দ্রুত হাঁটা, দৌঁড়ানো, সাইকেল চালানো অর্থাৎ হার্ট পাম্পিংকে প্রভাবিত করে এমন যেকোনো কার্ডিওরেসপিরেটরি এক্সারসাইজ আপনার শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে, এসব এক্সারসাইজ মস্তিষ্কের কগনিটিভ ক্ষয় ধীরও করতে পারে।
কগনিটিভ ফাংশন হচ্ছে বুদ্ধিগত প্রক্রিয়া- যা সকল ধরনের উপলব্ধি, চিন্তাভাবনা, যুক্তিপ্রদান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যা সমাধান, জ্ঞানার্জন, মনোযোগ ও স্মরণের সঙ্গে জড়িত। জার্মান সেন্টার ফর নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজের পরিচালিত গবেষণায় কার্ডিওরেসপিরেটরি এক্সারসাইজ ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের মধ্যে যোগসূত্র পাওয়া গেছে, বিশেষ করে গ্রে ম্যাটার ও টোটাল ব্রেইন ভলিউমের ক্ষেত্রে। এ গবেষণাটি সম্প্রতি মায়ো ক্লিনিক প্রসিডিংসে প্রকাশ করা হয়েছে।
মস্তিষ্কের টিস্যু গঠিত হয়েছে গ্রে ম্যাটার ও ফিলামেন্ট দিয়ে। ফিলামেন্টকে হোয়াইট ম্যাটারও বলা হয়, যার বিস্তৃতি গ্রে ম্যাটার কোষ থেকে। গ্রে ম্যাটারের সঙ্গে বিভিন্ন দক্ষতা ও কগনিটিভ সামর্থ্যের পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন, শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়লে গ্রে ম্যাটারের ভলিউমও বৃদ্ধি পায়। গ্রে ম্যাটারের পরিমাণ বাড়লে কগনিটিভ সামর্থ্য বেড়ে যায়। এটা জেনে রাখা ভালো যে, এক্সারসাইজ বা শরীরচর্চা রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ায়।
এ গবেষণাটি চালানো হয়েছে উত্তর-পূর্ব জার্মানির দুটি গোত্রের ২,০১৩ জন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের ওপর। তাদেরকে ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সময়কাল পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়। এসব অংশগ্রহণকারীকে সাইকেল চালাতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপর অক্সিজেন গ্রহণের পরিমাণ ও অন্যান্য মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে তাদের কার্ডিওরেসপিরেটরি ফিটনেস পরিমাপ করা হয়। মস্তিষ্কের এমআরআই উপাত্তও বিশ্লেষণ করা হয়। এ গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে যে কার্ডিওরেসপিরেটরি এক্সারসাইজ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করতে ও গ্রে ম্যাটারের ক্ষয় ধীর করতে অবদান রাখতে পারে। মায়ো ক্লিনিকের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, উৎসাহব্যঞ্জক এ ফলাফল মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ধরে রাখতে এক্সারসাইজের ওপর গুরুত্ব দিতে মানুষকে আরো সচেতন করে তুলবে।
এ সম্পাদকীয় নিবন্ধের লেখক ও মায়ো ক্লিনিকের স্নায়ুবিশারদ রোনাল্ড পিটারসেন বলেন, ‘এ গবেষণার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে- এক্সারসাইজে মোটর ফাংশনের চেয়ে মস্তিষ্কের কগনিটিভ ফাংশনে লক্ষণীয় প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। এ গবেষণার আরেকটি ভালো দিক হচ্ছে, এ ফলাফল বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রেও সত্য হতে পারে। ভালো প্রমাণ রয়েছে যে, এক্সারসাইজে তরুণ ও মধ্যবয়সে ভালো উপকার পাওয়া যায়, কিন্তু এ গবেষণা সাজেস্ট করছে যে এ ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জীবনের পরবর্তী ধাপেও পাওয়া যেতে পারে।’
এ গবেষণায় কার্ডিওরেসপিরেটরি এক্সারসাইজ ও গ্রে ম্যাটারের উচ্চ ভলিউমের মধ্যে যে সম্পর্ক ধরা পড়েছে তা বয়সজনিত কগনিটিভ পরিবর্তন ধীর করতে অথবা অ্যালঝেইমারস রোগের মতো স্মৃতিভ্রংশতা এড়াতে ক্লিনিক্যালি প্রাসঙ্গিক হতে পারে। মায়ো ক্লিনিকের অ্যানেস্থেশিওলজিস্ট, ফিজিওলজিস্ট ও গবেষণা নিবন্ধের অন্যতম লেখক মাইকেল জয়নার বলেন, ‘ফিজিক্যাল ফিটনেস বা শারীরিক সক্রিয়তা বয়সজনিত কগনিটিভ ক্ষয় থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। ইতোমধ্যে যথেষ্ট এপিডেমিওলজিক্যাল প্রমাণ রয়েছে যে শারীরিক সক্রিয়তায় মস্তিষ্কের রক্তনালীর ফাংশন উন্নত হয়।’
মায়ো ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞরা প্রতিসপ্তাহে প্রায় ১৫০ মিনিট কার্ডিওরেসপিরেটরি এক্সারসাইজ করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। ভালো কার্ডিওরেসপিরেটরি ফিটনেসের জন্য এ বিষয়গুলোও অনুসরণ করতে হবে: ধূমপান না করা, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, ওজন কমিয়ে ফেলা বা স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে না দেয়া ও রক্ত শর্করার মাত্রা ব্যবস্থাপনা করা (সময়ের আবর্তনে উচ্চ রক্ত শর্করা হার্ট ও অন্যান্য অর্গানকে ড্যামেজ করে)।
Development by: webnewsdesign.com