আব্দুল হাই আল-হাদী
‘আপথে পথ, আঘাটে ঘাট আর অমানুষ মানুষ’ নাকি কলিকালের লণ। মুসলমানরাও ’আখেরি জামানা’য় এমনটি ঘটবে বলে বিশ্বাস করেন। সে ‘আপথে পথে’র এক বাস্তব চিত্র পাওয়া গেল সিলেটের জৈন্তাপুরের ‘বড়গাঙ’ নদীতে। নদীর বুক চিরে এপার থেকে ওপারে গাড়ি চলছে সড়ক পথের মতোই। ছোটখাটো যানবাহন থেকে একেবারে মালবাহী গাড়ীও দিব্যি চলাচল করছে এ পথ দিয়ে। এটা যে একটা নদী, ভরা বর্ষায় এখনও আগ্রাসী রূপ ধারণ করে, খেয়া দিয়ে পারাপার করতে হয় এপার থেকে ওপারে- যান চলাচল দেখে তা বোঝার কোন উপায় নেই। জৈন্তাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে লালাখাল রুটে ঘন্টায় ২০-৩০টি যানবাহন এভাবে চলাচল করে। শনিবার দেখা গেছে কলিকালের এ চিত্র।
‘সত্যযুগে’ বড়সড়ো আর গভীর ছিল এ নদী। আর তাই এর যথার্থ নামকরণও করা হয়েছে ‘বড়গাঙ’। ভারত-বাংলাদেশ সীমানা ঘেঁষে সারি নদী থেকে এটির জন্মলাভ আরও একাধিক নদীকে সঙ্গী করে সিলেট-তামাবিল সড়ক অতিক্রম করে ক্রমশ: এটি পশ্চিম দিকে ছুটে গেছে। নদীর পুরো অংশের মধ্যে লীপ্রাসাদ খেয়াঘাট থেকে রূপচেঙ্গ মাঝেরবিল পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা ধূ ধূ বালুচরে পরিণত হয়েছে। পাহাড়ী ঢল আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ’উন্নয়ন পাপের’ প্রভাবে এমনটি হয়েছে বলে আমরা মনে করি।
বড়গাঙ্গ কিন্তু এখনও বড় আছে, শুধুমাত্র এ পেটে জমা হয়েছে চর্বির স্তুপ। বিশ্বাস করি না তারপরও কেন জানি মনে হয়- ‘কলিকালের বড়গাঙ্গের’ ব্যাপারটি কোন ‘মহৎপ্রাণ কর্তাব্যক্তির’ দৃষ্টিতে পড়তেও পারে। অবিশ্বাস্য সে ব্যাপারটি যদি ঘটে থাকে তবে দেখা যাবে যে, সে/তিনি নদীবে যানচলাচল বন্ধ করে দিচ্ছেন। কিন্তু এরকম হলে ব্যাপারটি মোটেও যৌক্তিক, টেকসই বা দূরদর্শী কোন কাজ হবে না। বরং ‘জীবন্ত সত্ত্বা’ বড়গাঙ নদীকে তার হারানো অধিকার ও যৌবন ফিরিয়ে দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
এজন্য চিটি চালাচালি কিংবা আমলাতান্ত্রিক কোন প্রক্রিয়া লাগবে বলে মনে হয় না। কোন পয়সাও খরচ করতে হবে না। বড়গাঙ নদীতে কর্মরত বালু শ্রমিকদের অভয় দিয়ে মাত্র ১ মাস সময় দিলেই তারা স্বত:প্রণোদিত হয়ে এ কাজটি করতে পারবে। কিন্তু নূন্যতম এ কাজটি করতেও কী কেউ এগিয়ে আসবে না?
লেখক : সভাপতি, সারি বাঁচাও আন্দোলন
Development by: webnewsdesign.com