কৃষিকাজ করে সংসার চালানো জনি পেলেন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ

সোমবার, ১৩ মার্চ ২০২৩ | ৫:০৮ অপরাহ্ণ

কৃষিকাজ করে সংসার চালানো জনি পেলেন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ
কৃষিকাজ করে সংসার চালানো জনি পেলেন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ
apps

বাবার দু’চোখ ভরে স্বপ্ন ছিল জনিকে (১৮) নিয়ে, বড় হয়ে ছেলে ডাক্তার হবে। বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে পড়াশোনা চালিয়েছে জনি। আচমকা ঝড়ে খানিকটা স্থবির হয়ে যায় তার স্বপ্ন। জনি স্কুলে পড়া অবস্থায় সড়ক দুর্ঘটনায় হারাতে হয় প্রিয় বাবাকে।

বাবাকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে পরে তার পরিবার। নিজস্ব অল্প বসতভিটা আর মাঠে কয়েক শতক আবাদি জমি ছাড়া আর কিছু নেই তাদের। একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে যায় পুরো পরিবার। তখন থেকেই সংসারের হাল ধরতে হয় জনিকে। কৃষিকাজ করে সংসারের সকল খরচ জুগিয়ে পড়াশোনা চালানো ছিল বেশ কষ্টকর। সব কষ্ট মানিয়ে নিয়ে বাবার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সদ্য ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে মেডিকেল কলেজে।

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল পৌরসভা দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মনিরুল ইসলাম টিপু ও জরিনা বেগম দম্পতির ছেলে জাহিদ হাসান জনি। রাণীশংকৈল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, পীরগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে। তার এমন সফলতায় খুশি তার পরিবার ও স্থানীয়রা।

স্থানীয় প্রতিবেশী সাঈদ আহসান বলেন, তার বাবাকে হারানোর পর সে খুব কষ্ট করেছে। মাঠে সব কৃষি কাজ করে সংসারে খরচ ও পড়াশোনা চালিয়ে গেছে জনি। আমরা আশা রাখছি কোন কারনে সে যেন পিছিয়ে না যায়। সরকার সহ সকলে তার পাশে থেকে তাকে সহযোগিতা করবেন।

আবেগে আপ্লুত হয়ে জনির মা জরিনা বেগম বলেন, অনেক কষ্ট করে মোর ছুয়াডা পড়াশোনা করিছে। ভালো করে খাবা পারেনি। সব কৃষি কাজ করিছে ফের সংসারটা চালাইছে। আইজ ডাক্তারি পড়িবার সুযোগ পাইল। জনির বাপ থাকিলে আইজ খুবে খুশি হলেহে। সবাই মোর ছুয়াডার তাহানে দোয়া করিবেন যাতে ওয় ভালো ডাক্তার হবা পারে।

জাহিদ হাসান জনি বলেন, ছোট বেলায় বাবা বলতেন আমাকে ডাক্তার বানাবেন। আজকে আমার বাবা বেঁচে নেই। তিনি থাকলে সবচেয়ে বেশী খুশি হতেন। তিনি মারা যাওয়ার পর বাড়ির সব দায়িত্ব আমাকে নিতে হয়। আমার শুধু আরেক বোন আছেন। কৃষি কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন হয়ে পরতো। তবুও হাল ছাড়িনি কারন স্বপ্নটা আমার বাবার। কোচিং এ এক ভাইয়ের মাধ্যমে অল্প টাকায় ভর্তি হই। তারপর বাড়িতে এসে কাজ করে আবার চলে যেতাম। আসা যাওয়ার মধ্যে থাকতাম সবসমই। কষ্ট হলেও হার মানিনি। আজকে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। কেবলমাত্র পথচলাটা শুরু করেছি। সকলকে আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে করে একজন মানবিক ডাক্তার হয়ে পরিবার, আত্মীয় স্বজনসহ দেশবাসীর সেবা করতে পারি।

সেই সাথে যারা ছোট খাট বিষয়ে হতাশ হয়ে পরে তাদের বলব ভেঙে পরবেন না। পরিশ্রম করতে থাকলে আপনারাও ভালো জায়গা গুলোতে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবেন।

রাণীশংকৈল পৌরসভার মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সে আমার পৌরসভার বাসিন্দা। তার বাবা মারা যাওয়ার পর সে অনেক পরিশ্রম করে আজ সফল হয়েছে। মাঝে মধ্যে আমি তাদের খোঁজখবর নেই। এ ছাড়াও পরবর্তীতেও তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

Development by: webnewsdesign.com