কঠোর সমালোচনার মুখে মুস্তফা কামাল, ‘আমি বিশ্বে এক নম্বর অর্থমন্ত্রী’

বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৯:৫১ অপরাহ্ণ

কঠোর সমালোচনার মুখে মুস্তফা কামাল, ‘আমি বিশ্বে এক নম্বর অর্থমন্ত্রী’
apps

জাতীয় সংসদে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়লেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদে স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যানশিয়াল কর্পোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরিতে বিল পাসের জন্য সংসদে তুললে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সাংসদের তোপের মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী।

 

 

 

জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সদস্যরা বিলটি প্রত্যাহারের দাবিও জানান। সম্প্রতি সময়ে কোনো বিল পাসের সময় এ ধরনের তীব্র বিরোধিতা দেখা যায়নি। পরে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

বিল পাসের আগে সংসদে উপস্থিত বিএনপির তিন এমপি অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াকআউট করেন। বিলের তীব্র বিরোধিতাকারী জাতীয় পার্টির সদস্যরা ওয়াকআউট না করলেও বিলটি কণ্ঠভোটে দিলে তারা না ভোট দেন।

বিরোধিতাকারী সংসদ সদস্যরা এই বিলটিকে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে বিলের উপর নিজেদের দেওয়া সংশোধনী প্রস্তাবগুলোও প্রত্যাহার করে নেন।

ঋণ কেলেঙ্কারিতে ব্যাংক খাত ধুঁকতে থাকার মধ্যে এই আইন করা হলে তা একটি ‘কালো আইন’ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মন্তব্য করেন বিরোধী দলেন সাংসদরা।

এসময় সংসদ সদস্যরা প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন। জানতে চান শেয়ারবাজারে ধস, অর্থপাচার ও ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন, সে প্রশ্ন তুলে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের সমালোচনা করেন তারা। অর্থমন্ত্রী যে একজন ‘ব্যবসায়ী’, সে কথাও ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলেন কেউ কেউ।

জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন,জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ী হলে যা হয় তাই হয়েছে। বাজেট করার সময় চিন্তা করে নাই? রাজস্ব ঘাটতি সম্পর্কে চিন্তা করে নাই? ৩৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি। আগের বছরের চেয়ে ৪৫ ভাগ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ঠিক করেছিলো। করেছে মাত্র ৭ শতাংশ। এনবিআরের ব্যর্থতার কারণে এই বিল সমর্থন করতে পারছি না।

 

 

 

আমি একজন অ্যাডভোকেট। এটা বললে কী অপরাধ হবে? উনি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট। কিন্তু উনার মূল পরিচয় একজন ব্যবসায়ী। এটাতে আহত হওয়ার কারণ নেই। আমরা আশা করেছিলাম, সাকসেসফুল বিজনেসম্যান। অর্থনীতিতে ভালো করবেন। কতদূর ভালো করেছেন উনি চিন্তা করবেন। ব্যাংকের মালিক ডিরেক্টররা ঋণ নিয়ে বসে আছেন। এটা কী দেশ? টাকা পাচার হয় উনি ব্যবস্থা নেয় না। বিভিন্ন সংস্থার টাকা খরচ করছেন। আগামী বছর ট্যাক্স না পেলে কী করবেন? ২০১৭ সালে আমাকে বেস্ট লেবার মিনিস্টারের অ্যাওয়ার্ড দিয়েছিলো। কেন যে দিয়েছিলো তা আমি জানি না।’

বিগত সরকারের শ্রম প্রতিমন্ত্রী চুন্নু বলেন, “২০১৭ সালে আমাকে বেস্ট লেবার মিনিস্টারের অ্যাওয়ার্ড দিয়েছিল। কেন যে দিয়েছিল, তা আমি জানি না।
অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, “অর্থমন্ত্রী অসাধারণ মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সাধারণ অবস্থা থেকে ব্যবসায়ী হয়েছেন। উনি অর্থনীতি বোঝেন না এটা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। তাহলে সমস্যটা কোথায়? উনার সদিচ্ছার অভাব। এত মেধাবী তিনি কিন্তু শেয়ারবাজার, খেলাপি ঋণ নিয়ে কিছু করলেন না। কেন মেধাবী অর্থমন্ত্রী এদিকে নজর দিচ্ছেন না? উনি ধনী সমাজের জন্য অর্থমন্ত্রী হন নাই। কেন খেটে খাওয়া মানুষের দিকে উনার নজর নেই?”

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, অর্থমন্ত্রী শিক্ষিত লোক। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট আমরা জানি। উনার সময়ে পুঁজিবাজারে ১০ হাজার ইনডেক্স ওঠেছিল। যখন উনি পরিকল্পনামন্ত্রী, তখনই তিনি বলেছিলেন, ৪ হাজার হওয়ার কথা, কীভাবে ১০ হাজার হলো।

‘উনি জানতেন না। ব্যাংকের মালিক সমিতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী-অর্থমন্ত্রী বসেন। কিভাবে হয় এটা? নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠের ক্ষমতা দেখাবেন না। নিরঙ্কুশ সংখ্যগরিষ্ঠ অনেক দল অনেক দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে।

জবাব দিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, একবার চিন্তা করে দেখেন। সাইফুর রহমান চার্টার্ড একাউনটেন্ট ছিলেন। আমিও তাই। আমি সারা বিশ্বের এক নম্বর অর্থমন্ত্রী। পারসোনাল লেভেলে কথা বলবেন, এটা ঠিক নয়। আমিও অনেক কিছু বলতে পারি। সবারই বিষয়েই আমি জানি।

বিলের পক্ষে যুক্তি দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলো কার টাকার তৈরি হয়েছে? সরকারের টাকায়। জনগণের টাকায়। তৈরির সময় যদি সরকার টাকা দেয় তবে লাভের সময় ইচ্ছামতো বোনাস নেবে। বিদেশে ঘুরবে তা হয় না।

আজকের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

প্রসঙ্গত, লন্ডনভিত্তিক ‘দ্য ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস’ গ্রুপের সাময়িকী ‘দ্য ব্যাংকার’ গেল মাসে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে ‘ফাইন্যান্স মিনিস্টার অব দ্য ইয়ার ২০২০’ ঘোষণা করে।

সে সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারা বিশ্বের অর্থমন্ত্রীদের আর্থিক খাতে গতিশীলতা আনা ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে গৃহীত পদক্ষেপসহ সার্বিক বিবেচনায় এ পুরস্কার দেওয়া হয়।

এশিয়া-প্যাসিফিক, আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ- এই পাঁচটি অঞ্চল থেকে পাঁচ জন অর্থমন্ত্রীকে বাছাই করা হয় এবং তাদের মধ্যে থেকে একজনকে ‘বিশ্বের শ্রেষ্ঠ’ অর্থমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

Development by: webnewsdesign.com