কুড়িগ্রামে শিক্ষক-কর্মচারীদের অনিয়ম ও হয়রানীর অভিযোগ স্কুল সভাপতির বিরুদ্ধে

শনিবার, ১৩ মার্চ ২০২১ | ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

কুড়িগ্রামে শিক্ষক-কর্মচারীদের অনিয়ম ও হয়রানীর অভিযোগ স্কুল সভাপতির বিরুদ্ধে
apps

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার গোপালপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির নানা অনিয়ম ও হয়রানী মূলক কর্মকান্ডে অতিষ্ট ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা।

অবৈধভাবে সভাপতির পদ আগলে রেখে নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়ম করার প্রতিবাদ করলেই মামলা-হামলার শিকার হচ্ছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এমনকি সভাপতির অনৈতিক কথায় বাধ্য না হওয়ায় আওয়ামীলীগ পন্থি এক সিনিয়র বিএসসি শিক্ষককে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটুত্তি করার মিথ্যে অভিযোগে মামলা দায়ের করে হয়রানী করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী বিএসসি শিক্ষক আব্দুল কাদের এর অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, গোপালপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সোহেল রানার সভাপতির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও দফায় দফায় ৬ বার মেয়াদ বাড়িয়ে অনৈতিকভাবে সভাপতি পদ আকড়ে ধরে আছেন। শুধু তাই নয় নিয়োগ বানিজ্যের জন্য জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের বিধান থাকলেও ১০জন সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙ্গিয়ে জুনিয়র এক শিক্ষককে নিয়োগ দিয়ে সাবেক প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে বিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছেন।

বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফাতেমা ইয়াসমিন দায়িত্ব পাওয়ার পূর্ব থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি তার আগেও ৫ বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন।

জৈষ্ঠতা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী উক্ত বিদ্যালয়ের সিনিয়র বিএসসি শিক্ষক আব্দুল কাদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করার নিয়ম থাকলেও তা না করে তাকে কৌশলে বাড়িতে ডেকে নিয়ে অসুস্থতা জনিত কারনে দায়িত্ব না নেয়ার জন্য অঙ্গিকার নামায় স্বাক্ষর করতে বলেন। এতে অস্বীকৃতি জানালে শিক্ষক আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে ১৫ আগষ্টের অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়া এবং বঙ্গবন্ধুকে কটুক্তি করার মিথ্যা অভিযোগ এনে সভাপতি বাদী হয়ে কুড়িগ্রামের আদালতে মামলা দায়ের করেন। একই কারনে ঐ মামলায় বিদ্যালয়ের অপর এক শিক্ষিকা রোজিনা বেগমকেও আসামী করা হয়েছে।

বিএসসি শিক্ষক আব্দুল কাদের জানান, বিদ্যালয়ের সভাপতি হয়রানী মূলক কাজের কারনে গত ৮ মাস ধরে তাদের বেতন ভাতা বন্ধ থাকায় তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

অভিযোগ সুত্রে আরও জানা যায়, বিদ্যালয়ের সভাপতি সোহেল রানা নিজের পছন্দের জুনিয়র শিক্ষিকা সাব রেজিষ্টারের স্ত্রী ফাতেমা ইয়াসমিনকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য বিদ্যালয়ের আরো ১০ জন সিনিয়র শিক্ষকের নিকট থেকে দায়িত্ব না নেয়ার অঙ্গিকার নামায় জোড় করে স্বাক্ষর নেন। চাকরী হারানো ও হয়রানীর ভয়ে সভাপতির দেয়া অঙ্গিকার নামায় স্বাক্ষর করেন শিক্ষকরা। পরে গোপনে ফাতেমা ইয়ামিনকে নিয়োগ দেন।

এছাড়াও সভাপতি প্রভাবশালী হওয়ায় নৈশ প্রহরি আব্দুল গফফারকে চাকুরিচ্যুত করেন এবং নৈশ প্রহরির ভাই সেকেন্দার আলীকে লাইব্রেরীয়ান পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও সভাপতির বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে সন্তোষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকু জানান, গত ১৫ আগষ্ট গোপালপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে কোন শোক দিবস পালন হয়নি। অথচ শোক দিবসের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিতি দেখিয়ে ঐ দ্ইু শিক্ষকের বিরুদ্ধে এডহক কমিটির সভাপতি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নাগেশ্বরী পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মোহাম্মদ হোসেন ফাকু জানান, গত ১৫ আগষ্ট নাগেশ্বরী উপজেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত শোক দিবসের অনুষ্ঠানে শিক্ষক আব্দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন। তিনি পৌর আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি।

এদিকে, উক্ত মামলায় আদালত নাগেশ্বরী থানার ইনচার্জকে সরেজমিনে তদন্ত পুর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেন। নির্দেশনা অনুযায়ী নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ গত ২৬ আগষ্ট সরেজমিনে তদন্ত করে মামলার স্বাক্ষীর মোকাবেলায় মামলার অভিযোগের বিষয়ে কোন সত্যতা পাননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উক্ত বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সোহেল রানা জানান, যা করার নিয়ম মাফিক করেছি। এখন আপনাদের যা করার করেন।

Development by: webnewsdesign.com