সিলেট বিভাগে অনাবাদি জমির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। শুধু তাই নয়- সারা দেশের মধ্যে অনাবাদি জমির হিসাবে সিলেট শীর্ষে। এসব পতিত জমি চাষের আওতায় আনার জন্য ইতিপূর্বে কৃষি বিভাগ নানা উদ্যোগ নিলেও সেগুলো কার্যকর হয়নি।
কৃষিকাজের প্রতি মানুষের অনাগ্রহ, ধান-চাল ও কৃষিপণ্যের নায্য দাম না পাওয়া, চাষের ক্ষেত্রে খরচ বেড়ে যাওয়া ও অনেক জমির মালিক বিদেশে থাকাসহ নানা কারণে কৃষি জমির পরিমাণ সিলেটে কমছে। পাশাপাশি বাড়ছে আবাদযোগ্য পতিত জমির সংখ্যা। তবে এবার সিলেট অঞ্চলের পতিত সকল জমি কাজে লাগাতে বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উপকার পাবেন বিভাগের ৪০ উপজেলার মানুষ। এছাড়াও উৎপাদিত ফসল অবদান রাখবে জাতীয় অর্থনীতিতে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের ৪ জেলায় (সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার) মোট ফসলি জমির পরিমাণ ১২ লাখ ৫৬ হাজার ৮৫৭ হেক্টর। এর মধ্যে রবি মৌসুমে ১ লক্ষ ৯৪ হাজার হেক্টর জমি রবি পতিত থাকে। এসব পতিত জমি ব্যবহারের জন্য ২০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। ‘আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
সূত্র জানিয়েছে, সিলেটের পতিত জমি ব্যবহার করে আধুনিক প্রযুক্তির বিস্তার ও শস্য বহুমুখীকরণের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন, কৃষকের আয় ও কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং পুষ্টি ও সামাজিক ব্যবস্থার টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২০০ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জুনে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২৬ সালের জুন নাগাদ শেষ হবে। এতে সিলেট বিভাগের ৪টি জেলার ৪০টি উপজেলার মানুষ উপকৃত হবেন। প্রকল্পতি সম্প্রতি একনেকে অনুমোদন পেয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় শুরুতেই বাছাই করে বিভাগের ৮ হাজার ১৭৮টি ব্যাচে কৃষক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রতি ব্যাচে ৩০ জন কৃষক থাকবেন। ৯৫ ব্যাচ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নেবেন। প্রতি ব্যাচে ৩০ জন করে কর্মকর্তা থাকবেন। প্রশিক্ষণকালে কৃষকদের ৪৭ হাজার ৯৭৯টি বিভিন্ন ফসল ও ফলের জাত প্রদর্শনী এবং ৪০টি পলিশেড হাউজ প্রদর্শনী স্থাপন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৭৭৭টি ফিতা পাইপ সেট, ৫০০টি এলএলপি, ৩৫৫৪টি স্প্রেয়ার, এক হাজার পাওয়ার স্প্রেয়ার, ১৭৭৭টি ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র কেনা হবে। ১২০টি সফরও রয়েছে এই প্রকল্পের আওতায়। প্রকল্পের আওতায় ১২০টি কৃষি মেলা ও ৫টি কর্মশালাও আয়োজন করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক দিলীপ কুমার অধিকারী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সিলেট অঞ্চলের বহু জমি পরিত্যক্ত রয়েছে। সিলেট জেলার আয়তন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বর্গ কিলোমিটার। ভারতের খাশিয়া ও জৈন্তা পাহাড়ের কিছু অংশ এই জেলায় পড়েছে। কিছু ছোট পাহাড় ও টিলা রয়েছে এখানে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জৈন্তাপুর (৫৪ মাইল), সারি টিলা (৯২ মাইল), লালখান টিলা (১৩৫ মাইল) ও ঢাকা দক্ষিণ টিলা (৭৭.৭ মাইল)। এসব টিলার প্রায় সব জমিই পতিত। এসব জমিসহ সকল পতিত এবার কাজে লাগাতে বড় প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সিলেটের পতিত জমিতে ফলবে সোনা। পাশাপাশি এসব জমিতে উৎপাদিত ফসল জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে।
দিলীপ কুমার অধিকারী আরও জানান, বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষি প্রযুক্তি পদ্ধতির প্রবর্তন, আধুনিক কৃষি চর্চা আত্তীকরণকে উৎসাহিত করা, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও একটি টেকসই গ্রাম অঞ্চলের কৃষি পরিবারের প্রকৃত আয় বৃদ্ধিকরণ সংক্রান্ত প্রকল্প এটি। বৃহত্তর সিলেটের পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনা, জলবায়ুর ঝুঁকি এড়াতে সক্ষম লাগসই কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে শস্যের নিবিড়তা বাড়ানোর পাশাপাশি ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিকরণে প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
Development by: webnewsdesign.com