কাজিপুরে যমুনা নদীতে জেগে ওঠা যমুনার চরে এবার আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। পলিমাটিতে তুলনামূলক কম খরচ ও পরিশ্রমে আখের বাম্পার ফলন হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। কম খরচে ও অল্প পরিশ্রমে অধিক ফলন পাওয়ার আশায় লাভের স্বপ্ন বুনছে কাজিপুরের কৃষকরা।
কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন বিশেষ করে চরাঞ্চলের ৬ টি ইউনিয়নে আখ আবাদের লক্ষমাত্রা ৪০ হেক্টর জমিতে নির্ধারন করা হয়েছে।কিন্তু এ বছর লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বেশি আখ চাষ করেছেন কৃষকরা। প্রণোদনা সহায়তা আওতায় বাইরে অনেকে আখ চাষের মনোনিবেশ করেছেন।জেগে ওঠা চরের জমিতে এ বছর ব্যাপকভাবে আখের আবাদ করা হয়েছে। আখ বেশ পুষ্ট ও মোটা হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। আখ কেটে তা বিক্রিও শুরু করেছেন অনেক কৃষক।
কেউ আবার শেষ সময়ে আখ খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্যান্য ফসলের চেয়ে আখ চাষে লাভ বেশি হয়। সব খরচ বাদ দিয়ে প্রায় খরচের অর্ধেক লাভ থাকে। ওই এলাকার আখ চাষিরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে আখ চাষ করতে ২২-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর প্রতি বিঘা জমির আখ ৪০-৪৫ হাজার টাকা বিক্রি করা যায়। পাইকেররা জমি থেকেই আখ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান তারা। মেশিন দিয়ে আখ ভাংগনের কাজ শুরু হয়ছে।
যমুনা বিধৌত কাজিপুর উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের কমবেশি সব ইউনিয়নে আখের আবাদ হয় বিশেষ করে যমুনা নদীর পূর্ব পাশে ৬ টি ইউনিয়ন সহ মাইজবাড়ি ইউনিয়নের জেগে ওঠা চরাঞ্চলে এই মৌসুমিে আখ চাষ বেশি হয়েছে।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায় অনেক কৃষক আখ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে।মাইজবাড়ি ইউনিয়নের নতুন মাইজবাড়ি কৃষক আবু সাইদ জ্যোতি জানান, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অল্প সময়ের মধ্যে আখ চাষাবাদ ভালো হয়েছে। এতে বাম্পার ফলন হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ২ বিঘা জমিতে উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় আখ চাষ করেছি ফলনও ভালো হয়েছে।
বিনামূল্যে বীজ(চারা) ও সার পেয়ে আখ চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় আমাদের শ্রম বাবদ ১২-১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে । দাম ভালো হওয়ায় প্রতি বিঘা ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ করতে পারবো। হাটগাছা চরের কৃষক সিদ্দিক হোসেন জানান, ৩ বিঘা জমিতে আখের আবাদ করেছি ফলনও ভালো হয়েছে।সরকারের স্যার,বীজ পেয়ে ও উপ-সহকারী কৃষি অফিসার শাহীন আলম পরামর্শ দেন সেই অনুযায়ী কাজ করায় ফলন ভালো হয়েছে। তবে পণ্য সামগ্রী বিক্রির সুব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
রোগ মুক্ত পরিস্কার পরিছন্নতা বীজ উৎপাদন কর্মসূচির আওতায় ৪ জন কৃষক ৪ বিঘা জমিতে বীজ প্লট তৈরীতে আখের চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন।প্রকল্পের আওতা বর্হিরভুক্ত চর মাইজবাড়ি চরের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, ৪ বিঘা জমিতে আখের আবাদ করেছি ফলনও ভালো হয়েছে।দাম না কমলে লাভবান হওয়ার আশা করছি। আমাদের জমিতে আখের চারা রোপন করার পর থেকেই উপসহকারী কৃষি অফিসার শাহীন আলম সবসময় পরামর্শ দেন সে অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি ফলনও ভালো হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহীন আলম জানান, আখের চাষ করে লাভবান হওয়ার আশায় কৃষকরা এখন বেশি বেশি আখ চাষে ঝুঁকছে।আমি নিয়মিত আখের চারাগাছ রোপণের পর থেকেই কৃষকদের সাথে সরাসরি পরামর্শ দিয়ে আসছি।
এ ব্যাপারে কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান, “চরের জমি পলি দোঁআশের কারণে আখের ফলন ভালো হয়। কৃষি বিভাগ থেকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ মৌসুমে আখের চাষাবাদে কৃষি অফিস থেকে মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সঠিকভাবে কৃষকদের বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, তদারকি ও সহযোগিতা করেছেন। এবার আশানুরুপ ফলন পাবে কৃষকরা”।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজার ভালো থাকায় কৃষকের মুখেও ফুটেছে হাসি। অল্প খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা এ বছর প্রথম বারের মতো বেশি পরিমাণ জমিতে আখের চাষ করেছেন । স্থানীয় কৃষকরা আশাবাদী দাম না কমলে লাভবান হবেন।”আখের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে কৃষক ভাইদের প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রণোদনা সহায়তা প্রদান, বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ প্রদান করে আসছি। এবং কৃষকরা নিয়মিত কৃষি অফিসের সাথে যোগাযোগ রাখছে এবং আমাদের পরামর্শমত আখ চাষ করেছে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আখের বাম্পার ফলন হবে এতে কৃষকরা অনেকটা লাভবান হবে “জানিয়েছেন কাজিপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রেজাউল করিম।
Development by: webnewsdesign.com