জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব বিবেচনা করে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণের ওপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, প্রয়োজনে লকডাউনেরও আহ্বান জানায়। সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকায় গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত যাত্রী পরিবহনের ব্যবস্থা চালু করা হয় বাংলাদেশে।
সম্প্রতি ‘কোভিড-১৯ পরবর্তী বাংলাদেশে যানবাহন ব্যবহারে পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিষয়ক’ বেসরকারিভাবে পরিচালিত একটি জরিপ প্রকাশিত হয়। ‘ইন্টারজেনারেশনাল পার্সপেকটিভ অব ট্রাভেল বিহেভিয়ার’-এর ওপর গবেষণারত কানাডার অন্টারিওর ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইডি গবেষক শায়লা জামাল জরিপটি পরিচালনা করেন। ৩০০ স্যাম্পল সাইজের ওপর পরিচালিত এ জরিপে দেখা গেছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণে ঝুুঁকিমুক্ত বাহন হিসেবে মোটরসাইকেলের অবস্থান সবার শীর্ষে।
গুগল কোভিড-১৯ কমিউনিটি মোবিলিটি রিপোর্ট অনুযায়ী লক্ষ্য করা যায়, করোনা সংক্রমণকালে বাস ট্রেনসহ গণপরিবহনে চলাচল ৩৬ শতাংশ কমে যায়। লকডাউন পরবর্তী সময়ে গণপরিবহন থেকে ব্যক্তিগত পরিবহন যেমন, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল ব্যবহারের দিকে বেশিমাত্রায় ঝুঁকতে থাকে মানুষ। কিন্তু বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে সিংহভাগ মানুষেরই প্রাইভেটকার ব্যবহারের সামর্থ নেই। সুতরাং তারা মোটরসাইকেল, সাইকেল ও হাঁটাকেই উপযুক্ত মনে করছেন।
জরিপের পর্যবেক্ষণ হিসেবে দুটি বিষয় প্রাধান্য পায়। (ক) কোভিড-১৯ মহামারিকালে বাংলাদেশের লোকজন, বিশেষত ছাত্রদের মাঝে একা বা ব্যক্তিগতভাবে চলাচলের জন্য মোটরসাইকেল, সাইকেল এবং হাঁটার প্রবণতা বেড়েছে। (খ) বিভিন্ন ধরনের পরিবহন ব্যবহারে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঝুঁকির বিষয়টিও তুলনামূলকভাবে বেশি বিবেচিত হচ্ছে।
বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কাঠামোর প্রাতিষ্ঠানিক কর্মজীবী, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের ওপর পরিচালিত এ জরিপে অংশগ্রহণকারীরা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকিমুক্ত পরিবহন হিসেবে মোটরসাইকেলকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন।
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ৭৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ মনে করেন, ঢাকায় গণপরিবহনে সামাজিক/শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব নয়, তেমনি ফুটপাতেও ঝুঁকিমুক্তভাবে হেঁটে চলাচল অসম্ভব। অন্যদিকে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের সামর্থ্য রয়েছে খুব কম মানুষের। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে উবার বা অন্যকোনো রাইড শেয়ারিং বাহন ব্যবহারও ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, আগের যাত্রীদের মাধ্যমে যেমন গাড়ির সিট, দরজার হাতলসহ বিভিন্ন জায়গায় ভাইরাস থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তেমনি চালকের মাধ্যমে কিংবা তার অসচেতনার কারণেও ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। অন্যদিকে বাংলাদেশের আর্দ্র আবহাওয়া, ধুলাবালি, বৃষ্টি প্রভৃতির কারণে বাইসাইকেল ব্যবহারও প্রাতিষ্ঠানিক কর্মজীবী ও ছাত্রদের কাছে তেমন সুবিধাজনক ও গ্রহণযোগ্য বাহন নয়। সেক্ষেত্রে নিরাপদ ও সংক্রমণ ঝুঁকিমুক্ত পরিবহন হিসেবে মোটরসাইকেল/স্কুটি/স্কুটারই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য এবং সেরা হিসেবে মতামত পাওয়া গেছে।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ মনে করেন মোটরসাইকেলে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব। ৭৯ শতাংশ মানুষের মতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে মোটরসাইকেলই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত বাহন। ৮৪ শতাংশ মানুষ মনে করে মোটরসাইকেল পরিবহন হিসেবে সুবিধাজনক। ৬৯ শতাংশ মানুষ মনে করেন মোটরসাইকেল তাদের জন্য সাশ্রয়ী বাহন।
জরিপে অংশগ্রহণকারী ৩৩ শতাংশ মানুষ আগামী এক বছরের মধ্যে মোটরসাইকেল কেনার ইচ্ছাও পোষণ করেন। সাধারণ জনগণ, স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ, পরিবহন-পরিকল্পনাকারী ও বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রমণের এই দুঃসময়ে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলে মোটরসাইকেলই সবচেয়ে সেরা বাহন।
সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে জরিপের সারসংক্ষেপ হিসেবে বলা যায়, করোনার এই মহামারির সময়ে মোটরসাইকেল/স্কুটি/স্কুটারই বেশিরভাগ মানুষের কাছে সবচেয়ে পছন্দের, সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য এবং সেরা বাহন হিসেবে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছে।
Development by: webnewsdesign.com