প্রচণ্ড গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাইরে সূর্যের প্রচণ্ড উত্তাপ। গরমে অনেকেই আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন হিট স্ট্রোকে। সাধারণত বৃদ্ধ ও শিশুরা হিট স্ট্রোকে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। কিন্তু এ বিষয় সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতার কারণে অনেক প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। তাই আসুন, অমরা সচেতন হই। রক্ষা করি অসংখ্য অমূল্য প্রাণ। দেহে আপনাআপনিভাবে তাপ উৎপন্ন হয়। এ তাপ আবার ঘাম, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহ থেকে বের হয়েও যায়। হিট স্ট্রোক হলো এমন একটি অবস্থা, যেখানে দেহের তাপমাত্রা আস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। কিন্তু দেহ থেকে তাপ বের হওয়ার পদ্ধতিগুলো অকেজো হয়ে যায় অর্থাৎ আর ঘাম বের হতে পারে না। ফলে বাড়তে থাকে দেহের তাপমাত্রা। দেখা দেয় বিভিন্ন রকমের উপসর্গ। যদি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তা হলে এই অবস্থায় মৃত্যুর মতো বেদনাদায়ক ঘটনাও ঘটে যেতে পারে পলকেই। রোদে বেশি ঘোরাঘুরি করলে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের উপসর্গ দেখা গেলেও অনেক সময় তা দেখা যায় না। এ উপসর্গের মধ্যে আছে দেহের তাপমাত্রা অত্যধিক বেড়ে যাওয়া, ঘাম বন্ধ হওয়ায় শরীর লালচে হয়ে যাওয়া, দ্রুত হৃদস্পন্দন, শ্বাসকষ্ট, আচার-আচরণে পরিবর্তন, যেমনÑ হঠাৎ রাগান্বিত হওয়া, অস্থিরতায় ভোগা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা, খিঁচুনি এবং অজ্ঞানও হতে পারেন অনেকেই। হিট স্ট্রোকের প্রথম ও প্রধান চিকিৎসা হলো- আক্রান্ত ব্যক্তির দেহের তাপমাত্রা কমিয়ে ফেলা। এজন্য কোনো ধরনের উপসর্গ দেখা দেওয়ামাত্র আক্রান্ত ব্যক্তিকে রোদ থেকে সরিয়ে ঠাণ্ডা জায়গায় নিতে হবে। শরীরের কাপড় যতটুকু সম্ভব খুলে ফেলে শরীরে ঠাণ্ডা পানি ঢালতে হবে। তবে বরফ শীতল পানি ঢালা যাবে না। কারণ এতে রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়ে দেহের তাপমাত্রা কমার পরিবর্তে আরও বাড়বে, রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হবে। রোগীকে বাতাস করতে হবে। কুচকি ও বোগলের নিচে আইস প্যাক রাখলে তাপমাত্রা দ্রুত কমে আসবে। হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাইরে রোদে বেশি ঘোরাঘুরি ও রোদে একটানা বেশি শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করা যাবে না। বেশি বেশি করে পানি, শরবত, স্যালাইন ও তরল জাতীয় খাবার পান করতে হবে। গরমকালে অ্যালকোহল, চা-কফি কম পান করতে হবে। কারণ এগুলো পানিশূন্যতার মাধ্যমে হিট স্ট্রোককে তরান্বিত করে। গরমকালে স্যালাইন পানি বেশি করে পান করতে হবে। রোদে বেশিক্ষণ থাকবেন না। নারীরা রোদে বাইরে বের হলে ঘোমটা ব্যবহার করুন। একইসঙ্গে ছাতা ব্যবহার করতে হবে। গরমের সময় সুতি, হালকা রঙয়ের ঢিলেঢালা কাপড় পরিধান করুন। কারণ সাদা কাপড়ের ওপর তাপ পড়লে তা প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায়। ফলে দেহের তাপমাত্র কম থাকে। কিন্তু রঙিন কাপড় পড়লে তা তাপ শোষণ করে দেহের তাপ বাড়িয়ে দেয়। শিশুদের হিট স্ট্রোক থেকে রক্ষা করার জন্য এ সময় বেশি খেয়াল রাখা দরকার। শিশুদের অল্পতেই হিট স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই তাদের পানি ও অন্যান্য তরল খাবার বেশি পরিমাণে দিতে হবে। রোদে যেন খেলাধুলা না করে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
লেখক : স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সহকারী অধ্যাপক
ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগ
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স (নিনস)
Development by: webnewsdesign.com