সঞ্চয়পত্র মেয়াদপূর্তির কারণে ভাঙানো হয়েছে বেশি। এতে নিট বিক্রি ঋণাত্মক ধারায় নেমে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৮ কোটি টাকা। আগের মাস নভেম্বরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ছিল মাত্র ৩২০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নানা পথে টাকা পাচার হচ্ছে। সুশাসনের অভাবে এখন টাকা পাচারের পথ অনেক বেশি খুলে গেছে। আমদানি, রপ্তানি, হুন্ডি এসব খাতে নজরদারি বাড়াতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রপ্তানি মূল্য বা আমদানি পণ্য দেশে না এলে পরবর্তী এলসি খোলায় কঠোরতা আরোপ করতে হবে। একই পণ্যের দাম, কি পণ্য আসছে-যাচ্ছে এগুলো তদারকি বাড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, টাকা অলস রাখা যাবে না। বিনিয়োগমুখী করতে হবে।

তাহলে পাচার কমে যাবে। টাকা পাচার করার পথগুলো বন্ধ করতে হলে আগে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ভাটার টান শুরু হয় চলতি অর্থবছরের প্রথম দিনই। অর্থাৎ গত বছরের আগস্ট থেকেই ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। ওই মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে ১ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকায় নেমে আসে। সেপ্টেম্বরে নেমে আসে ৯৮৫ কোটি, অক্টোবরে ৮২২ কোটি, নভেম্বরে ৩২০ কোটি ও সর্বশেষ ডিসেম্বরে ৪০৮ কোটি টাকায় ঠেকেছে। মূলতবিভিন্ন পক্ষের দাবিতে সঞ্চয়পত্রের সুদহার না কমিয়ে এ খাতে প্রকৃত বিনিয়োগকারী বের করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কঠোর হয়েছে সরকার।

চাইলেই ভবিষ্যৎ তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই। এখন প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কর কমিশনারের প্রত্যয়ন লাগে। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ফার্মের নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগছে উপকর কমিশনারের প্রত্যয়ন। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ মোদাচ্ছের হাসান জানান, সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে আগের মতো চাপ নেই। অটোমেশন চালু হওয়ার পর থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে সব অনিয়ম বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি জানান, আগে বড় অঙ্কের সঞ্চয়পত্র বিক্রির জন্য প্রভাবশালীরা তদবির করতেন, এখন বন্ধ হয়ে গেছে সেসব তদবির। সঞ্চয়পত্রের টাকা প্রভাবশালীরা এখন কোথায় বিনিয়োগ করছেন, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি, সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি ও অন্যান্য খাত থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গত অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। বিক্রি বাড়তে থাকায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঠিক করা হয়। যদিও অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।

এর আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল। বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মে মাসের পর থেকে এই হার কার্যকর আছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।

জানা যায়, অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থের একটি অংশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হতো। ক্রয়সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্রও কিনতেন প্রভাবশালীরা। ছিল না সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের কোনো কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারও। ফলে কালো টাকা বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হয়ে উঠেছিল সঞ্চয়পত্র। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নানা বাধ্যবাধকতা দিয়ে দেয় সরকার।

ফলে কালো টাকার মালিকরা অর্থের একটা বড় অংশ বিদেশে পাচার করছেন এমন অভিযোগ অনেকের। বাকি অর্থ বিনিয়োগ করছেন প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রয়ে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বিক্রি বেড়েছে। জানতে চাইলে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আল আমিন বলেন, ২০১৩-১৭ পর্যন্ত ফ্ল্যাট বিক্রি অনেক কমে যায়। ফলে বিপুল সংখ্যক ফ্ল্যাট অবিক্রিত ছিল। তবে ২ বছর ধরে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে। এখন বিক্রি অনেকাংশেই বেড়েছে।

এদিকে বাজার থেকে নগদ ডলার কিনে নিয়েও জমা করছেন অনেকে। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর থেকে কার্ব মার্কেটে (খোলা বাজার) ডলারের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ফলে লাভের আশায় অনেকেই নগদ ডলার কিনে রাখছেন। এছাড়া দেশের বাইরে টাকা পাচার হওয়ার কথাও বলছেন অনেকেই। প্রতিবছরই দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে।

এর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে টাকা পাচারের হার আরো বেড়েছে। বিভিন্ন পক্ষের দাবিতে সঞ্চয়পত্রের সুদহার না কমিয়ে এ খাতে প্রকৃত বিনিয়োগকারী বের করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কঠোর হয়েছে সরকার। চাইলেই ভবিষ্যৎ তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই। এখন প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ দিয়ে সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে কর কমিশনারের প্রত্যয়ন লাগে। পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক ফার্মের নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে লাগছে উপকর কমিশনারের প্রত্যয়ন। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ মোদাচ্ছের হাসান জানান, সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে আগের মতো চাপ নেই। অটোমেশন চালু হওয়ার পর থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে সব অনিয়ম বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি জানান, আগে বড় অঙ্কের সঞ্চয়পত্র বিক্রির জন্য প্রভাবশালীরা তদবির করতেন, এখন বন্ধ হয়ে গেছে সেসব তদবির। সঞ্চয়পত্রের টাকা প্রভাবশালীরা এখন কোথায় বিনিয়োগ করছেন, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি, সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি ও অন্যান্য খাত থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। গত অর্থবছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা। বিক্রি বাড়তে থাকায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ঠিক করা হয়। যদিও অর্থবছর শেষে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। এর আগে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদহার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়েছিল।

বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মে মাসের পর থেকে এই হার কার্যকর আছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।

জানা যায়, অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থের একটি অংশ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হতো। ক্রয়সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্রও কিনতেন প্রভাবশালীরা। ছিল না সঞ্চয়পত্র ক্রেতাদের কোনো কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারও। ফলে কালো টাকা বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হয়ে উঠেছিল সঞ্চয়পত্র। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নানা বাধ্যবাধকতা দিয়ে দেয় সরকার। ফলে কালো টাকার মালিকরা অর্থের একটা বড় অংশ বিদেশে পাচার করছেন এমন অভিযোগ অনেকের। বাকি অর্থ বিনিয়োগ করছেন প্লট ও ফ্ল্যাট ক্রয়ে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বিক্রি বেড়েছে। জানতে চাইলে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আল আমিন বলেন, ২০১৩-১৭ পর্যন্ত ফ্ল্যাট বিক্রি অনেক কমে যায়।
ফলে বিপুল সংখ্যক ফ্ল্যাট অবিক্রিত ছিল। তবে ২ বছর ধরে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পাল্টাচ্ছে। এখন বিক্রি অনেকাংশেই বেড়েছে।

এদিকে বাজার থেকে নগদ ডলার কিনে নিয়েও জমা করছেন অনেকে। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর থেকে কার্ব মার্কেটে (খোলা বাজার) ডলারের চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ফলে লাভের আশায় অনেকেই নগদ ডলার কিনে রাখছেন। এছাড়া দেশের বাইরে টাকা পাচার হওয়ার কথাও বলছেন অনেকেই। প্রতিবছরই দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। এর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে টাকা পাচারের হার আরো বেড়েছে।

Development by: webnewsdesign.com