স্প্যানিশ সুপার কাপের সেমি ফাইনালে অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে হার বার্সেলোনা শিবিরে যে আগুন জ্বেলে দিয়েছিল, সেই আগুনও পুড়িয়ে ছারখার করল কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দের ভাগ্য। তাকে করল চাকরি হারা।
ভালভার্দেকে ছাঁটাই করে বার্সেলোনা গতকালই নতুন কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে ‘অখ্যাত’ কুইকি সেতিয়েনকে।
হ্যাঁ, বিশ্ব ফুটবল অঙ্গনে ৬১ বছর বয়সী সেতিয়েন ‘অখ্যাত’ই। তবে নিজ দেশ স্পেনে তিনি মোটেও অখ্যাত নন। বরং দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে স্প্যানিশ ফুটবলে অবদান রেখে চলেছেন তিনি। দীর্ঘ সংগ্রাম, অধ্যাবসায়, আর সাধনার ফল পেলেন এবার। আচমকাই হয়ে গেলেন বিশ্বসেরা বার্সেলোনার প্রধান কোচ।
গতকাল সন্ধ্যায়ই আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের নতুন কোচ হিসেবে কুইকি সেতিয়েনের নাম ঘোষণা করেছে বার্সেলোনা। চুক্তির ঘোষণাটা দিয়েছে ক্লাবের অফিসিয়াল ওয়েবপেজে। বার্সেলোনা তার সঙ্গে চুক্তিটা করেছে আড়াই বছরের জন্য, মানে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত।
ভালভার্দেকে ছাটাইয়ের গুঞ্জন উঠে গত মৌসুম থেকেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই গুঞ্জন ক্রমেই জোরালো হয়। ভালভার্দের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে অনেকেরই নাম ভাসে বাতাসে। তাদের মধ্যে সম্ভাবনার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন বার্সেলোনারই সাবেক খেলোয়াড় জাভি হার্নান্দেজ, ডাচ কোচ রোনাল্ড কোয়েমান, বার্সেলোনরই আরেক সাবেক খেলোয়াড় থিয়েরি অঁরি, আর্জেন্টাইন কোচ মরিসিও পচেত্তিনো ও জুভেন্টাসের সাবেক কোচ মাসিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রি। এমনকি বার্সেলোনার ‘বি’ দলের কোচ পিমিয়ান্তার নামও শোনা যায়।
কিন্তু তাদের সবাইকে টপকে বার্সার কোচের দায়িত্ব পেলেন সেতিয়েন। ৬১ বছর বয়সী এই স্প্যানিশের নামও বার কয়েক উঠেছে। তবে তাকে জড়িয়ে আলোচনাটা ছিল একেবারেই মৃদুস্বরে। কিন্তু ভাগ্য শেষ পর্যন্ত জয়ী করল তাকেই।
গত বুধবার অ্যাতলেতিকোর কাছে হেরে সুপার কাপের শিরোপা স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার পরই কোচ ভালভার্দেকে ছাঁটাইয়ের পাকা নিয়ত করে ফেলে বার্সেলোনা। ভালভার্দের উত্তরসূরি করতে হাত বাড়ায় নিজেদের সাবেক খেলোয়াড় জাভি হার্নান্দেজের দিকে। গত শুক্রবার জাভিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবও দেয় বার্সেলোনা। কিন্তু স্বপ্ন থাকা সত্ত্বেও জাভি বার্সেলোনাকে ‘না’ বলতে বাধ্য হন। কারণ, তিনি বর্তমানে কাতারি ক্লাব আল সাদের প্রধান কোচ।
জাভির কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান হয়েই বার্সেলোনা তলে তলে সেতিয়েনের সঙ্গে জোর আলোচনা শুরু করে দেন। রিয়াল বেটিসের এই সাবেক কোচ গত গ্রীষ্ম থেকেই বেকার ছিলেন। ফলে বার্সার প্রস্তাবটা লুফে নিতে এক মুহূর্ত দেরি করেননি। দুই দিনের মধ্যেই তাই আলোচনা চূড়ান্ত করে সেরে ফেলেছেন পাকা চুক্তিটাও।
খেলোয়াড় হিসেবে শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে সেতিয়েনের অভিষেক ১৯৭৭ সালে। স্পানিশ ক্লাব রেসিং সান্তান্দারের হয়ে। সেই থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ বছর খেলেছেন পেশাদার ফুটবল। খেলেছেন রেসিং সান্তান্দার, অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ, লেগানেস ও লেভান্তের হয়ে। স্পেন জাতীয় দলের হয়ে মাত্র ৩টি ম্যাচ খেলা সেতিয়েন আনুষ্ঠানিকভাবে খেলোয়াড়ী জীবনের ইতি টানেন ১৯৯৬ সালে, লেভান্তের হয়ে খেলার সময়।
খেলোয়াড় জীবনের ইতি টেনেই তিনি মনোযোগী হন কোচিং পেশাদর দিকে। ভর্তি হন কোচিং ডিপ্লোমা কোর্সে। ২০০১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নাম লেখান কোচিং পেশায়। খেলোয়াড়ী জীবনের শুরুটা করেছিলেন যেখানে, সেতিয়েনের কোচিং ক্যারিয়ারের শুরুটাও সেই রেসিং সান্তান্দারের হয়েই। এরপর পলি ইজিদো, লুগো, পালমেইরাস ও রিয়াল বেটিসকে কোচিং করিয়েছেন।
গত বছরের জানুয়ারিতেও গুঞ্জন উঠেছিল রিয়াল বেটিস ছেড়ে বার্সেলোনায় ভালভার্দের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন সেতিয়েন। কিন্তু গুঞ্জনটা দ্রুত মিলিয়েও যায়। তবে বছর ঘুরে সেই ন্যু-ক্যাম্পই হলো তার ঠিকানা।
দায়িত্ব বুঝে পেয়ে সেতিয়েন এরই মধ্যে কাজে যোগদানের মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন। কে জানে, হয়তো আজ-কালই তিনি নতুন শিষ্যদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন মাঠে। শুরু করে দেবেন বিশ্বসেরা ছাত্র লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ, আতোইন গ্রিজমানদের নিয়ে অনুশীলন।
Development by: webnewsdesign.com