একাধিক সম্পর্কের দ্বন্দ্বে হোটেলে নারী চিকিৎসক খুন

শনিবার, ১৩ আগস্ট ২০২২ | ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

একাধিক সম্পর্কের দ্বন্দ্বে হোটেলে নারী চিকিৎসক খুন
apps

চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দীককে পূর্বপরিকল্পিতভাবে রেজাউল করিম হত্যা করেন বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। জন্মদিন পালনের কথা বলে চিকিৎসককে রাজধানীর পান্থপথের একটি আবাসিক হোটেলে নেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার কারওয়ান বাজারে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানিয়েছেন। গ্রেপ্তার রেজাউলের তথ্যের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই চিকিৎসকের সঙ্গে ২০১৯ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় রেজাউলের।

২০২০ সালের অক্টোবরে উভয়ের পরিবারকে না জানিয়ে তাঁরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করেন। পরে রেজাউলের সঙ্গে একাধিক নারীর সম্পর্ক আছে বলে জানতে পারেন ওই চিকিৎসক। চিকিৎসক বিষয়টি নিয়ে রেজাউলের সঙ্গে বিভিন্ন সময় কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এর পরও তাঁরা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে থাকতেন। পরে এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন সময় বাগবিতণ্ডা হয়। ছিল সম্পর্কের টানাপড়েন। তাই রেজাউল এক পর্যায়ে তাঁর জীবনের ‘বাধা’ দূর করতে চিকিৎসককে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন। আবাসিক হোটেলে যাওয়ার আগে স্ত্রীকে খুন করার উদ্দেশ্যে ব্যাগে করে ছুরি নিয়ে যান রেজাউল। এ তথ্য জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চিকিৎসকের জন্মদিন ছিল ১২ আগস্ট। এর আগেই গত ১০ আগস্ট জন্মদিন উদযাপনের কথা বলে রেজাউল চিকিৎসককে পান্থপথের ফ্যামিলি অ্যাপার্টমেন্ট হোটেলের ৩০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে অন্য নারীর সঙ্গে রেজাউলের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। একসময় রেজাউল তাঁর ব্যাগ থেকে ছুরি বের করে চিকিৎসক জান্নাতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। পরে গলা কেটে চিকিৎসকের মৃত্যু নিশ্চিত করে তিনি গোসল করে গায়ের রক্ত ধুয়ে ফেলেন। তারপর জান্নাতের মোবাইল ফোন নিয়ে বাইরে থেকে ওই কক্ষে তালা দিয়ে চলে যান।

র‌্যাব বলেছে, হোটেল থেকে বেরিয়ে রেজাউল প্রথমে মালিবাগে তাঁর বাসায় যান। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে একটি হাসপাতালে যান। ধস্তাধস্তিতে তাঁর হাত কেটে গিয়েছিল, সেখানে সেলাই করে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন। পরে আরামবাগ থেকে বাসে করে চট্টগ্রামে চলে যান। এদিকে রেজাউল না ফেরায় হোটেল কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়। বুধবার রাতে পুলিশ গিয়ে ওই কক্ষে জান্নাতের গলা কাটা লাশ পায়। র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ঘটনার পর কলাবাগান থানায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর ঘটনার ছায়া তদন্তে নেমে হোটেলের সিসি ক্যামেরার ভিডিও, মোবাইল ফোনের কললিস্ট ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে র‌্যাব-২ ও র‌্যাব-৭-এর সদস্যরা যৌথ অভিযানে চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকার একটি মেস থেকে রেজাউলকে গ্রেপ্তার করে। চট্টগ্রাম থেকে রেজাউলকে গ্রেপ্তারের সময় হত্যাকাণ্ডের সময় তাঁর পরনে থাকা রক্তমাখা গেঞ্জি, মোবাইল ও ব্যবহৃত ব্যাগ এবং জান্নাতের মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঘটনার পর রেজাউল পালিয়ে পার পাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। এ নিয়ে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকজনের পাশাপাশি চট্টগ্রামের এক আইনজীবীর সঙ্গেও কথা বলেন। গ্রেপ্তার রেজাউল কক্সবাজারের নবী হোসাইনের ছেলে। র‌্যাবের তথ্য অনুযায়ী, জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ ও এমবিএ করেছেন তিনি। এমবিএ চলাকালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। পরে কিছুদিন একটি বেসরকারি ব্যাংকেও চাকরি করেন। সব শেষ গত জুন মাসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন।

Development by: webnewsdesign.com