কুড়িগ্রামে দফায় দফায় বন্যায় দিশেহারা কৃষকরা

বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর ২০২০ | ৭:৩০ অপরাহ্ণ

কুড়িগ্রামে দফায় দফায় বন্যায় দিশেহারা কৃষকরা
apps

কুড়িগ্রামে দফায় দফায় বন্যায় কৃষকের স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। বিশেষ করে ৫ম দফা বন্যায় আমনের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় দিশেহারা ও বিধ্বস্ত অবস্থা তাদের।

কৃষি নির্ভরশীল পরিবারগুলো ধারদেনা ও ঋণ করে ৪র্থ দফা বন্যার পর আমন আবাদ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও ৫ম দফা বন্যার ফলে ধরলা নদী তীরবর্তী এলাকার ৪ উপজেলার কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর মনে করছে, অবশিষ্ট এলাকায় এবার বাম্পার ফলন হবে। ফলে ঘাটতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও সরকারি দফতরে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সহযোগিতা চাওয়ার পাশাপাশি পরিত্যক্ত জমিতে বিকল্প ফসল আবাদের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছর প্রথম দফা বন্যায় তেমন ক্ষতি না হলেও দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় জেলায় ১৭ হাজার ৫৫৬ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর ১১ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে নিরূপণ করে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে আমন বীজতলা ১ হাজার ৪০৯ হেক্টর, আউশ ৫ হাজার ২১৭ হেক্টর, সবজি ৯৫৩ হেক্টর, পাট ৯ হাজার ২৩৫ হেক্টর, তিল ৩০৫ হেক্টর, মরিচ ২০৫ হেক্টর ও চীনা বাদাম ১৪০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় এ দুই মিলে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৫৮ জন কৃষকের মোট ১৪০ কোটি ৬৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।

তৃতীয় দফা বন্যা শেষে জেলার ২৭ হাজার ৭৬১ জন কৃষককে সবজি বীজ, ১০৫টি কমিউনিটি বীজতলা ও শতাধিক ভাসমান বীজতলা এবং ১১২টি ট্রে বীজতলা প্রস্তুত করে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে আমন চারা বিতরণ করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

কৃষকরা নতুন উদ্যোমে পুনরায় আমন ধান চাষ শুরু করার দুই সপ্তাহের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় মাঠের আমনের আবাদ, মাসকলাই, চীনা বাদাম ও শাকসবজি সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে যায়।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে চতুর্থ ও পঞ্চম দফা বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা যায়নি।

তবে সেপ্টেম্বরের দুই দফায় ১৯ হাজার ২৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। যার আমনের আবাদ ১৮ হাজার ৮২০ হেক্টর। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪ হাজার ২০৫ হেক্টর, উলিপুরে ৬৬০ হেক্টর, চিলমারীতে ১ হাজার ৫ হেক্টর, রৌমারীতে ৯৫০ হেক্টর, চর রাজীবপুরে ৭৫০ হেক্টর, ভূরুঙ্গামারীতে ১ হাজার ৫২৫ হেক্টর, নাগেশ্বরীতে ৬ হাজার ৫৫ হেক্টর, ফুলবাড়ীতে ২ হাজার ৫৮০ হেক্টর এবং রাজারহাট উপজেলায় ১ হাজার হেক্টর আমন আবাদ নিমজ্জিত হয়। এখনও অনেক আবাদ পানির নিচে রয়েছে।

কৃষি বিভাগ বলছে, পানি নামার পর থেকে ক্ষতি নিরূপণ করতে কাজ করছেন তারা। তবে এবারে ক্ষতির পরিমান বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিস্ট সকলে। এ অবস্থায় মূলধন হারানোর শঙ্কায় থাকা কৃষকরা বলছেন সরকারিভাবে সহায়তা না পেলে আগামী মৌসুমে কোন আবাদই তারা করতে পারবে না।

যদিও কৃষি বিভাগ বলছে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগামীতে সরিষায় জোর দেয়া হবে। কৃষকদের সহযোগিতার জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

উলিপুরের বজরা ইউনিয়নের চরবজরা গ্রামের কৃষক কাসেম জানান, বন্যা ও নদী ভাঙনে ৭ একর জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ধারদেনা করে ৩৫ শতক জমিতে আমন আবাদ করেছি। বন্যায় সেগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শামসুদ্দিন মিঞা জানান, এখন পর্যন্ত শেষ দফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য কোন প্রকার প্রণোদনা পাওয়া যায়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতে মাঠ পর্যায় কাজ চলছে। তালিকা প্রণয়ন শেষে তাদের সহযোগিতা করা হবে।

Development by: webnewsdesign.com