এগিয়ে যাচ্ছে দেশ এগিয়ে চলছে পীরগঞ্জের মেয়েরা

সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ৪:৫৩ অপরাহ্ণ

এগিয়ে যাচ্ছে দেশ এগিয়ে চলছে পীরগঞ্জের মেয়েরা
apps

উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা, বিভিন্ন সুচকে বেশ এগিয়ে এখানকার মানুষ। বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদন, শিক্ষা, স¦াস্থ্য, নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ইত্যাদি। খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন এই উপজেলার মানুুষের চাহিদা পূরণ করে ধান,ভূট্টা,গম,আম,কলা,শাকসব্জি,মাছ সহ অন্যান্য খাদ্য দ্রব্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়। ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে পীরগঞ্জ উপজেলা। বিভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষের এখানে সহবস্থান। শান্তিপ্রিয় এ এলাকার মানুষ রাজনৈতিক ভাবে বেশ সচেতন । স্বাধীনতা যুদ্ধে এই এলাকার রয়েছে বিরাট গৌরবময় ইতিহাস।

আদিকালে নারীরা সমাজের মূখ্য নেতৃত্বে ছিল। মর্যাদার দিক থেকে নারীরা ছিল শ্রেষ্ঠ । ধীরে ধীরে পুরুষরা জীবিকা অর্জনে প্রাধান্য স্থাপন করে নারীর কতৃত্ব কেড়ে নেয় । আয় ব্যয়ের পর উদ্বৃত্ব সম্পদের মালিক হওয়া শুরু করে পুরুষরা । নারীরা সে সম্পদ ব্যবহার করতে পারলেও মালিক হতে পারতনা। এভাবেই নারীরা পুরুষদের কাছে সিংহাসন হারিয়ে সমাজে মর্যাদাহীন হয়ে পড়ে । গোড়াপত্তন হয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজের । পৃথিবীতে মানবজাতি সামাজিক ভাবে জন্ম নেয় মানুষ হিসেবে। পরবর্তীতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় কন্যা সন্তানটি হয় নারী আর পুত্র সন্তানটি হয়ে উঠা শুরু করে পুরুষ হিসেবে। সমান মর্যাদায় নারীদের ফিরে আসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন নারীশিক্ষা এবং উপার্জনের জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে আসা। ঘরের কাজ গুলোকে মূখ্য না ভেবে গৌণ কাজ হিসেবে মনে করার মাধ্যমেই নারীরা তাদের মুক্তির পথ তরান্বিত করতে পারে। সেই পথ ধরেই এগিয়ে চলছে গ্রামে গঞ্জের স্বপ্নবান মেয়ে শিশু এবং কিশোরিরা।

এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। পিছিয়ে নেই কোন এলাকা বা কোন জনগোষ্ঠী, পিছিয়ে নেই ঠাকুরগাঁও জেলা এগিয়ে চলছে পীরগঞ্জ এবং পীরগঞ্জের বিভিন্ন গ্রাম এবং ইউনিয়ন। শিক্ষা বিস্তারে পীরগঞ্জ উপজেলার উন্নতি চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে নারী শিক্ষায় পীরগঞ্জ আশেপাশের উপজেলা গুলোর চেয়ে বেশ এগিয়ে। উপজেলার ৫নং সৈয়দপুর ইউনিয়নের মেয়েদের শিক্ষাক্রমে অংশগ্রহন খুবই আশাব্যঞ্জক একটি বিষয়। এই ইউনিয়নে রয়েছে ১৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫ টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩ টি মাদ্রাসা ।

সবকটি বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী পর্যাপ্ত। মেয়ে শিশু কিশোরিদের বিষয়ে এই প্রতিষ্ঠান গুলির শিক্ষক মন্ডলি বিরাট ভূমিকা পালন করছে ছাত্রীদের নিব্রিগ্নে প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়ার ব্যাপারে । স্কুলের সময় হলে দুর দুরন্ত থেকে ছুটে আসছে ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ। ধানক্ষেতের আল দিয়ে, কাঁদা পানি পেড়িয়ে, কাঁচারাস্তা কখনো বা পাঁকা রাস্তা ধরে কেউ হেটে কেউ বাইসাইকেলে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জ্ঞান আহরনের জন্য । মেয়েদের শিক্ষাপ্রাতষ্ঠানে উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। চারপাশে সবুজ ধানক্ষেত সারিসারি আমবাগান যেনো পুরো ইউনিয়নটিকে ঘিরে রেখেছে প্রকৃতি। পাকা রাস্তা, কাঁচা রাস্তা , সরুপথ, পুকুর, নারিকেল গাছ সব মিলিয়ে যেন এই ইউনিয়টি প্রকৃতি এবং মানুষের মধ্যে এক গভীর ভালবাসায় এগিয়ে যাচ্ছে । আর সেই পথে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীরা যখন সারি সারি ভাবে বাইসাইকেলে স্কুলে যায় তখনতো রিতিমত আমাদের স্মরন করিয়ে দেয় দেশটির এগিয়ে যাওয়ার কথা। দারিদ্রতা, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে এই কন্যা শিশুদের ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়া, ছুটে চলা এক নতুন বাংলাদেশের বীজ রোপন করতে চলেছে প্রত্যন্ত এই অঞ্চলের কন্যা শিশুরা।

প্রধান শিক্ষিকা জেলার শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক মেহেরুন নেছা গর্বের সাথে বলেন, এই এলাকার মেয়েরা সব দিক দিয়ে এগিয়ে। পড়াশুনায় বেশ ভাল, স্কুলে উপস্থিতির হার ৯০% উপরে। ইকতিয়ারপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহ কারী প্রধান শিক্ষক অনীল চন্দ্র রায় খুব উ”্ছাসিত হয়ে বলেন এলাকার মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ায়। তিনি বলেন জাতি গঠনের মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ খুব জুরুরী ।

স্থানীয় শিক্ষক আমির আলীর দৃষ্টিতে এ এলাকার মেয়েদের স্কুলের আসার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে সরকারের ও বে-সরকারি সংস্থার বেশ কিছু ভালো উদ্যোগ । তরুন শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন , শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার । জেন্ডার বৈষ্যম্যের কারণে কেন একটি কন্যা শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে ? আমাদের ্্্্ইউনিয়নের প্রতিটি মেয়ে শিশু শিক্ষার আওতায় রয়েছে ।

কথা হয় ৫ নং সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একরামুল হক এর সাথে । অত্যন্ত বিনয়ী মানুষটা তার এলাকার উন্নয়নের অনেক গল্প করলেন । স্বগর্বে তিনি বলেন , যেখানে দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী সেখানে তাদের ঘরে আটকে রাখলে দেশের ,এলাকার উন্নতি হবে কিভাবে ? আমরা এলাকার নারীদের ঘরের বাইরে বিভিন্ন পেশার সাথে সম্পৃক্ত করতে উৎসাহিত করছি । সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি মেয়ে শিশু কিশোরিদের শিক্ষা গ্রহণে স্কুলে পাঠানোর বিষয়ে । একজন শিক্ষিত মা জাতি গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে । তাই নারী শিক্ষায় আমার ইউনিয়ন বহুদূর এগিয়ে । বহু দূর – দূরান্ত থেকে যাওয়া আসা কষ্টের বিবেচনায় অনেক মেয়ে শিক্ষার্থীকে বাইসাইকেলের ব্যবস্থা করে দিয়েছি । প্রতিটির শিশুর অবিভাবকের সাথে কথা বলে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার বিষয়টি আমরা প্রতিনিয়ত তদারকি করে আসছি । উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাবিবুল ্ইসলাম বলেন , প্রথমত এ উপজেলায় নারী শিক্ষা এগিয়ে আশপাশ যে কোন উপজেলার চেয়ে। এছাড়া ৫নং ইউনিয়নের মেয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে উপস্থিতি এবং ফলাফল খুব ভালো। স্কুল ভিজিটে যাওয়ায়ার সময় ঐ এলাকার মেয়ে বাচ্চাদের সারি সারি ভাবে বাইসাইকেলে স্কুলে যাওয়ার দৃশ্য ভবিষ্যতের উন্নত বাংলাদেশের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

শিক্ষার হার এবং মেয়েদের কর্মসৃজনে এ এলাকা অনেক এগিয়ে। পীরগঞ্জ বাংলাদেশের একটি উপজেলা আর এই উপজেলার সৈয়দপুর একটি ইউনিয়ন মাত্র। এতো প্রত্যন্ত অঞ্চলে যে পরিবর্তন তা উল্লেখ করার মতো। কৃষিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে একর প্রতি ধানের ফলন ৮০/১০০মন। প্রচুর আম বাগান সৃজন হয়েছে । বছরে একেকটি বাগান থেকে বাগান চাষিরা ভালোই পয়সা পাচ্ছে। মাছ চাষ, গরু ও মুরগী চাষে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান যেমন হয়েছে মানুষ পয়সাও পাচ্ছে। এই ইউনিয়নের অধিকাংশ ঘড়বাড়ি আধাপাকা। এলাকার মানুষ শান্তিপূণ্য ভাবে বসবাস করছে। ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠায় শিক্ষা গ্রহনের জন্য, বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের বিষয়ে অভিবাবকদের ধ্যান ধারনার পরির্বতন হয়েছে। প্রতিটি মেয়ে শিশু শিক্ষার আওতায় রয়েছে। দেশ যে এগিয়ে জাচ্ছে তার প্রমান গ্রামীন অবকাঠামোর উন্নয়ন যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,রাস্তা ঘাট ব্রিজ কাল ভাট,সেনিট্যাসন, এবং বিদ্যুতায়ন স্বপ্নের মত এগিয়ে গেছে। সেই এগিয়ে চলাকে স্থায়ী রুপ দিতে পীরগঞ্জের পাচঁ নং ইউনিয়নে ধর্মান্ধতা.কুসংস্কার ছেড়ে আমাদের মা বোনেরা ঘর থেকে বেড়িয়ে উর্পাজনে সামিল হয়েছে। বিশেষ করে সুন্দর জাতি গঠনে এলাকার মেয়ে শিশুরা মনে বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়াশুনা করছে। খুব বেশি দিন নয় আমাদের এই ছোট্র স্বপ্ন বান শিশুরা দেশ কে একটা অন্যমাত্রায় নিয়ে যাবে, সেই সাথে বাঙ্গালি জাতি তাদের সোনার বাংলার স্বাদ গ্রহন করবে।

Development by: webnewsdesign.com