দেখতে পানের লতার মত মনে হলেও এটি আসলে পানগাছ নয়, এই গাছের নাম চুই ঝাল। ওষুধি গুণাগুণ সম্পন্ন মসল্লা জাতীয় চুই ঝালের বানিজ্যিক চাষ করে সফলতা অর্জন করেছেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ধনঞ্জয় গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা তৌফিক আহমেদ শাহীন। পারিবারিক ১০ একর জমিতে ১০ হাজার সুপারি গাছের মধ্যে তিন হাজার গাছের গোড়ায় তিনি সাথী ফসল হিসেবে চাষ করেছেন চুই ঝাল।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও নড়াইল জেলায় “চুই ঝাল” মসল্লা জাতীয় খাবার হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়। চুই ঝাল গাছের কান্ড বা লতা কেটে ছোট ছোট টুকরো করে ব্যবহার করা হয় মাছ, মাংস ও ঝোল জাতীয় তরকারি রান্নায়। নিজস্ব স্বাদ ও ঘ্রাণে অতুলনীয় এই চুই ঝালের সুখ্যাতি রয়েছে ভোজনরসিকদের কাছে। তাই খাবারে বাড়তি স্বাদ আনতে ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিংগাপুর ও শ্রীলংকায় প্রচুর চাহিদা রয়েছে চুই ঝাল মসল্লার।
চুই ঝালের বাজার মূল্য ভালো, চাষে তেমন কোন খরচ নেই, গাছের শাখা-প্রশাখায় প্রচুর শিকড় জন্মে, শিকড়সহ গিঁট কেটে লাগালেই সহজে উৎপন্ন হয় চারা। সুপারি গাছ ছাড়াও যে কোন বনজ বৃক্ষের গোড়ায় চুই ঝাল চাষ করা যায়।
উদ্যোক্তা শাহীন জানান, বাজারে প্রতি মণ চুই ঝাল বিক্রি হয় বিশ হাজার টাকায়। বয়স ও আকার ভেদে ২ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে প্রতিটি চুই ঝাল গাছের দাম। গত বছর তিনি পরিপক্ক ১০টি চুই ঝাল গাছ বিক্রি করেছেন এক লাখ টাকায়। এছাড়াও তিনি সুপারি বাগান থেকে আয় করেন বার্ষিক ৫০(পঞ্চাশ) লাখ টাকা। তার বাগানে সারা বছর ৮/১০ জন শ্রমিকের দৈনিক মজুরিতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি চুই ঝাল চাষের পরিসর আরো বৃৃদ্ধি করতে চান।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার শামসুদ্দিন মিঞা জানান, জেলার যেসব জায়গায় সুপারি বাগান রয়েছে সেখানে সাথী ফসল হিসেব চুই ঝাল চাষ করে কৃষকগণ আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন। প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় পাকস্থলী ও অন্ত্রের প্রদাহ সারাতে চুই ঝাল অনেক উপকারী, ব্যথা নিরাময়, কফ, কাঁশি, হাঁপানি, স্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও রক্তস্বল্পতা দূর করতে চুই ঝালের রয়েছে ভেষজ গুণাগুণ।
Development by: webnewsdesign.com