এমন গৌরবের দিনে নেই মুহিতএমন গৌরবের দিনে নেই মুহিত

শনিবার, ২৫ জুন ২০২২ | ২:৫০ অপরাহ্ণ

এমন গৌরবের দিনে নেই মুহিতএমন গৌরবের দিনে নেই মুহিত
apps

২০১১ সালে যখন পদ্মা সেতু নির্মাণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল তখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। দীর্ঘ ১০ বছর পর সব ষড়যন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ কাজ শেষে আজ উদ্বোধন হল দেশের বৃহৎ যোগাযোগ স্থাপনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

শনিবার (২৫ জুন) সকালে যখন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হল তখন প্রধানমন্ত্রীর পাশে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান, সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও তৎকালীন সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। কিন্তু বাংলাদেশের সেই ঐতিহাসিক গৌরবের দিনে কেবল পাশে নেই বর্ষীয়ান নেতা সাবেক মন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনেক আগেই গত ২৯ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

শনিবার সেতুর জমকালো উদ্বোধন উপলক্ষে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাসহ মাওয়া প্রান্তে সকাল থেকেই উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পদ্মার পাড় সাজে নতুন রূপে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের এ আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে।

সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় স্থাপনা পদ্মা সেতু। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। দ্বিতল এই সেতুর এক অংশ পদ্মা নদীর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত এবং অপর অংশ নদীর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যুক্ত। একই সঙ্গে ট্রেন ও গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এ সেতুতে। চার লেন বিশিষ্ট ৭২ ফুট প্রস্থের এ সেতুর নিচতলায় রয়েছে রেল লাইন। এর মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতুর পাইলিং ও নদীশাসনের কাজ উদ্বোধন করেন। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মাধ্যমে দৃশ্যমান হতে শুরু করে পদ্মা সেতুর কাঠামো। এরপর একে একে সব ধাপ পেরিয়ে পদ্মার বুকে ৪২টি পিলারের ওপর দৃশ্যমান হয়ে ওঠে স্বপ্নের সেতু। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সেতু চালু হলে বাংলাদেশের জিডিপি ১.২ থেকে ১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

এর আগে ২০১১ সালে প্রথম যখন ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তখন প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার। যেখানে বিশ্বব্যাংকের ১২০ কোটি ডলার, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৬১.৫ কোটি, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ৪১.৫ কোটি এবং ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) ১৪ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে ঋণচুক্তি স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক। ঋণ পেতে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া চারটি শর্ত পালন না করায় দীর্ঘ নয় মাস পর ২০১২ সালের ২৯ জুন ঋণচুক্তি বাতিল করে দাতা সংস্থাটি।

এরপর দুর্নীতির সন্দেহভাজন সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগ ও প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে ছুটিতে পাঠানোর পর ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু প্রকল্পে পুনরায় সম্পৃক্ত হওয়ার ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক। শর্তানুসারে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুদক একটি বিশেষ অনুসন্ধান টিম গঠন করে। আর দুদকের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করার জন্য ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করে। এরপর ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর প্রথম দফা বাংলাদেশ সফরে এসে দুদকে সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করে ও ২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশ সফর করে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ছাড়াই বাংলাদেশ ত্যাগ করে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল। এরপরই বাংলাদেশ ২০১৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আবেদন প্রত্যাহার করে নেয়।

২০১৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আদালতে উপস্থাপনযোগ্য যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় পদ্মা সেতু দুর্নীতির ষড়যন্ত্র মামলা থেকে সাত আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (এফআরটি) দিয়েছিল দুদক। ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থানায় (মামলা নম্বর ১৯) মোট সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলার আসামি ও পরবর্তীতে অব্যাহতি প্রাপ্তরা হলেন, সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইপিসির উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম মোস্তফা, কানাডীয় প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের প্রাক্তন ভাইস-প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ এবং প্রাক্তন পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল।

সংগৃহীত : সিলেট টুডে ২৪

Development by: webnewsdesign.com