কুষ্টিয়ায় হাউজিংয়ে মাথা গোজার ঠিকানা হারালো ৬ পরিবার

সোমবার, ২২ মার্চ ২০২১ | ২:২৪ অপরাহ্ণ

কুষ্টিয়ায় হাউজিংয়ে মাথা গোজার ঠিকানা হারালো ৬ পরিবার
apps
কুষ্টিয়া হাউজিং সি-ব্লকের তালতলা বস্তির একাংশ ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিল হাউজিং কতৃপক্ষ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২১মার্চ সকালে প্রভাবশালী আফজাল হোসেন উপস্থিতিতে হাউজিং কতৃপক্ষ ও প্রশাসন উপস্থিতিতে বস্তির ০৬ পরিবারের মাথা গোজার শেষ ঠিকানা ভেঙ্গে দেওয়া হয়।
প্রভাবশালী আফজাল হোসেন তার এক আত্মীয় (সরকারের উচ্চপদে চাকুরীরত) এক কর্তার সহযোগীতায় ও হাউজিং অফিসে অবৈধ সুবিধা দিয়ে বস্তিবাসীর শেষ ঠিকানা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভযোগ করেছেন বস্তিবাসী।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তালতলা বস্তি এলাকায় মানুষের আহাজারি, গুড়িয়ে দেওয়া শেষ সম্বল বুকে জড়িয়ে নিয়ে বুক ফাটিয়ে উচ্চস্বরে কান্না। এরই মধ্যে পাশের বাড়িতে বসবাসরত আফজাল হোসেন বস্তির গুঁড়িয়ে দিয়ে একটি অংশ দখল করে প্রাচীর নির্মাণের কাজও সেরে ফেলেছেন।
আফজাল হোসেন এর সাথে কথা বলতে গেলে, তিনি কথা না বললেও তারা স্ত্রী জানায়, পাশের বস্তির জায়গাটি তাদের নামে বরাদ্দ নিয়েছেন। তাই তারা প্রাচীর নির্মাণ করেছেন। বরাদ্দের কাগজ দেখতে চাইলে, প্রথমে তিনি কাগজটি দেখাতে রাজি হননি। পরবর্তীতে বরাদ্দের একটি কপি তিনি সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন। যাতে স্মারক নম্বরের তারিখ এবং চিঠিতে ইস্যুকৃত তারিখ আনুমানিক ৬ মাসের ব্যবধান এবং মূল তারিখ লেখার স্থানে অর্ধেক হাতে ও অর্ধেক কম্পিউটার প্রিন্ট করা। এদিকে আফজাল হোসেনের সহধর্মিনীর দাবি করা বরাদ্দের জমিটুকু, সর্বশেষ হাওজিং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত আদেশে হাউজিং কর্তৃপক্ষের জমি দেখানো হয়েছে এবং জমি বরাদ্দ দেওয়ার তারিখ ও ইস্যুকৃত হাউজিং কর্তৃপক্ষের আদেশের তারিখের ৬ মাস আগে বলে জানানো হয়।
এ ব্যাপারে হাউজিং কুষ্টিয়ার সহকারি পরিচালক জানান, তিনি এই বিষয়টি অবগত নন। রাজশাহী থেকে বিষয়টি পরিচালনা করা হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য তিনি তার উর্দ্ধতন নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে যেতে বলেন। তাছাড়াও তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। উচ্ছেদের অনুমতি পত্রের একটি কপি সাংবাদিকদের হাতে আসলে দেখা যায় সেখানে কর্তৃপক্ষর সিল ও সিলমোহর কোনটি ব্যবহার করা হয়নি। হাউসিং অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, এই স্থানে আনুমানিক চল্লিশ বছরের বেশী সময় ধরে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো বসবাস করে চলেছে। এখনকার বেশীর ভাগ মহিলারাই মানুষের বাসা বাড়িতে কাজ করে দিনাতিপাত করে আর পুরুষেরা রিক্সা,ভ্যান, অটো চালানো সহ শ্রমিক পেশায় নিয়োজিত। এই মানুষদের মাথার উপরে শেষ ছাউনিটুকু স্থানীয় একটি পরিবারের চক্রান্তে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। এটা অমানবিক একটি বিষয়। তারা আরো বলেন, এদের পাশে জানা-বোঝা ও শিক্ষিত মানুষ না থাকায় অত্যাচার করে অনেকে পার পেয়ে যায়। তাই আজ এত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হলো এদের। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের কাছে তারা দাবি জানান- দ্রুত বস্তিবাসীর সমস্যা সমাধান করে, তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেবেন।
কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শওকত কবির এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ তাদেরকে একটি লিখিত আবেদনের মাধ্যমে তাদের পুলিশের পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন। আর তাই তাদেরকে পুলিশী সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে।
কুষ্টিয়া র‍্যাব-১২ এর অধিনায়ক মেজর গাফফারুজ্জামান জানান, উচ্ছেদ অভিযানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে চিন্তা করে র‌্যাবের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল। তাই সেখানে র‌্যাব সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কুষ্টিয়া মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম জানান, তিনি বিষয়টি অবগত নন। আমাদের মাধ্যমেই তিনি বিষয়টি জানলেন। তিনি তার অধীনস্থ একজনকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানায়।
দৈনিক বাংলাদেশ মিডিয়া/এসআরসি-২২

Development by: webnewsdesign.com