সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনার উপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যখন উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ করি সে উন্নয়ন কাজগুলো একটি আরেকটির পরিপূরক হওয়া উচিত।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে শেখ হাসিনা তার কার্যালয়ে (পিএমও) ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রকল্পের সোনারগাঁ-বুয়েট লিংক এর হাতিরঝিল অংশের পুনঃএলাইনমেন্ট-এর পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা অবলোকনকালে একথা বলেন।
উপস্থাপনাটি অবলোকনের পর প্রধানমন্ত্রী নতুনভাবে নকশা করা ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নকশায় তার সম্মতি প্রদান করেন, যা পলাশিকে কাঁটাবন হয়ে বিয়াম (বিআইএএম) ভবনের দক্ষিণ অংশে হাতির ঝিল লেকের প্রান্তের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ঠিক আছে। আপনি এটা বাস্তবায়ন করতে পারেন (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সোনারগাঁ-বুয়েট লিংক এর হাতিরঝিল অংশের পুনঃএলাইনমেন্ট)।’
পূর্ববর্তী প্রস্তাবে, হাতির ঝিল লেক এবং পান্থকুঞ্জের মাঝামাঝি বরাবর এই লিংকের অ্যালাইনমেন্টের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী লেক (হাতির ঝিল) এবং পান্থকুঞ্জকে সুরক্ষা করে নতুনভাবে নকশা প্রণয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে নির্দেশ দেন।
এই সংযোগের ফলে পুরাতন ঢাকা ও ধানমন্ডির বাসিন্দারা উপকৃত হবেন এবং এটি দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ শতাংশ যানবাহন প্রবেশ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, একদা মতিঝিলে একটি বড় ঝিল (জলাশয়) ছিল, তবে পাকিস্তানি শাসক আইয়ুব খান তা ধ্বংস করেন। তিনি এ সময় উন্নয়ন পরিকল্পনায় সংশ্লিষ্টদের জলাশয় বিশেষ করে পুকুর রক্ষা করে পরিকল্পনা প্রণয়নেরও নির্দেশ দেন।
ঢাকা শহর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তবে আমরা নগরীর সমস্ত সুযোগ-সুবিধা গ্রামে দিচ্ছি। কাজেই গ্রামের মানুষের রাজধানী মুখী প্রবণতা কমে আসছে। সরকারি কর্মকর্তাদের শহরে বসবাসের মানসিকতার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা এখন শহরে থাকতে চান। তাদের বদলি করা হলে তাদের পরিবারকে শহরে রেখে নিজেরাই কেবল কর্মস্থলে যান।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতীতে জেলার স্কুল, কলেজ এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উন্নতি হয়েছে কেননা মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং সরকারি কর্মকর্তারা জেলায় থাকতেন।
জনগণের ট্রাফিক আইন মেনে না চলার মানসিকতার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী সকলকে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানান। ‘ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস থাকার পরেও জনগণ রাস্তা দিয়ে পারাপার হচ্ছে,পথচারী এবং চালক কেউই জেব্রা ক্রসিং মানছেন না,’ বলেন তিনি।
৪৬ দশমিক ৭৩ কি.মি. দৈর্ঘ্যের ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি পিপিপি প্রকল্পের আওতায় ৮ হাজার ৯৪০ দশমিক ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে। প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ ৫৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রকল্পের সার্বিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে ১৮ শতাংশ।
তিনটি ধাপে প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে-হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ি হয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী) পর্যন্ত।
যোগাযোগবিদ এবং বুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক মো.শামসুল হক অনুষ্ঠানে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের সোনারগাঁ-বুয়েট লিংক এর হাতিরঝিল অংশের পুনঃএলাইনমেন্ট প্রকল্পের প্রেজেন্টেশন প্রদান করেন। প্রকল্প বিশেষজ্ঞ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং প্রকল্পের স্থপতি সদস্য ইকবাল হাবিব এ সময় প্রকল্প সম্পর্কে তাদের অভিমত দেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, পিএমওর এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, পিএমও সচিব মো. তোফজ্জল হোসেন মিয়া, প্রেসসচিব ইহসানুল করিম এবং সেতু বিভাগের সচিব মো. বেলায়েত হোসেন এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জয়িতা টাওয়ার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য ভবনের সংশোধিত স্থাপত্য নকশা প্রত্যক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী। নকশা প্রত্যক্ষকালে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনাও প্রদান করেন। নকশা উপস্থাপন করেন জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান।
এ সময় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আরা অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : বাসস
Development by: webnewsdesign.com